পশ্চিম বাকলিয়া/ ভোট বেশি পেয়েও পরাজয়ের মালা আওয়ামী লীগের গলায়

নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণ

২১২৮ ভোট বেশি পেয়েও আওয়ামী লীগের পাঁচ নেতাকে হার মানতে হয়েছে বিএনপি সমর্থিত সাবেক কাউন্সিলর একেএম জাফরুল ইসলামের ছেলে একেএম আরিফুল ইসলাম ডিউকের কাছে। আওয়ামী লীগ সমর্থক পাঁচ প্রার্থীর মোট প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা যেখানে ৫৭১৬ ভোট সেখানে বিজয়ী বিএনপি সমর্থিত ডিউক পেয়েছেন মাত্র ৩৫৮৮ ভোট।

আওয়ামী লীগের এতো প্রার্থীর ভিড়ে বিএনপির একক প্রার্থী থাকার সুবিধাটা নিয়েই পিতার শূন্য চেয়ারে বসতে যাচ্ছেন আরিফুল ইসলাম ডিউক। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১৭ নম্বর পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ডে বৃহস্পতিবারের (২৫ জুলাই) নির্বাচনে অবস্থা এমনই।

বিষয়টি স্বীকার করেছেন নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও। তারাও বলছেন, উদ্যোগ নিয়েও আওয়ামী লীগের সব প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অনঢ় থাকার কারণে আজকে ভোট বেশি পেয়েও পরাজিত হয়েছে। তবে সামনের চসিক নির্বাচনের জন্য এটিও একটা বার্তা বলে মানছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) সকাল আটটা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত নগরীর ১৭ নং পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ডে ভোটগ্রহণ শেষ হয়। ১৭টি ভোট কেন্দ্রের ২২৪টি কক্ষে ভোট ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) উপ-নির্বাচন হয়। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১৭ নম্বর পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা রয়েছে ৪৯ হাজার ৮২৫ জন। এর মধ্যে ২৩ হাজার ৭৪৮ জন পুরুষ এবং ২৬ হাজার ৭৭ জন রয়েছে মহিলা ভোটার। এ ওয়ার্ডে মোট ১৭টি ভোট কেন্দ্রে ভোট কক্ষ আছে ২২৪টি।

বৃহস্পতিবার রাতে ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায়, নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন মোট ৯ হাজার ৩০৪ জন। যা মোট ভোটের শতকরা ১৮ ভাগ। তবে ইভিএমে ভোট হওয়ায় কোনও ভোট বাতিল হয়নি। বিএনপির সমর্থনে মিষ্টি কুমড়া নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী একেএম আরিফুল ইসলাম ডিউক পেয়েছেন ৩ হাজার ৫৮৮ ভোট।

তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ নেতা মাসুদ করিম টিটু রেডিও প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২ হাজার ১৭৯ ভোট। এর পরের অবস্থানে আছেন ঘুড়ি প্রতীক নিয়ে লড়া চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক শহিদুল আলম; তার প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা ১ হাজার ৫৫৩ ভোট। লাটিম প্রতীকের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ শফি পেয়েছেন ১ হাজার ২৫১ ভোট, ঠেলাগাড়ি প্রতীকের যুবলীগ নেতা শেখ নাঈম উদ্দিন পেয়েছেন ৫৭৯ ভোট এবং টিফিন ক্যারিয়ার প্রতীকের যুবলীগ নেতা শাহেদুল আলম শাহেদ পেয়েছেন ১৫৪ ভোট।

এদের মধ্যে রেডিও প্রতীক নিয়ে লড়েছেন মাসুদ করিম টিটু। তিনি চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ও পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক। তিনি নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

ঘুড়ি প্রতীক নিয়ে লড়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক শহিদুল আলম। তিনি এর আগেও ওই ওয়ার্ড থেকে তিনবার কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরীর অনুসারী হিসাবে পরিচিত শহিদুল আলম।

এছাড়া ভোটের মাঠে ছিলেন লাটিম প্রতীকে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ শফি। তিনিও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ ও মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। আর অন্য দুই প্রার্থী টিফিন ক্যারিয়ার প্রতীকের নগর যুবলীগের সাবেক সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক শাহেদুল ইসলাম শাহেদ একসময় সাবেক মন্ত্রী ডা. আফসারুল আমীনের সঙ্গে থাকলেও পরে সিডিএর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের অনুসারী হিসেবে রাজনীতি করছেন। ঠেলাগাড়ি প্রতীকের ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা শেখ নাঈম উদ্দীন সরাসরি কোনও নেতার অনুসারী না হলেও তিনিও সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, উদ্যোগ নিয়েও একক প্রার্থীকে ভোট যুদ্ধে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে নগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। গত ১১ জুলাই মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন হওয়ায় আগের দিন ১০ জুলাই আওয়ামী লীগ থেকে একক প্রার্থী নির্ধারণে জরুরি এক সভায় বসেছিলেন নগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। তবে নগর আওয়ামী লীগ নেতাদের মতভেদে একক প্রার্থী নির্ধারণের বিষয়টি ভেস্তে যায়।

মূলত আ জ ম নাছিরের সমর্থন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মাসুদ করিম টিটু এবং মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সমর্থন নিয়ে ভোট যুদ্ধে থাকা সাবেক কাউন্সিলর শহিদুল আলমকে কেন্দ্র করে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা। এই দুই প্রার্থীর মধ্যে সমঝোতা করতে না পারায় আওয়ামী ঘরানার বাকি প্রার্থীদেরও নির্বাচন থেকে সরিয়ে আনতে পারেনি দলটি। ফলে অন্য তিন প্রার্থী শফি, শাহেদ ও নাঈমকেও সরানো যায়নি।

আওয়ামী লীগ সমর্থিত পাঁচজন ২১১৮ ভোট বেশি পেয়ে বিএনপির প্রার্থী জয়ী হওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন রাতে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এই বাস্তবতটা অস্বীকার করার উপায় নেই। বিএনপির একক প্রার্থীর বিপরীতে আমাদের পাঁচজন প্রার্থী। অথচ ডিউকের চেয়েও আওয়ামী লীগের পাঁচজন ২১২৮ ভোট বেশি পেয়েছেন। কিন্তু একক বা দুই জন হলেও আমরা জিততে পারতাম।’

তিনি আরো বলেন, ‘সব প্রার্থীকে ডেকে একক প্রার্থীর বিষয়ে আমরা নগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু প্রার্থীদের বিজয়ী হবার মনোভাব ও অনঢ় অবস্থানের কারণে সেই উদ্যোগ ভেস্তে যায়। এছাড়া এটা যেহেতু দলীয় প্রতীকের নির্বাচন নয়, আমরাও দলীয় সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারি না। তাছাড়া কেন্দ্র থেকেও কোনও সিদ্ধান্ত আসেনি একক প্রার্থী নির্ধারণের জন্য। তবে ভবিষ্যতে বিষয়টি আমরা ভেবে দেখব।’

অন্যদিকে নগর আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিষয়টি স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলেও স্থানীয় রাজনীতিতে গুরুত্ব বহন করে। আমরা উদ্যোগ নিয়েও তাদের অসহযোগিতার কারণে একক প্রার্থী নির্ধারণ করতে পারিনি। আশা করি সিনিয়র নেতৃবৃন্দ আগামী নির্বাচনে প্রার্থীর বিষয়টি সিরিয়াসলি দেখবেন।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!