পদোন্নতির জন্য নিখুঁত জালিয়াতি চসিক প্রকৌশলীর!

জালিয়াতি ও তথ্য গোপন করে উপ-সহকারী প্রকৌশলী থেকে সহকারী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি পেয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) বিদ্যুৎ বিভাগের এক প্রকৌশলী। নাম তার রেজাউল বারী ভুইয়া। ২০০১ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সহকারী প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্ব পালন করছেন— এই তথ্য দিয়ে পদোন্নতি পান তিনি। অথচ ২০০৭ সালের ১০ জুলাই থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সহকারী প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্ব পালন করেননি তিনি। এই সময় তিনি তার মূল পদ উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে চসিকে দায়িত্ব পালন করেন।

উপ-সহকারী প্রকৌশলী থেকে সহকারী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি পাওয়ার জন্য তিনি ওই দুই বছর যে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেননি সেই তথ্য গোপন করেন। জালিয়াতির মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়ে সহকারী প্রকৌশলীর বেতন স্কেলসহ সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা ভোগ করে যাচ্ছেন এই কর্মকর্তা।

এ প্রসঙ্গে তথ্য গোপন করা চসিকের প্রকৌশলী রেজাউল বারী ভুইয়া বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে একটি চক্র ষড়যন্ত্র করছে। সামনে আমাদের নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি প্রক্রিয়াধীন থাকায় আমার পদোন্নতি ঠেকাতে এসব মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। আমি উপ-সহকারী থেকে সহকারী প্রকৌশলী পদে যে পদোন্নতি পেয়েছি তা যথাযথ নিয়ম অনুযায়ীই পেয়েছি। আদালতের নির্দেশে পেয়েছি।’

চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা বলেন, ‘পদোন্নতির ফাইল না দেখে মন্তব্য করা সম্ভব নয়। তবে এমন কিছু ঘটে থাকলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৮৯ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিদ্যুৎ বিভাগে চাকরিতে যোগদান করেন জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া প্রকৌশলী রেজাউল বারী ভুইয়া। সেই থেকে উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে কাজ করতে থাকেন তিনি। পরে ২০০১ সালে প্রথম তাকে উপ-সহকারী থেকে সবেতনে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেই দায়িত্ব পালন করার সময় সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর আমলে ২০০৭ সালে তাকে সহকারী প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্ব থেকে ফের উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে বদলি করা হয়। ২০১০ সালের ২১ জুলাই পর্যন্ত উপ-সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পটপরিবর্তনের পর মহিউদ্দিন চৌধুরীকে হারিয়ে বিএনপির টিকেটে এম মঞ্জুর আলম মেয়র নির্বাচিত হলে তাকে উপ-সহকারী প্রকৌশলী থেকে ২০১০ সালের ২২ জুলাই ফের চলতি দায়িত্ব দিয়ে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে গার্বেজ ট্রিটমেন্ট্র প্লান্ট থেকে বিদ্যুৎ বিভাগে স্থানান্তর করা হয়। তিনি ২০০৭ সাল থেকে তিনি ২০১০ সাল পর্যন্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্ব পালন করেন।

কিন্তু ২০১১ সালে প্রকৌশলী রেজাউল বারী ভুইয়া উচ্চ আদালতে পদোন্নতির জন্য একটি রিট মামলা দায়ের করেন। জানা গেছে, সেই রিটে তিনি ২০০১ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত একটানা সহকারী প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্ব পালন করে আসছেন মর্মে আদালতে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করেন। ২০০৭ থেকে ২০১০ পর্যন্ত দুই বছর তিনি যে সহকারী প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্বে ছিলেন না— সেই তথ্য গোপন করেন। আদালতে জালিয়াতির আশ্রয় নেন। তিনি মিথ্যা তথ্য দিয়ে উচ্চ আদালত থেকে তাকে সহকারী প্রকৌশলী পদে স্থায়ী করতে নির্দেশনা নিয়ে আসেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এরপর তাকে আদালতের নির্দেশে সহকারী প্রকৌশলী পদে স্থায়ী পদোন্নতি দেয় চসিক। ২০১৩ সালের ৪ এপ্রিল এক অফিস আদেশে তাকে স্থায়ীভাবে সহকারী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। তবে পদোন্নতির নেপথ্যে জালিয়াতির বিষয়টি পর্দার আড়ালেই থেকে গেছে এতোদিন।

এদিকে বিষয়টি জানাজানির পর চসিকের বিদ্যুৎ বিভাগে তোলপাড় চলছে। বিদ্যুৎ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!