পরোয়ানা থাকলেও গ্রেপ্তার হন না এই খোরশেদ

বিভিন্ন মামলায় তার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকলেও বারবার পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন একাধিকবার কারাগারে যাওয়া খোরশেদ। সর্বশেষ রোববার আগ্রাবাদ এলাকা থেকে পালিয়ে যান তিনি। এ নিয়ে পুলিশকে দুষছে এলাকাবাসীরা।

হত্যা ও অস্ত্র মামলায় একাধিকবার কারাগারে গেলেও জামিনে বের হয়ে বারবার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছেন এই খোরশেদ—জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সদরঘাট থানার ওসি ফজলুর রহমান ফারুকী বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে সদরঘাট থানায় দুটি ওয়ারেন্ট রয়েছে।’

জানা গেছে, রোববার (১৮ আগস্ট) বিকেলে নগরের আগ্রাবাদের বিভিন্ন শিপিংহাউজ থেকে চাঁদা আদায়ের সময় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্যে অভিযান চালালে তিনি পুলিশের উপর উল্টো হামলা চালিয়ে পালিয়ে যান। এর আগে তিনি দুইবার পালিয়েছিলেন। নগর যুবলীগের প্রভাবশালী এক নেতার ছত্রচ্ছায়ায় খোরশেদ ইচ্ছেমতো যা খুশি তাই করছেন—এমন অভিযোগ এলাকার লোকজনেরা। তবে তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস করে না।

সদরঘাট থানার ওসি ফজলুর রহমান ফারুকী জানান, খোরশেদ পেশাদার সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে এলাকার লোকজনের অভিযোগ রয়েছে। আশা করছি তাকে শীঘ্রই আইনের আওতায় আনা হবে। খোরশেদ প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করলেও এলাকার লোকজন তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি নন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, খোরশেদ পেশাদার সন্ত্রাসী। আগ্রাবাদ এলাকায় বিকেলে ফুটপাতে যতগুলো জুতোর দোকান বসে সবগুলো থেকেই নিয়মিত চাঁদা আদায় করে খোরশেদ। তিনি শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যরিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও এমপি লতিফের নাম ভাঙ্গিয়ে এসব কাজ করে বলে জানায় তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৩০ জুন দিবাগত রাত একটার দিকে আরেক পেশাদার সন্ত্রাসী গোলাম সরওয়ার প্রকাশ হামকা মিলনসহ ১০-১৫ সহযোগী নিয়ে মনির হোসেন মান্নান নামে এক ব্যক্তির হাত বিচ্ছিন্ন করে কুপিয়ে হত্যা করে খোরশেদ। মান্নান হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে খোরশেদ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২০ সেপ্টেম্বর আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মান্নানকে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে ক্ষত-বিক্ষত মৃতদেহটি সড়কের পাশে ফেলে দেয়।

খোরশেদকে গ্রেপ্তার করার পর তার কাছে হত্যায় ব্যবহৃত চাইনিজ কুড়াল পাওয়া যায়। এ হত্যা মামলায় বেশ কিছুদিন কারাভোগও করেছেন খোরশেদ। এর আগেও একটি অস্ত্র মামলায় জেল খেটেছিলেন তিনি।

সদরঘাটের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী খোরশেদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা আর ওয়ারেন্ট থাকলেও রহস্যজনক কারণে পুলিশ তাকে ধরছে না এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর। নগরীর কোতোয়ালী, সদরঘাট ও ডবলমুরিং থানায় তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, খুন ও মাদকসহ বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে।

এলাকাবাসীদের তথ্যমতে, পরোয়ানাভুক্ত খোরশেদ আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, শেখ মুজিব রোড, চৌমুহনী পাঠানটুলি রোড, আগ্রাবাদা বাণিজ্যিক এলাকা, কমার্স কলেজ রোড কাটা বটগাছ, জমির উদ্দিন লেন, মোগলটুলি বাজার, বার কোয়ার্টার এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেন তিনি।

এ বিষয়ে ডবলমুরিং থানার ওসি সদীপ কুমার দাশ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘খোরশেদের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর অভিযোগের কথা আমরা জেনেছি। তবে ভয়ে কেউ তার বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেনি। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।’

এইচটি/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!