তাদের কারও বাবা রিকশা চালক। কারও বাবা দিনমজুর। মা করেন কারও ঘরে গৃহকর্মীর কাজ। আবার কারও বাবা নেই, মা আছে। রেলস্টেশন প্লাটফর্মজুড়ে তাদের নিত্য দৌড়ঝাপ। থাকেও রেললাইনের পাশের বস্তিতে। কেউ হাত পাতে ট্রেনযাত্রীর কাছ থেকে। আবার কেউ যাত্রীর ব্যাগ-লাগেজ ঠেলে কামাই করে কিছু। তারা পথশিশু। এই পরিচয় নিয়েই তাদের বেড়ে ওঠা।
করোনা পরিস্থিতিতে তাদের বাবা-মায়ের আয়-রোজগার বন্ধ। স্বাভাবিক সময়েও তাদের টানাপোড়েনের সংসার। আর এখন? এখনতো ঘরের হাঁড়িও চড়েনা উনুনে। ভালমন্দ খাবারতো স্বপ্নই!
এই যাদের পরিস্থিতিতে, ঈদের দিন তাদের মুখে তুলে দেওয়া হয়ে পোলাও, কোর্মা, চিকেন রোস্ট।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন এলাকার সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের বিদ্যালয় ‘আলোর ঠিকানা স্কুলের’ শিক্ষার্থীদের নিয়ে এই আয়োজন করে জিআরপি থানা পুলিশ।
ঈদের ছুটিতে জিআরপি পুলিশ ছুটি পায়নি। পরিবার থেকে দূরে ছিল তারা। কিন্তু নিজেদের বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান ছাড়াও তাদের আছে আরও এক পরিবার। কারণ দায়িত্বপালনের সময় প্লাটফর্ম কিংনা স্টেশন চত্বরে তাদের সামনে ঘুরে বেড়ায় নিজেদের সন্তানের বয়সী পথশিশুরা। পরিবার থেকে দূরে থাকা হলেও আবেগ-অনুভূতির বাস্তবতায় এরাও হয়ে উঠে জিআরপি পুলিশ পরিবারের সদস্য। তাই তাদের নিয়ে এবার ঈদ উদযাপন করলো তারা।
জিআরপি পুলিশের ৬০ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করছিলে এবারে ঈদে চট্টগ্রাম স্টেশনে। তারা মিলেই
আলোর ঠিকানা স্কুলের ৬০ শিক্ষার্থীকে দেন দাওয়াত। অতিথিদের জন্য মেণ্যু নির্বাচন করা হয় পোলাও, কোর্মা, রোস্ট। বাবুর্চি এনে ঘটা করে বাজার-সদাই করে তাদের জন্য এ খাবারের আয়োজন করে এই পুলিশ সদস্যরা।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ওসি মো. মোস্তাফিজ ভুইয়া চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি এই প্রস্তাবটা অফিসারদের সাথে শেয়ার করি। তাদের বললাম দেখো আমরা তো প্রতিবছর ঈদ করি, এবার তো সবাই ঈদ করতে পারতেছে না। আমরা নিজেরাও বাড়ি যেতে পারছি না। এখানে একটা স্কুল আছে। যেখানে অভাবী বাচ্চারা পড়াশোনা করে। তিনবেলা তাদের পাতে খাবার জুটে না। পোলাও কোর্মা তো স্বপ্নের মতো। আমি কিছু টাকা দিব। তোমরা যদি কিছু টাকা দাও তবে আমরা কিছু একটা করতে পারবো। এরপর সবাই সাধ্যমতো টাকা দিল। আমরা বাবুর্চি এনে রান্না করলাম। এরপর আমরা নিজেরা গিয়ে বাচ্চাদের দাওয়াত খাওয়ালাম।’
এমএফও