পলোগ্রাউন্ডের ‘উইমেন এক্সপো’ লোকসানে ডোবাল ব্যবসায়ীদের

চট্টগ্রামের রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ড মাঠে দীর্ঘ ৫১ দিন ধরে চলা ‘১৩তম আন্তর্জাতিক উইমেন এসএমই এক্সপো’ শেষে লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে বাড়ি ফিরছেন বিভিন্ন পণ্য নিয়ে মেলায় আসা ব্যবসায়ীরা। মেলা জমে না ওঠা ছাড়াও বিভিন্ন সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে কমিটি সিন্ডিকেটের ‘অতি মুনাফার চেতনাকেই’ লোকসানের কারণ হিসেবে দুষছেন ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা বলেছেন, এমনিতেই জমেনি এবারের মেলা। সেই সঙ্গে ‘মেলা কমিটির ম্যান্ডেড’ লোকজন তাদের কাছ থেকেই পানি-খাবার-বিদ্যুৎ বিলসহ উচ্চমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় সেবা গ্রহণে বাধ্য করেছে ৫১ দিনব্যাপী। ফলে লাভের অঙ্কে ভাটা পড়েছে।

আবদুল্লাহ ফারুখ নামের এক ব্যবসায়ী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মেলা শুরুর প্রথম দিন থেকেই মেলায় আছি। কিন্তু এরপর থেকে আর আসবো না— এমন শপথ করেছি। এমনিতে মেলায় কেনাবেচা হয়নি। তার ওপর পানি-বিদুৎ সবকিছুতেই উচ্চমূল্য।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাইরে থেকে পানি সংগ্রহের সুযোগ নেই ব্যবসায়ীদের। ‘আলিফ ড্রিংকিং ওয়াটার’ নামের একটি বেভারেজ কোম্পানি ২০ লিটার পানির জারপ্রতি ৮০ টাকা করে আদায় করছে মেলায় বিভিন্ন পণ্য নিয়ে আসা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাইরে জারপ্রতি পানি বিক্রি হয় ৩০-৩৫ টাকায়। প্রতিটি দোকানে দৈনিক ৩-৪টি পানির জার প্রয়োজন হয় তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই কিনছেন এই পানি।

এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় স্লিপে দেওয়া নাম্বারে একাধিকবার চেষ্টা করেও প্রতিষ্ঠানটির বক্তব্য জানা যায়নি।

আয়োজক কমিটির দেওয়া তথ্য অনুসারে, দক্ষিণ এশিয়ায় মহিলা উদ্যোক্তাদের সর্ববৃহৎ বাণিজ্যিক সম্মেলন এই এসএমই এক্সপোতে ছোট-বড় মিলিয়ে স্টল রয়েছে প্রায় ৩৫০টি। ব্যাবসায়ীরা বলছেন, ৫১ দিনব্যাপী এই স্টলগুলোর প্রায় ৩ হাজার কর্মচারী-মালিক উচ্চমূল্যে গ্রহণ করেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় সেবা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মেলায় আগত ব্যবসায়ীদের পানি-বিদুৎ-খাবারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার নামে আয়োজক কমিটির একটি দুষ্টচক্র নিয়ন্ত্রণ করছেন নিত্যপ্রয়োজনীয় সেবার দরদাম। এখানে তাদের বাইরে অন্য কারোও কাছ থেকে কিছু কেনাও সম্ভব না।

ব্যবসায়ীরা বলছেন কারসাজি শুধু পানি নিয়েই নয় এবারের মেলাতে এসে তারা দেখেছেন ভুতুড়ে বিলও! এ ব্যাপারে রঙ-বেরঙের কর্নধার আব্দুল আলীম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মেলার প্রথম দিন থেকেই মেলায় আছি। বেচাকেনা কিছুই নেই। অন্যদিকে কমিটির লোকেরা হিসাব নিকাশের ভুতুড়ে বিল হাতে ধরিয়ে দিয়ে গেছেন। বিদুৎ বিলের হিসাব দেখে খুব অবাক হলাম। কমিটির দাবি প্রায় ১৫ হাজার টাকার বিদ্যুৎ ‌ব্যবহার করেছি। কিন্তু কিভাবে ব্যবহার করলাম তার প্রমাণ তারা (আয়োজক কমিটি) দিল না। কোনো বিষয় নিয়ে অভিযোগ করার সুযোগ নেই। কোন অভিযোগ করলেই আয়োজক কমিটি একবাক্যে শুনিয়েছে ‘যা আছে তাই!’

‘আখেরি অফারেও’ মেলেনি ক্রেতা
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) সরেজমিনে মেলা ঘুরে দেখা যায়, শেষ মূহূর্তে নিজেদের অবিক্রিত পণ্য বিক্রিতে হন্যে হয়ে উঠেছেন মেলায় আসা বিক্রেতারা। কম দরে এসব পণ্য বিক্রি করে তুলে আনার চেষ্টা করছেন খরচ হয়ে যাওয়া টাকা। স্টলের বাইরেই বিক্রেতাদের হাঁক-ডাকে আন্তর্জাতিক মেলা নিমিষেই পরিণত হয় ফুটপাতের ‘ভ্রাম্যমাণ হকারে’। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে পণ্য বিক্রিতে দিচ্ছেন বিভিন্ন শ্লোগান। কোন পণ্যের মূল্য ধরে দিচ্ছেন বাজারদরের অর্ধেক আবার কোনটি তারও কম। তবে এত কিছুর পরও মিলছে না ক্রেতা।

এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে চিটাগাং উইম্যান চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট মনোয়ারা হাকিম আলী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘পানির অস্বাভাবিক মূল্য সম্পর্কে আমাদের আগে কেউ জানায়নি। আমি আপনাদের কাছ থেকেই বিষয়টি অবগত হলাম। যাচাই করে দেখব।’

ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন- ‘এবারের মেলাতে অভিযোগ এবং পরামর্শ বাক্স রাখা হয়েছে। সেখানে কোন অভিযোগ এসেছে কিনা জানা নেই। তবে এসব বিষয় খতিয়ে দেখব।’

এএ/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!