পর্যটনে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে বৃহত্তর চট্টগ্রামের ৬ স্পট

দেশে নতুন পর্যটন কেন্দ্র খুঁজে বের করার উদ্যোগ নিচ্ছে পর্যটন মন্ত্রণালয়। কিন্তু সারা বাংলাদেশে এখনও পর্যটন মানেই বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্পট। পর্যটকদের কাছে এগুলোই মূলত পছন্দের জায়গা। দেশ-বিদেশের বহু পর্যটক ঘুরে বেড়ানোর জন্য প্রতিবছর এসব স্পটে ভিড় জমিয়ে থাকেন। মনোমুগ্ধকর সমুদ্র সৈকত, পাহাড়ে-আহারে, সবুজের মাঝে জ্যোৎস্নার খেলা, এমনকি মেঘের রাজ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলার মতো চোখ জুড়ানো পর্যটন স্থান রয়েছে বৃহ্ত্তর চট্টগ্রামজুড়ে।

আজ ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবসে বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে নানা কর্মসূচি। করোনা মহামারির বিপর্যয় কাটিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে পর্যটনশিল্প। চলুন জেনে নেওয়া যাক বৃহ্ত্তর চট্টগ্রামে থাকা দেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রগুলো সম্পর্কে।

পর্যটনে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে বৃহত্তর চট্টগ্রামের ৬ স্পট 1

কক্সবাজারই দেশের পর্যটন রাজধানী

সারি সারি ঝাউবন, বালুর নরম বিছানা, সামনে বিশাল সমুদ্র। নীল জলরাশি আর শোঁ শোঁ গর্জনের মনোমুগ্ধকর সমুদ্র সৈকতের নাম কক্সবাজার। এটি পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। প্রায় ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্য। কক্সবাজারকে তাই বলা হয় বাংলাদেশের পর্যটন রাজধানী। মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া, মাতার বাড়ি, শাহপরী, সেন্টমার্টিন, কক্সবাজারকে করেছে আরো আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন। এ জেলার উপর দিয়ে বয়ে গেছে মাতা মুহুরী, বাঁকখালী, রেজু, কুহেলিয়া ও নাফ নদী।

পর্যটন, বনজসম্পদ, মৎস্য, শুটকিমাছ, শামুক, ঝিনুক ও সিলিকাসমৃদ্ধ বালুর জন্য কক্সবাজারের অবস্থান তাই ভ্রমণবিলাসী পর্যটকদের কাছে সবার ওপরে।

কক্সবাজারের ১২ থেকে ২২ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে রয়েছে দুটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান। একটি হলো হিমছড়ি এবং অন্যটি হলো ইনানী। কক্সবাজার সমুদ্র থেকে মাত্র ২২ কিলোমিটার দূরে রয়েছে অন্যতম আকর্ষণীয় সমুদ্র সৈকত ইনানী সমুদ্র সৈকত। আর এই সমুদ্র সৈকতে যাওয়ার পথে মাত্র ১২ কিলোমিটার গেলেই পাওয়া যাবে আরেক দর্শনীয় পর্যটন স্থান হিমছড়ি।

পর্যটনে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে বৃহত্তর চট্টগ্রামের ৬ স্পট 2

সেন্টমার্টিনে মায়াময় স্নিগ্ধতা

সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। যার চারপাশে সাগর আর আকাশের নীল মিলেমিশে একাকার। ‘দক্ষিণের স্বর্গ’ নামে পরিচিত এই দ্বীপে সারি সারি নারিকেল গাছ, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে চলা গাঙচিল। সৈকতে বসে স্নিগ্ধ বাতাসে গা জুড়িয়ে নেওয়া, কেয়া বন আর সাগরলতার মায়াময় স্নিগ্ধতায় মন জুড়িয়ে যায় নিমিষেই। দেশের ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে পরম আরাধ্য একটি পর্যটন গন্তব্য হচ্ছে সেন্টমার্টিন দ্বীপ। সেন্টমার্টিনের প্রতিবেশ ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু হলো প্রবাল। সাগরের ছোট-বড়, মেরুদণ্ডী-অমেরুদণ্ডী অধিকাংশ প্রাণী ও উদ্ভিদকে আগলে রাখে এসব প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ।

বাংলাদেশের মানচিত্রের সর্বদক্ষিণের শেষ স্থান সেন্টমার্টিন দ্বীপ। নয়নাভিরাম সৌন্দর্য অবলোকনের ও ভ্রমণের একটি আকর্ষণীয় পর্যটন এলাকা। কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা থেকে ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে গড়ে ওঠা ছোট দ্বীপ এটি। মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিম উপকূল থেকে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মুখে এর অবস্থান। স্থানীয়রা এটিকে ‘নারিকেল জিনজিরা’ নামে চেনেন। সেন্টমার্টিন দ্বীপের আয়তন প্রায় ৮ বর্গ কিলোমিটার ও উত্তর-দক্ষিণে লম্বা। এ দ্বীপের তিন দিকের ভিত শিলা যা জোয়ারের সময় তলিয়ে যায় এবং ভাটার সময় জেগে ওঠে। এগুলোকে ধরলে এর আয়তন হবে প্রায় ১০-১৫ বর্গ কিলোমিটার। এ দ্বীপটি উত্তর ও দক্ষিণে প্রায় ৫ দশমিক ৬৩ কিলোমিটার লম্বা। দ্বীপের প্রস্থ কোথাও ৭০০ মিটার আবার কোথাও ২০০ মিটার।

দ্বীপটির পূর্ব, দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে সাগরের অনেক দূর পর্যন্ত অগণিত শিলাস্তূপ আছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপ সমতল ও সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় উচ্চতা থেকে ৩ দশমিক ৬ মিটার ওপরে। মূল ভূখণ্ড ও দ্বীপের মধ্যবর্তী ৯ দশমিক ৬৬ কিলোমিটার প্রশস্ত প্রণালী দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমের উন্মুক্ত সাগরের তুলনায় অনেক অগভীর। এখানে পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিম দিক জুড়ে রয়েছে ১০-১৫ কিলোমিটার প্রবাল প্রাচীর। মূল দ্বীপ ছাড়াও এখানে ১০০ থেকে ৫০০ বর্গমিটার আয়তন বিশিষ্ট কয়েকটি ক্ষুদ্র দ্বীপ রয়েছে, যেগুলোকে স্থানীয়ভাবে ছেড়াদিয়া বা সিরাদিয়া (ছেঁড়া দ্বীপ) নামে অভিহিত করা হয়। যার অর্থ বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। ছেঁড়া দ্বীপ হলো বাংলাদেশের মানচিত্রে দক্ষিণের সর্বশেষ বিন্দু। দক্ষিণ দিকে এর পরে বাংলাদেশের আর কোনো ভূখণ্ড নেই।

মূল দ্বীপের সঙ্গে ছেঁড়া দ্বীপের সংযোগস্থল (স্থানীয়ভাবে গলাচিপা নামে পরিচিত) সামান্য নিচু হওয়ায় জোয়ারের সময় এটি তলিয়ে যায়। তাই ভাটার সময় হেঁটে ছেঁড়া দ্বীপে যাওয়া গেলেও জোয়ারের সময় নৌকা নিয়ে যেতে হয়। সবচেয়ে ভালো হয় উত্তর প্রান্ত থেকে পশ্চিম বিচ ধরে সম্পূর্ণ পথ পায়ে হেঁটে গেলে। নির্জন এই পথটা অসম্ভব সুন্দর।

সেন্টমার্টিন প্রবাল দ্বীপে প্রায় ৬৬ প্রজাতির প্রবাল, ১৮৭ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ১৫৩ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল, ১৫৭ প্রজাতির গুপ্তজীবী উদ্ভিদ, ২৪০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, ৪ প্রজাতির উভচর ও ১২০ প্রজাতির পাখি পাওয়া যায়। এছাড়াও রয়েছে ১৯ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী। অন্যদিকে অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে রয়েছে স্পঞ্জ, শিল কাঁকড়া, সন্ন্যাসী শিল কাঁকড়া, লবস্টার ইত্যাদি। মাছের মধ্যে রয়েছে- পরী মাছ, প্রজাপতি মাছ, বোল করাল, রাঙ্গা কই, রূপচাঁদা, সুঁই মাছ, লাল মাছ, উড়ুক্কু মাছ ইত্যাদি। সামুদ্রিক কচ্ছপ সবুজ সাগর কাছিম এবং জলপাইরঙা সাগর কাছিম প্রজাতির ডিম পাড়ার স্থান হিসেবে জায়গাটি খ্যাত।

পর্যটনে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে বৃহত্তর চট্টগ্রামের ৬ স্পট 3

দেশের নতুন আকর্ষণ সাজেক

সারাদেশের মানুষের এখন মূল আকর্ষণ সাজেক। খাগড়াছড়ি দিয়ে যেতে হলেও পর্যটনকেন্দ্র সাজেক রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত। আয়তনের দিক থেকে যেটি দেশের বৃহত্তম ইউনিয়ন। রাঙ্গামাটির উত্তরে ভারতের মিজোরাম সীমান্তে অবস্থিত সাজেক মূলত তিনটি পাড়া নিয়ে গঠিত— রুইলুই পাড়া, হামারি পাড়া, কংলাকপাড়া। পর্যটকরা মূলত রুইলুই এবং কংলাক পাড়ায় গিয়ে থাকেন। সমুদ্রপৃষ্ট থেকে যার উচ্চতা প্রায় সাড়ে ১৭০০ ফুট। রাঙ্গামাটি জেলায় অন্তর্ভুক্ত হলেও সাজেকে যেতে হয় খাগড়াছড়ি হয়ে। জেলা শহর থেকে পিচ ঢালা আঁকা বাঁকা পথ দিয়ে যেতে যেতে চোখে পড়বে ছোট বড় হাজারো পাহাড়ে বেষ্টিত প্রকৃতির নিজস্ব সৌন্দর্যের।

এখানে মূলত মেঘ-পাহাড়ের দারুণ মিতালী মুগ্ধ করে পর্যটকদের। যতদূর চোখ যায় শুধু পাহাড়ের ওপর শুভ্র মেঘের আনাগোনা। সাজেকে সূর্যোদয় কিংবা সূর্যাস্তের রূপ দুটোই মুগ্ধ করে পর্যটকদের। রুইলুই পাড়া থেকে কিছুটা দূরে কংলাক পাহাড়ের অবস্থান। এটি সাজেকের সর্বোচ্চ চূড়া। এই যাত্রায় ভারতের মিজোরাম আরও পরিষ্কার দেখা যায়।

সাজেকে ছোট বড় মিলে প্রায় ১০০টির মতো কটেজ-রিসোর্ট রয়েছে। যার ধারণ ক্ষমতা দুই থেকে আড়াই হাজার পর্যটকের।

পর্যটনে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে বৃহত্তর চট্টগ্রামের ৬ স্পট 4

চোখজুড়ানো বান্দরবান

চোখজুড়ানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর রোমাঞ্চকর অনেক জায়গার কারণে বান্দরবান বাংলাদেশের পর্যটন মানচিত্রে উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের তিনটি উচ্চতম স্থান বান্দরবানে অবস্থিত। সেগুলো হচ্ছে তাজিনডং (বিজয়), মৌদক মৌল (সাকা হাফং) ও কেওক্রাডং।

বান্দরবানের অন্যতম আকর্ষণ শৈল প্রপাত মিলনছড়ি এলাকায় অবস্থিত এবং বান্দরবান থেকে থানচিগামী সড়কের চার কিলোমিটারের মধ্যেই। বাংলাদেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জলপ্রপাতগুলোর মধ্যে নাফাখুম অন্যতম। থানচি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা রেমাক্রিতে পাহাড় ও বনের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত খরস্রোতা সাঙ্গু নদীতে অবস্থান নাফাখুমের। নাফাখুম আবার রেমাক্রি জলপ্রপাত নামেও পরিচিত। এখানে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বাহনও বান্দরবান জেলা শহরেই পাওয়া যাবে। বাংলাদেশের প্রশস্ততম জলপ্রপাতগুলোর একটি হলো বান্দরবানের জাদিপাই। এটি রুমা উপজেলায় অবস্থিত। কেওক্রাডং চূড়া থেকে হেঁটে জাদিপাই জলপ্রপাতে পৌঁছতে হলে ঘণ্টাখানেকের পথ অতিক্রম করতে হবে।

অন্যদিকে বগা লেক বাংলাদেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্রাকৃতিক হ্রদ। রুমা উপজেলা সদর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে বগা লেকের অবস্থান। প্রায় ১৫ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এই লেক। বুদ্ধ ধাতু জাতি মন্দিরের আরেক নাম বান্দরবান স্বর্ণমন্দির। বান্দরবান থেকে ১০ কিলোমিটার এবং বালাঘাটা থেকে চার কিলোমিটার দূরে পালপাড়ায় এ মন্দির অবস্থিত। এখানে রয়েছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বুদ্ধমূর্তি। মাটি থেকে ২০০ ফুট উঁচু এই মন্দিরের নির্মাণ কাজ ১৯৯৫ সালে শুরু হয়ে ২০০০ সালে শেষ হয়। বান্দরবান শহর থেকে রিকশা কিংবা অটোরিকশায় চড়ে বুদ্ধ ধাতু জাতি মন্দিরে যাওয়া যায়।

পর্যটনে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে বৃহত্তর চট্টগ্রামের ৬ স্পট 5

চিম্বুক হলো বাংলাদেশের তৃতীয় উচ্চতম পর্বত। বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে চিম্বুক পাহাড়ের উচ্চতা প্রায় ২৫০০ ফুট। এই এলাকার রাস্তাঘাট আঁকাবাঁকা ও সর্পিল। জিপে চড়ে এসব রাস্তা পার হওয়া এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি। বান্দরবানের আরেক আকর্ষণ মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স। বান্দরবান পার্বত্য জেলা কাউন্সিলের খুব কাছেই এটি অবস্থিত। বান্দরবান শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে কেরাণীহাট সড়কে অবস্থিত মেঘলায় রয়েছে একটি মিনি সাফারি পার্ক, একটি চিড়িয়াখানা, ঝুলন্ত ব্রিজ, পাহাড়ের নিচে একটি কৃত্রিম লেক এবং নৌকা ভ্রমণের সুবিধা।

মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্সের কাছেই নীলাচল। যা টাইগার হিল নামেও পরিচিত। বান্দরবান শহরের সবচেয়ে নিকটবর্তী পর্যটন স্পট হলো নীলাচল। এর অবস্থান টিগেরপাড়ায়। যা বান্দরবান শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে নীলাচলের উচ্চতা প্রায় ২০০০ ফুট। এখান থেকে পাখির চোখে দেখতে পারবেন পুরো বান্দরবান শহরকে। অন্যদিকে বাংলাদেশের উচ্চতম ও আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটগুলোর একটি নীলগিরি। প্রায় ৩৫০০ ফুট উঁচু জায়গাটির অবস্থান থানচি থানায়। বান্দরবান-চিম্বুক-থানচি রোডে অবস্থিত নীলগিরি বান্দরবান জেলা শহর থেকে ৪৬ কিলোমিটার দূরে। এর কাছাকাছিই রয়েছে ম্রো আদিবাসীদের গ্রাম। এছাড়াও বান্দরবানের উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানগুলো হলো- শুভ্র নীলা, জীবন নগর পাহাড়, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউট ও জাদুঘর, বাকলাই জলপ্রপাত, রিজুক জলপ্রপাত, চিংড়ি ঝিরি জলপ্রপাত, জিংসিয়াম সাইতার জলপ্রপাত, পাতাং জারি জলপ্রপাত, ফাইপি জলপ্রপাত, প্রান্তিক লেক, মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্স, কেওক্রাডাং পাহাড়, তাজিনডং পাহাড় প্রভৃতি।

পর্যটনে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে বৃহত্তর চট্টগ্রামের ৬ স্পট 6

অসামান্য সৌন্দর্যের খাগড়াছড়ি

পাহাড়, ঝরনা, ঝিরি ও কৃত্রিম লেক সমৃদ্ধ বৈচিত্র্যময় খাগড়াছড়ি হতে পারে ভ্রমণের উপযুক্ত স্থান। খাগড়াছড়ির আলুটিলার রহস্যময় সুড়ঙ্গ, জেলা পরিষদ পার্ক বা ঝুলন্ত ব্রিজ, তারেং, রিছাং ঝরনাসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান পর্যটকদের মুগ্ধ করে।

খাগড়াছড়ি-ঢাকা সড়কের পাশেই অবস্থিত ‘আলুটিলার রহস্যময় সুরঙ্গ’। পাহাড়ের চূড়া থেকে ২৬৬টি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলেই ২৮২ ফুট দৈর্ঘের সেই স্বপ্নিল সুড়ঙ্গমুখ। আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্র ও রহস্যময় গুহা থেকে কিছুটা দূরেই রয়েছে প্রকৃতির আরেক সৃষ্টি ‘রিছাং ঝরনা’।

খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দক্ষিণে খাগড়াছড়ি-মহালছড়ি সড়কের মাইসছড়ি এলাকার নুনছড়ি মৌজায় সমতল ভূমি হতে প্রায় ৭০০ ফুট ওপরে পাহাড়ের চূড়ায় রয়েছে ‘দেবতা পুকুর’। খাগড়াছড়ি জেলা শহরের খুব কাছাকাছি জিরো মাইল সংলগ্ন ২২ একর ভূমির ওপর গড়ে উঠেছে ‘জেলা পরিষদ পার্ক’। এ পার্কের বিশেষ আকর্ষণ রাঙ্গামাটির ঝুলন্ত সেতুর আদলে তৈরি ‘ঝুলন্ত সেতু’।

খাগড়াছড়ির চেঙ্গী নদীর কোলে জেলা আনসার ও ভিডিপি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উঁচু পাহাড়ে অবস্থিত ‘হেরিটেজ পার্ক’। খাগড়াছড়ি-ফেনী আঞ্চলিক মহাসড়কের দুই ধারে ঠাঁই করে নিয়েছে ‘রামগড় চা বাগান’। খাগড়াছড়ির প্রবেশদ্বার রামগড় উপজেলা সদরে ইংরেজি ডব্লিউয়ের অনুরূপ প্রায় ২৫০ মিটার লম্বা নান্দনিক হ্রদ ‘রামগড় লেক’। রামগড় লেকের উভয় পাশে যোগাযোগের জন্য মাঝখানে রয়েছে সুদৃশ্য ঝুলন্ত সেতু। রামগড় লেক ঘেঁষে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে স্মৃতি ভাস্কর্য।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা সদরে বিনোদনমূলক পার্ক ‘জলপাহাড়’ও হতে পারে বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম। খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলা থেকে সোজা উত্তরে ভারতের সীমান্তবর্তী ‘ভগবান টিলা’। জেলা সদর থেকে উত্তর-পশ্চিমে এর কৌণিক দূরত্ব আনুমানিক ৮৫ কিলোমিটার। সবুজের বুকে এ টিলা যেন পর্বত রূপসী। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১ হাজার ৬০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত এ টিলায় রয়েছে বিজিবির সুউচ্চ পর্যবেক্ষণ টাওয়ার।

খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলায় সবুজ পাহাড় আর বুনো জঙ্গলের মাঝে অবস্থিত নয়নাভিরাম ‘তৈদুছড়া ঝরনা’। অসাধারণ সৌন্দর্য আর প্রাকৃতিক বৈচিত্রতা তৈদুছড়াকে এনে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। খাগড়াছড়ির দীঘিনালা সদর থেকে যাওয়া যাবে তৈদুছড়া ঝরনায়। খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে দেওয়ানপাড়া এলাকায় অবস্থিত ‘শিবছড়ি পাহাড়’। পানছড়ি উপজেলায় দেখতে পাবেন দৃষ্টিনন্দন ‘শান্তিপুর অরণ্য কুটির’। পাহাড়ি গাছ-গাছড়ায় ঘেরা পানছড়ি শান্তিপুর অরণ্য কুটিরে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ও বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বুদ্ধ মূর্তি।

গ্রামছাড়া ওই রাঙামাটি

পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলার একটি রাঙামাটি। চট্টগ্রাম থেকে যাত্রা শুরু করলে ৭৭ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়ে পৌঁছে যাবেন রাঙামাটিতে। রাঙামাটির আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটগুলোর মধ্যে রয়েছে কাপ্তাই লেক। কাপ্তাই লেকে কায়াকিং অথবা নৌকা ভ্রমণ আপনাকে দিবে অন্যরকম রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। জলপথে ভ্রমণের মাধ্যমে ঘুরে দেখতে পারবেন কাপ্তাই বাধ, রাঙামাটি শহর, রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু, নৌবাহিনী অ্যাকাডেমি, শুভলং ঝর্ণা, কর্ণফুলী নদী, শেখ ইকোপার্কসহ মনোরম সব পর্যটন কেন্দ্র।

রাঙামাটি শহর থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরত্বে শুভলং বাজারের পাশেই শুভলং ঝর্ণার অবস্থান। শুকনো মৌসুমে পানি কম থাকলেও বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৩০০ ফুট উঁচু শুভলং ঝর্ণা থেকে বিপুল জলধারা আছড়ে পড়ে কাপ্তাই লেকে। শুভলং ঝর্ণার কাছেই রয়েছে সুউচ্চ শুভলং পাহাড়। অন্যদিকে মনকে প্রশান্তি দিতে ঘুরে আসতে পারেন রাঙামাটির অন্যতম প্রাচীন বৌদ্ধবিহার রাজবন বিহার থেকে। রাঙামাটি শহরের প্রাণকেন্দ্রে বিহারটি অবস্থিত হলেও, শহরের যান্ত্রিক কোলাহল এখানে অনুপস্থিত।

রাঙামাটি শহরের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হলো ঝুলন্ত সেতু। শহরের শেষ প্রান্তে কাপ্তাই লেকের একাংশে ৩৩৫ ফুট লম্বা এই ব্রিজটি পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয়। এই সেতুকে ‘সিম্বল অব রাঙামাটি’ বলা হয়ে থাকে। রাঙামাটি শহর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরেই এই ঝুলন্ত সেতুর অবস্থান।

আদিবাসীদের জীবন ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার আগ্রহ পূরণ করবে রাঙামাটি সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট জাদুঘর। ১৯৭৮ সালে স্থাপিত এই জাদুঘরটি রাঙ্গামাটি শহরের প্রবেশ মুখের কাছেই অবস্থিত। সুবিশাল কাপ্তাই লেক আর পাহাড়ের কোল ঘেঁষে রয়েছে অসংখ্য ছোট দ্বীপ। এরই একটি দ্বীপে অবস্থিত পেদা টিং টিং রেস্টুরেন্ট। রসনা বিলাসী ভ্রমণ প্রেমীদের জন্য চমৎকার এক রেস্টুরেন্ট এটি। রাঙামাটি শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান।

রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ বন ও পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক ৫ হাজার ৪৬৪ হেক্টর জায়গা জুড়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে হরিণ, হাতি, বনবিড়াল, মেঘলা চিতা, বানরসহ নানা রকমের প্রাণী বৈচিত্র রয়েছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!