পরিবেশ বাঁচাতে এই প্রথম লো-সালফার অয়েল ঢুকলো চট্টগ্রাম বন্দরে
ব্যবহার হবে সমুদ্রগামী জাহাজ ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে
মালয়েশিয়া থেকে দেশে এই প্রথমবারের মতো সমুদ্রগামী জাহাজ ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহার উপযোগী শূন্য দশমিক পাঁচ মাত্রার লো-সালফার অয়েল আমদানি করলো পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। এই লো-সালফার অয়েল নিয়ে সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকালে বন্দরের মেঘনা ডলফিন জেটিতে ভিড়ছে একটি জাহাজ। জাহাজটিতে প্রায় ১৫ হাজার টন ওজনের লো-সালফার অয়েল রয়েছে।
জানা গেছে, মালয়েশিয়ার পিভি নিলি পার্ক বন্দর থেকে লোড হয়ে ‘এমপি টিএমএন প্রাইড’ জাহাজটি ১৪ হাজার ৯৪৬ টন দশমিক ৫ শতাংশ লো-সালফারযুক্ত অয়েল নিয়ে বিপিসির মেঘনা ডিপোতে বার্থিং হবে। বিপিসি থেকে চাহিদা অনুসারে চট্টগ্রাম বন্দর, পায়রা ও মোংলা বন্দরে এই অয়েল সরবরাহ করা হবে।
ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের (আইএমও) বাধ্যবাধকতা থাকায় এই তেল আমদানি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিপিসির কর্মকর্তারা। আগে বাংলাদেশে ব্যবহার করা হতো উচ্চমাত্রার কার্বন নিঃসৃত ফার্নেস অয়েল— যা ৩ দশমিক ৫ মাত্রার সালফারযুক্ত। কিন্তু পরিবেশ রক্ষায় আইএমওর চাহিদা মতে এখন থেকে ব্যবহার করা হচ্ছে দশমিক ৫ মাত্রার সালফারযুক্ত অয়েল। যদিও লো-সালফার অয়েলের মূল্য খানিকটা বেশিই।
গত জানুয়ারি থেকে এ তেল আমদানির কথা থাকলেও করোনাভাইরাসে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে তা পিছিয়ে যায় বলে জানিয়েছেন বিপিসি কর্মকর্তারা। আগে বেশিরভাগ সমুদ্রগামী জাহাজই সিঙ্গাপুর বা কলম্বো বন্দর থেকে লো-সালফার অয়েল সংগ্রহ করতো। এতে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছিল। তাছাড়া দেশের প্রধান দুই সমুদ্রবন্দরে লো-সালফার অয়েল সহজলভ্য না হওয়ায় চোরাইপথে এই তেলের অবৈধ বাংকারিং কারবারও জমজমাট হয়ে ওঠে।
বিপিসির উর্ধতন মহাব্যবস্থাপক আবু হানিফ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট দেড় লাখ টন লো-সালফার অয়েল আমদানি করা হবে। এর মধ্যে অর্ধেক তেল দরপত্রের মাধ্যমে এবং বাকি অর্ধেক জি-টু-জির ভিত্তিতে আমদানি হবে। সিঙ্গাপুরভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি এই জ্বালানি তেল বিপিসিকে সরবরাহ করছে।
লো-সালফার অয়েল আমদানি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘দূষণ কমাতে আইএমও গত ১ জানুয়ারি থেকে সমুদ্রগামী জাহাজে ফার্নেস অয়েলের বদলে লো-সালফার অয়েল ব্যবহারের নির্দেশনা জারি করে। কোভিডসহ নানা কারণে কিছুটা দেরি হলেও ওই নির্দেশনা প্রতিপালনে আমরা একটু পিছিয়ে পড়েছি। তবে এখন থেকে আর সেই সমস্যা থাকবে না। যেসব জাহাজে বাংকার আছে, তারা এ অয়েল ব্যবহার করতে পারবে। দেশি-বিদেশি কোনো জাহাজকে আর তেল ছাড়া ফিরে যেতে হবে না।’
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসএএ) প্রেসিডেন্ট এহসানুল হক চৌধুরী বলেন, ‘বিপিসি তুলনামূলক কাছাকাছি দরে এই তেল বিক্রি করতে পারলে তা থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় ও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় সম্ভব হবে।’
এফএমএস শিপিং লাইনের স্বত্ত্বাধিকারী মোহাম্মদ জামাল সিকদার বলেন, ‘স্বল্পমাত্রার কার্বন নিঃসৃত ফার্নেস অয়েল আমাদের দেশে সরবরাহ হচ্ছে— এটা খুবই আনন্দের। এতে ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড মেনটেইন হবে। চট্টগ্রাম বন্দরে বাংকার জাহাজের আসা-যাওয়াও বাড়বে। এতে সরকার যেমন লাভবান হবে, দেশের ভাবমূর্তি বাড়বে বিশ্বেও।’
সিপি