পরকীয়ায় ধরা পড়ে শাশুড়িকে গলা কেটে খুন, চট্টগ্রামে পুত্রবধূর যাবজ্জীবন

খুনের সহযোগী পরকীয়া প্রেমিক খালাস

শাশুড়িকে গলা কেটে হত্যার দায়ে নাঈমা লিজা নামে এক গৃহবধুকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই রায়ে আদালত তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। ছয় বছর আগে এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটে।

রোববার (১০ জানুয়ারি) চট্টগ্রামের সপ্তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আ স ম শহীদুল্লাহ কায়সার এ রায় দিয়েছেন।

পুত্রবধূর পরকীয়ায় বাধা দেওয়ায় ছয় বছর আগে নাঈমা লিজা তার শাশুড়ি সোহাগ খাতুনকে গলা কেটে খুন করেন। তার সহযোগী হিসেবে কফিলের সম্পৃক্ততা অভিযোগপত্রে থাকলেও আদালতের রায়ে কফিল খালাস পেয়েছেন। খুন হওয়া সোহাগ খাতুন চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বরুমছড়া গ্রামের ফজলুল হকের স্ত্রী। আর নাঈমা লিজার স্বামীর নাম জসীম উদ্দিন। নাঈমা লিজা ঘটনার পর গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।

রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি এপিপি রুবেল পাল মুঠোফোনে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, খুনি নাঈমা লিজা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন যে, তার স্বামী জসীম উদ্দিন চট্টগ্রাম শহরে এক গ্যারেজে চাকরি করত। মাঝে মধ্যে বাড়ি যেত। স্বামীর অনুপস্থিতিতে বিয়ের পরপরই তার শ্বশুরবাড়ির পাশ্ববর্তী প্রতিবেশী দেবর কফিলের সাথে তার পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু বিষয়টি তার শাশুড়ি বুঝতে পেরে বিভিন্ন সময় বকাঝকা করত। ছেলে বাড়িতে আসলে সব বলে দেবে বলে হুমকিও দিত। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় কফিল তাদের বাড়িতে আসলে তার শাশুড়ি তার সামনেই তাকে মারধর করেন। ওই রাতে তার শাশুড়ি ঘুমিয়ে পড়লে কফিলকে ঘরে এনে খাটের নিচে লুকিয়ে রেখেছিল। পরে মধ্যরাতে দুজন মিলে সোহাগ খাতুনকে গলা কেটে হত্যা করে।

এপিপি রুবেল পাল আরও বলেন, লিজার প্রতিবেশী বাদশা প্রকৃতির ডাক সারতে বাইরে বের হলে সোহাগ খাতুনের ঘর থেকে গোঙানির আওয়াজ শুনতে পান। পরে বাদশা ঘরের মধ্যে উঁকি দিয়ে দেখেন লিজা শাশুড়িকে খুন করে ছুরি হাতে বসে আছেন খাটের ওপর।

এ ঘটনায় পরের দিন শ্বশুর ফজলুল হক থানায় গিয়ে লিজার বিরুদ্ধে মামলা করেন। এজাহারে লিজার প্রেমিক কফিলের বিষয়টি তিনি আনেননি। তবে আদালতে লিজার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার পর পুলিশ কফিলকে গ্রেফতার করে। পরে কফিল উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে বেরিয়ে আসেন।

রুবেল পাল আরও বলেন, এমনকি আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময়ও কেউ কপিলের কথা উল্লেখ করেননি। বাকি যে ১১ জন সাক্ষী দিয়েছেন তারা কেউ কফিলের সাথে পরকীয়ার বিষয় উল্লেখ করেননি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আব্দুল গাফ্ফার ২০১৪ সালের ২০ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দেন। ২০১৬ সালের ২৫ জানুয়ারি আদালত দণ্ডবিধির ৩০২ ও ৩৪ ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। রাষ্ট্রপক্ষ মোট ১২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে রোববার (১০ জানুয়ারি) রায় ঘোষণা করেন।

এপিপি রুবেল পাল জানিয়েছেন, আমরা রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পেলে কফিলের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাব। কারণ কফিলের প্ররোচণাতেই লিজা বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়েছে। লিজার স্বীকারোক্তিতে কফিলকে সঙ্গে নিয়েই সোহাগ খাতুনকে খুন করেছে। তাহলে অপরাধের দায় একা লিজার হবে কেন? কফিলেরও শাস্তি পেতে হবে।

আইএমই/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!