পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে ৬ জেএমবি সদস্য গ্রেফতার

আন্তর্জাতিক সংবাদ :

 

ভারতে নিষিদ্ধঘোষিত জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) ছয় জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে সে দেশের পুলিশ। এদের মধ্যে তিনজন বাংলাদেশি ও তিনজন ভারতীয়।

আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের একাধিক স্থান থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে সোমবার জানিয়েছে কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)।

এসটিএফ প্রধান বিশাল গর্গ জানিয়েছেন, ছয় জনের মধ্যে পাঁচজনের নাম ইতিমধ্যে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার (এএনআই) দেওয়া খাগড়াগড় মামলার চার্জশিটে ছিল।

a9b1eafd2f38e45884cae5f31c1c5b91-bangladesh03122015n-15

লালবাজারে সাংবাদিক সম্মেলনে গ্রেফতারকৃতদের সোমবার হাজির করে এসটিএফ। জেএমবির এই সদস্যরা ভারতে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করছিল বলে জানিয়েছে এসটিএফ।

 

এসটিএফ প্রধান বিশাল গর্গ সোমবার কলকাতার লালবাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, গ্রেফতার ছয়জন ২০১৪ সালে বর্ধমান জেলার খাগড়াগড়ে বোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। ওই ঘটনার পর উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ ভারতে তারা পালিয়ে গিয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের একাধিক জায়গা থেকে ওই ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে তিনজন বাংলাদেশের নাগরিক। বাকিরা ভারতের। তারা হলো আনোয়ার হোসেন ফারুক ওরফে ইনাম ওরফে কালুভাই, জাহিদুল শেখ ওরফে জাফর ওরফে জাবিরুল, মোহাম্মদ রফিক ওরফে রুবেল ওরফে পিছি, মাওলানা ইউসুফ ওরফে বক্কর ওরফে আবু খেতাব, শাহিদুল ওরফে সূর্য ওরফে শামিম ও আবদুল কালাম ওরফে কলিম। গ্রেপ্তার ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনের নাম খাগড়াগড় মামলার চার্জশিটে রেখেছিল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা। ওই ছয়জনকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কারও ঘোষণা করেছিল সংস্থা।

 

সংবাদ সম্মেলনে এসটিএফ প্রধান আরও জানান, দুই দিন আগে আসামের কাছাড় থেকে একটা জাল নোটের মামলায় কলকাতা এসটিএফ জাবিরুলকে গ্রেপ্তার করে। তাকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে জাবিরুল জেএমবির সদস্য বলে স্বীকার করে। তার দেওয়া তথ্যের সূত্র ধরে গতকাল রোববার নিউ কোচবিহার স্টেশন থেকে কালামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি জানান, জেএমবির গ্রেপ্তার ছয় সদস্য সাংকেতিক ভাষায় নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখত। সেই ভাষার অর্থ খুঁজে বের করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ তাদের আদালতে হাজির করা হবে।
কলকাতা পুলিশ দাবি করেছে, জেএমবি সদস্য কালাম বাংলাদেশ থেকে আসাম হয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢোকার চেষ্টা করছিল। বাংলাদেশ থেকে তাকে কাছাড়ে সংগঠনের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য পাঠানো হয়েছিল।

 

এরপর উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ-বাগদা রোডের ওপর বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী একটি জায়গা থেকে ইনাম ও রফিককে গ্রেপ্তার করা হয়। ইনাম পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জেএমবি ইউনিটের প্রধান। তার বাড়ি বাংলাদেশের জামালপুরে। গ্রেপ্তার রফিকের বাড়িও ওই একই জায়গায়। তিনি ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) তৈরিতে পারদর্শী। বাংলাদেশ থেকে এ দেশে আসা জেএমবি সদস্যদের ভারতে থাকার ব্যবস্থা করে দিত রফিক।
এসটিএফ প্রধান বিশাল গর্গ বলেন, উত্তর ২৪ পরগনা জেলারই বসিরহাটের নতুন বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ইউসুফ ও শাহিদুলকে। ইউসুফের বাড়ি বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোটে। তার সন্ধান দিতে পারলে ১০ লাখ টাকা পুরস্কারের কথা ঘোষণা করেছিল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা। এসটিএফ দাবি করেছে, শাহিদুল উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রধান হিসেবে কাজ করত। ভারতে বিভিন্ন নাশকতামূলক ছকের মূল পরিকল্পনাকারী তিনি। তার বাড়ি আসামের বরপেটায়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গ্রেপ্তার ছয়জনের কাছ থেকে প্রচুর বিস্ফোরক পাওয়া গেছে। সঙ্গে নাশকতার সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন কাগজপত্র, বেশ কয়েকটি মোবাইল ফোন, প্রায় দুই কেজি সাদা বিস্ফোরক পাউডার, বিয়ারিং-বল, তার কাটা যায় এমন জিনিস ও ব্যাটারি। রফিকের কাছে কেমিক্যাল কমপাউন্ডের একটি বই পাওয়া গেছে। ইউসুফ ও ইনামের কাছে পাওয়া গেছে বিস্ফোরক। ইনামের কাছে একটা সাংগঠনিক ছকও পাওয়া গেছে। রফিকের কাছে বাংলাদেশি ট্রেড লাইসেন্সও মিলেছে। জিজ্ঞাসাবাদে ছয়জন স্বীকার করেছে যে একটি বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করছিল তারা। তবে কলকাতা নয়, দক্ষিণ বা উত্তর-পূর্ব ভারতের কোনো জায়গায় বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা ছিল তাদের।

 

এ এস / জি এম এম / আর এস পি :::

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!