পর্যটনকেন্দ্র সাজেকসহ বাঘাইছড়িতে ম্যালেরিয়া বাড়ছে করোনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে

রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে করোনার পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ম্যালেরিয়া। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বেসরকারি এনজিও ব্র্যাকের হিসাব মতে, উপজেলার সীমান্তবর্তী দুর্গম সাজেক ইউনিয়নে হঠাৎ ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেড়ে গেছে। তার মধ্যে সাজেক ইউনিয়নের দুর্গম ৯নং ওয়ার্ডের ত্রিপুরা পাড়া, বড়ইতলী পাড়া, শিব পাড়া, দেবাছড়া, নরেন্দ্র পাড়া, ১ নং ওয়ার্ডের মন্দির ছড়া, শিয়ালদহ, তুইচুই, বেটলিং, অরুন কার্বারী পাড়াসহ আশপাশের সব এলাকায় ম্যালেরিয়া প্রকোপ বেশি দেখা দিয়েছে।

সাজেকের ৭নং ওয়ার্ডের ত্রিপুরা পাড়ায় একই পরিবারের শুল্ক মহন ত্রিপুরা (৫৫), পুস্প ত্রিপুরা( ২৭), মনিকা ত্রিপুরা নামে তিনজন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে বলে জানান সাজেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নেলসন চাকমা (নয়ন)।

বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইফতেখার আহমেদ জানান, গত বছরের তুলনায় এই বছরে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। গত বছর লকডাউন থাকার ফলে কেউ জুম চাষ না করায় ওইসব এলাকায় জঙ্গলে পূর্ণ হয়ে এসব এলাকায় মশার উপদ্রব বেড়ে গেছে। ফলে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে।

বেসরকারি এনজিও ব্র্যাকের হিসাব মতে, এই বছর জুন মাস পর্যন্ত ১০ হাজার সন্দেহজনক রোগীর রক্ত পরীক্ষা করে ৬৭ জন ম্যালেরিয়া রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে শুধু জুন মাসেই ৪৯ জনের রক্তে ম্যালেরিয়া শনাক্ত হয়। এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক মাসে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ২৯ জনে। হিসাবমতে উপজেলায় মোট ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা বর্তমানে ৭৮ জন।

ডা. ইফতেখার আহমেদ বলেন, ‘দুর্গম সাজেক ইউনিয়নকে আমরা ম্যালেরিয়ার ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি। সেখানে ২০১৯ সালের ২৮ হাজার মানুষের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে ১ হাজার ৩০৬ জনের শরীরে ম্যালেরিয়া শনাক্ত হয়। ২০২০ সালে ২৮ হাজার ৬৬৭ জনের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে তার মধ্যে ২৮৯ জনেরই ম্যালেরিয়া শনাক্ত হয়।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইফতেখার আহমেদ বলেন, ‘সাজেকে আমাদের কয়েকটি কমিউনিটি ক্লিনিক করার পরিকল্পনা আছে। সেগুলো বাস্তবায়ন হলে সাজেকসহ আশপাশের জনগণকে খুব সহজে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যাবে। তবে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় সরকার ইতিমধ্যে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, কক্সবাজারের রামুসহ ম্যালেরিয়াপ্রবণ জেলাগুলোতে ‘মাইক্রো প্ল্যান’ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।’

সাজেকের ইউপি চেয়ারম্যান নেলসন চাকমা নয়ন জানান, ‘সরকারি ও বেসরকারি হিসাবের চেয়ে বাস্তবে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা বেশি। কারণ দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ম্যালেরিয়া রোগীরা রক্ত পরীক্ষা করতে আসে না। জ্বরের লক্ষণ দেখে স্বজনেরা বাজারে এসে ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিয়ে যায়। তারা মশারি ব্যবহার না করায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। তবে পরিষদের সদস্যদের নিযে জরুরি সভা করে জনসচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শসহ নিজে কাজ করে যাচ্ছি।’

নেলসন চাকমা বলেন, ‘গত বছর সাজেকে মহামারি আকারে ডায়রিয়া এবং হাম (পোলিও) দেখা দিয়েছিল। তবে সেনাবাহিনীর সহায়তায় হেলিকপ্টারের সাহায্যে অনেক মুমূর্ষু রোগীকে উন্নত চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। উপজেলায় করোনা রোগী ৩৬ জনের পাশাপাশি ম্যালেরিয়া রোগীর ৭৮ জনে পৌঁছানোয় করোনার পাশাপাশি ম্যালেরিয়ার আতংকেও ভুগছেন সাধারণ মানুষ।’

বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর একটানা বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মশার প্রজনন বেড়েছে। বৃষ্টিপাত না হলে পাহাড়ের বিভিন্ন ঝিরি ও ছড়ায় পানি জমে মশার প্রজননে সুবিধা হয়। এ ছাড়া ভারতের মিজোরাম রাজ্যে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। সেখান থেকেও ম্যালেরিয়া ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!