পতেঙ্গা সৈকতে দোকানের জঞ্জাল, টুরিস্ট পুলিশের ছত্রচ্ছায়ায় দুই গ্রুপের বাণিজ্য

চট্টগ্রামের পর্যটনকেন্দ্র পতেঙ্গা আউটার রিং রোড দখল করে ১০ মিটার পর পর বসানো হয়েছে ভাসমান দোকানপাটের জঞ্জাল। রিং রোডের প্রায় এক কিলোমিটারজুড়ে এভাবে ওয়াকওয়ে ও কিড্স জোন দখল করে নিয়েছে দোকানি ও ভাসমান হকাররা। এর পাশাপাশি রয়েছে বিচ্ছিন্ন হকার ও বেপরোয়া গাড়ি চলাচলের উপদ্রবও। প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পর্যটকরা এতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এর পাশাপাশি সৈকতের সৌন্দর্য্যও নষ্ট হতে বসেছে।

অভিযোগ রয়েছে, সমুদ্র সৈকত ও ওয়াকওয়েজুড়ে যত্রতত্র দোকানপাটের এই অবৈধ ব্যবসার নেপথ্যে রয়েছে পতেঙ্গা সৈকত টুরিস্ট পুলিশের ছত্রচ্ছায়ায় দুটি গ্রুপ। মূলত তাদের নিয়ন্ত্রণেই চলছে এসব ব্যবসা। জানা গেছে, ভাসমান ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এককালীন টাকা নেওয়া ছাড়াও প্রতিদিন জনপ্রতি দোকানি ও ব্যবসায়ীর কাছ থেকে আদায় করা হয় দোকানের আকারভেদে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।

এই চাঁদার টাকা দুটি গ্রুপের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা হয়। এর মধ্যে একটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে ৪১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সিনিয়র সহসভাপতি মুছা, নুর মুহাম্মদ ও তাজুর নেতৃত্বে। অপর গ্রুপটির নেতৃত্বে রয়েছেন পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত দোকান সমবায় সমিতির সভাপতি ওয়াহিদুল আলম প্রকাশ মাস্টার এবং ৪১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মাইনুল ইসলাম।

পতেঙ্গা সৈকতে দোকানের জঞ্জাল, টুরিস্ট পুলিশের ছত্রচ্ছায়ায় দুই গ্রুপের বাণিজ্য 1

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শতকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন আউটার রিং রোডের তিন স্তরে নির্মাণাধীন রয়েছে আউটার রিং রোড, কিডস জোন ও ওয়াকওয়ে। দেখা গেছে, রিং রোড ছাড়াও প্রতি ১০ মিটার পর পর চেয়ার বসিয়ে চায়ের দোকান, হকার ও বিভিন্ন ভাসমান ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে জমজমাট এই অবৈধ ব্যবসা।

সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী থেকে পরিবার নিয়ে বেড়াতে এসেছিলেন নাঈমুল ইসলাম। তিনি বললেন, ‘সরকার হাজার কোটি টাকা খরচ করে আউটার রিং প্রকল্পের কাজ করছে। সেই কাজ এখনও শেষ হয়নি। অথচ এখনই জায়গা দখল করে চলছে জমজমাট ভাসমান ব্যবসা। ওয়াকওয়ে ও কিডস জোনে বসার কোনো জায়গা নেই। সবখানে দোকানদার ও হকার। শুধু তাই নয়, যত্রতত্র দোকান ছাড়াও ওয়াকওয়েতে ঘোড়ার গাড়ি ও চার চাকার গাড়ি চলাচলের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে সৈকতের সৌন্দর্যও।’

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত দোকান সমবায় সমিতির সভাপতি ওয়াহিদুল আলম মাস্টার বলেন, ‘সৈকতে ওয়াকওয়ে ও কিডস জোন দখল করে ভাসমান দোকানপাট বসিয়েছে এখানকার ওয়ার্ডের কতিপয় পাতি নেতা। শুধু তাই নয়, যত্রতত্র অর্থের বিনিময়ে ভাসমান হকার এবং ঘোড়ার গাড়ি ও চার চাকার গাড়ি চলতে দিয়ে টাকা আদায় করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে এখানকার সৌন্দর্য নষ্ট করা হচ্ছে।

তিনি অভিযোগ করেন, ‘সৈকতের টুরিস্ট পুলিশের সহযোগিতায় এখানকার অনেকেই এ চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত।’

আপনার বিরুদ্ধেও চাঁদাবাজির অভিযোগ শোনা যায়— এমন প্রশ্নে ওয়াহিদুল আলম মাস্টার বলেন, ‘আমি কোনো চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত নই। আমি যাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছি, উল্টো তারাই আমাকে চাঁদাবাজ বানাচ্ছে।’

পতেঙ্গা সৈকতকেন্দ্রিক চাঁদাবাজির সঙ্গে ওয়ার্ড যুবলীগের সিনিয়র সহসভাপতি মো. মুছার জড়িত থাকার কথা নিশ্চিত করেছেন ওই এলাকার একাধিক ব্যবসায়ী। তবে মুঠোফোনে একাধিক কল করা হলেও মো. মুছার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে। ফলে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত টুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক এনামুল হককে ভাসমান দোকানবাণিজ্যের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি উল্টো বিস্মিত হয়ে বলেন, ‘আউটার রিং রোডে কোথায় রয়েছে ভাসমান দোকানপাটের জঞ্জাল? এখানে তো এই ধরনের কোনো দোকানপাট নেই। সব ক্লিন। আপনি এসে দেখতে পারেন।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!