পথ না হারালে বাংলাদেশে ফণীর আঘাত শনিবার সকালে

উত্তরমুখী গতিপথ ধরে রাখলে শনিবার সকালে ঘূর্ণিঝড় ফণী হানা দিতে পারে বাংলাদেশে। তবে তার আগে শুক্রবার বিকেলের দিকে ঘণ্টায় ১৭০ কিলোমিটার বাতাসের শক্তি বুকে নিয়ে প্রবল এই ঝড় অতিক্রম করতে পারে ওড়িশা উপকূল, পুরীর কাছে গোপালপুর ও চাঁদবালির মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে। অনুমিত হিসাব অনুযায়ী ঠিক এখন ভারতের ওড়িশা উপকূলের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণী। সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় দেশের উপকূলীয় ১৯ জেলায় সতর্কতা জারি করে খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। ঘূর্ণিঝড় ফণী ভারতের ওড়িশা উপকূলে আঘাত হানার পর বাংলাদেশে আসতে পারে – এমনটি ধরে নিয়ে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার।

শনিবার সকালে আঘাত হানার সম্ভাবনা

আবহাওয়ার অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় ফণী শনিবার (৪ মে) সকালে দেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দেওয়া তথ্যের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ফণীর এখনকার গতিবেগ এবং পথ যদি ঠিক থাকে তবে ভারতের ওডিশা, পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা ও মংলায় আঘাত করবে শনিবার সকালে। এটি যশোর হয়ে দিনাজপুর পর্যন্ত প্রবাহিত হবে।’
প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, এখন ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেওয়া হয়েছে। যদি ফণীর এগোনোর গতিবেগ এমন থাকে তবে ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত পাল্টে ৫, ৬ বা ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেওয়া হবে। এটা দেওয়া হলে স্বেচ্ছাসেবীরা উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় থাকা মানুষদের তাদের প্রাণিসম্পদসহ ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসবে।

এখন যেখানে আছে ‘ফণী’

পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘুর্ণিঝড় ফণী অনুমিতভাবেই বুধবার ভারতের অন্ধ্র উপকূলের কাছাকাছি এসে সামান্য দিক বদলে উত্তর দিকে যাত্রা শুরু করেছে। বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় এ ঝড় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ১২০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ১১৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১০৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ১০৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। ভারতের আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুসারে, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ওড়িশা উপকূলই লক্ষ্য, তবে দিক বদলও হতে পারে

নানা জল্পনাকল্পনাকে পাশ কাটিয়ে ভারতের ওড়িশা উপকূলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে ধারণা করছেন আবহাওয়াবিদরা। তারা বলছেন, শক্তি বেড়ে এখন ঘন্টায় ১৭০ কিলোমিটার গতিতে সেদিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত ফণী পুরির দক্ষিণে গোপালপুর ও চাঁদবালির মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে শুক্রবার বিকেলের দিকে। আবহাওয়াবিদরা ধারণা করছেন, তখন এর শক্তি আরও বেড়ে ঘণ্টায় বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ১৭৫ থেকে ১৮৫ কিলোমিটার পর্যন্ত।
ইতিমধ্যে ওড়িশা উপকূলের দিকে এগিয়ে যাওয়ায় রাজ্যটিতে ‘ইয়েলো’ সতর্কতা জারি করেছে ভারতের আবহাওয়া বিভাগ। বুধবার এক ঘোষণায় ওড়িশা সরকার বৃহস্পতিবার রাজ্যের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে, রাজ্যের ১১টি উপকূলীয় জেলা থেকে জারি থাকা নির্বাচনী বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে নিয়েছে দেশটির নির্বাচন কমিশন। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে রাজ্যের পর্যটন শহর পুরি ত্যাগের জন্য পর্যটকদের পরামর্শ দিয়েছে ওড়িশার কর্তৃপক্ষ। এছাড়া অন্ধ্র প্রদেশ, পশ্চিম বঙ্গ ও তামিলনাডুর উপকূলীয় এলাকাগুলোতেও উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

সুপার সাইক্লোনের একধাপ আগে

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, বাতাসের তীব্রতা এবং ধ্বংসক্ষমতা অনুযায়ী বাংলাদেশ ও ভারতে ঘূর্ণিঝড়কে চারটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সৃষ্ট বাতাসের গতিবেগ যদি ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার হয়, তাকে ঘূর্ণিঝড় বা ট্রপিক্যাল সাইক্লোন বলা হয়। গতিবেগ যদি ৮৯-১১৭ কিলোমিটার হয়, তখন তাকে তীব্র ঘূর্ণিঝড় বা ‘সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ বলা হয়। আর বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১৮ থেকে ২১৯ কিলোমিটার হয়, তখন সেটিকে হ্যারিকেন গতিসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড় বা ‘ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ বলা হয়। গতিবেগ ২২০ কিলোমিটার বা তার বেশি হলে তাকে ‘সুপার সাইক্লোন’ বলা হয়। ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া আকারে ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বুধবার (০১ মে) দুপুর পর্যন্ত ‘ফণী’ সুপার সাইক্লোনের একধাপ আগের স্তরের ঝড়ে পরিণত হয়েছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!