পদত্যাগ করিনি, অব্যাহতিই দিয়েছে— বললেন আল্লামা বাবুনগরী

চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসার মুঈনে মোহতামীম বা সহযোগী পরিচালকের পদ থেকে সরাসরি পদত্যাগ বা পদত্যাগের বিষয়ে মজলিসে শূরার সদস্যদের কাছে কোনো আবেদন বা সম্মতি প্রকাশ করেননি আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী। তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এমন দাবি করেছেন হাটহাজারী মাদরাসার সদ্যবিদায়ী এই মুঈনে মোহতামীম বা সহযোগী পরিচালক।

বুধবার (১৭ জুন) সকাল ১০টায় আল্লামা আহমদ শফির সভাপতিত্বে দারুল উলুম মাদ্রাসার শুরা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সেগুলো হচ্ছে— আল্লামা শাহ আহমদ শফি মোহতামিম পদে বহাল, আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরীকে সহযোগী পরিচালক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া, আল্লামা শেখ আহমদকে সহযোগী পরিচালক নির্বাচিত, মুফতি আজম আব্দুস সালামকে স্বপদে বহাল এবং হাটহাজারীর কাশেম সওদাগর থেকে মাদ্রাসার পাওনা টাকা আদায়ের জন্য মাওলানা ইয়াহিয়া এবং কেরানি রফিককে দায়িত্ব প্রদান করা হয়।

এর মধ্যেই পেরেছি, হাটহাজারী মাদরাসার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে মাওলানা নোমান ফয়জীর বরাতে এবং একটি ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় মাওলানা নুরুল আমীনের বরাতে প্রচারিত হয়, জুনাইদ বাবুনগরী মজলিসে শূরার সদস্যদের কাছে মুঈনে মোহতামীম বা সহযোগী পরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগের সম্মতি প্রকাশ করেন।

কিন্তু বুধবার রাতেই সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জুনাইদ বাবুনগরী দাবি করেছেন, পদত্যাগের সম্মতির কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এ ধরনের কোনো সম্মতি তিনি প্রকাশ করেননি। একতরফাভাবে তাকে অব্যাহতিই দেওয়া হয়েছে শূরা কমিটির বৈঠকে।

বিষয়টি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছেন বাবুনগরীর ব্যক্তিগত সহকারী ইনামুল হাসান ফারুকীও। তিনি বলেন, ‘হুজুরের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে তিনি সত্য উন্মোচন করে বিবৃতি দিয়েছেন। শূরা বৈঠকে পদত্যাগের বিষয়ে কোন কথাই হয়নি। অথচ তিনি পদত্যাগ করেছেন বলে প্রচার করা হচ্ছে— এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা।’

বিবৃতিতে আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, ‘শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী সাহেব হুজুরের সভাপতিত্বে আজ (১৭ জুন) হাটহাজারী মাদরাসার মজলিসে শূরার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত বৈঠকের শেষ পর্যায়ে কিছু বিষয় সম্পর্কে জানতে আমাকে বৈঠকে ডাকা হয়। সেসব বিষয়ে আমি আমার সুস্পষ্ট বক্তব্য শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী সাহেব ও শূরার সদস্যদের সামনে উপস্থাপন করেছি। কিন্তু বৈঠকে শূরার সদস্যদের কাছে মুঈনে মোহতামীমের পদ থেকে পদত্যাগ চাওয়া বা পদত্যাগের বিষয়ে কোন ধরনের সম্মতি আমি প্রকাশ করিনি এবং উক্ত বৈঠকে আমাকে মুঈনে মোহতামীমের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়ে শূরার সদস্যগণও আমাকে কিছুই বলেননি। বৈঠক শেষ হওয়ার অনেক পরে শূরার একজন সদস্য মুঈনে মোহতামীমের পদ থেকে আমাকে অব্যাহতির বিষয়টি জানিয়েছেন।’

বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, ‘আমি জানতে পেরেছি, মাদরাসার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে মাওলানা নোমান ফয়জীর বরাতে এবং একটি ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় মাওলানা নুরুল আমীন সাহেবের বরাতে প্রচারিত হচ্ছে যে, আমি মজলিসে শূরার সদস্যদের নিকট মুঈনে মোহতামীম বা সহযোগী পরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগের সম্মতি প্রকাশ করায় তারা আমাকে উক্ত পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। অথচ একথা ভিত্তিহীন। আমি শূরার সদস্যদের নিকট কোন পদত্যাগ চাইনি।’

বুধবার (১৭ জুন) শুরা কমিটির সভায় ১১ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এরা হলেন ঢাকার জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলুম ফরিদাবাদ মাদ্রাসা পরিচালক ও হাইয়াতুল উলয়া কো-চেয়ারম্যান আল্লামা আব্দুল কুদ্দুস, ফরিদাবাদ মাদ্রাসা নায়েবে মুহতামিম ও বেফাক যুগ্ম-মহাসচিব মুফতি নুরুল আমিন, ঢাকার খিলগাঁও মাখজানুল উলুম মাদ্রাসার মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির জামিয়া উবাইদিয়া নানুপুর মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা সালাহউদ্দিন নানুপুরী, হাটহাজারীর আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া হামিউচ্ছুন্নাহ মেখল মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা নোমান ফয়জী, হাটহাজারীর ফতেপুর মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফতেপুরী, জামেয়া নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার শিক্ষা পরিচালক মাওলানা সলিম উল্লাহ এবং হাটহাজারীর শিকারপুরের বাথুয়ার মাওলানা ওমর ফারুক চৌধুরী।

এর আগে গত ৭ জুন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে আল্লামা শাহ আহমদ শফী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি হন। আটদিন পর সোমবার (১৫ জুন) বিকেলে তিনি হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরেন। এরপরই তিনি দারুল উলুম মাদ্রাসার শুরা কমিটির বৈঠক আহ্বান করেন। মাদ্রাসার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর সিদ্ধান্ত হয় এই শুরা বৈঠকে। মাদ্রাসার মোহতামিম (মহাপরিচালক) নির্বাচনের ভারও এই শুরা কমিটির ওপরই।

এমআইটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!