পতেঙ্গা সৈকতে উন্মুক্ত প্রবেশ বন্ধ করা যাবে না—অধ্যাপক ড. সেকান্দার

চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। প্রায় সাত কিলোমিটার বিস্তৃত এ সমুদ্র সৈকত প্রতিদিন হাজার হাজার ভ্রমণপ্রেমীর পদচারণের মুখর থাকে। কিন্তু এ জায়গা ইজারা দেওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।

জানা গেছে, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন সাত কিলোমিটার পরিসরের এক দশমিক পাঁচ কিলোমিটার পরিসরকে পর্যটন জোন-১ এবং পর্যটন জোন-২ হিসেবে ভাগ করে টেন্ডারের মাধ্যমে ২৫ বছরের জন্য বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ইজারা দিতে যাচ্ছে সিডিএ।

সমুদ্র সৈকত বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ইজারা প্রদানে নাগরিক স্বার্থ ক্ষুণ্নের পরিকল্পনার প্রতিবাদে শনিবার (১৩ আগস্ট) সকাল ১১টায় সংবাদ সম্মেলন করেছে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম।

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সুলতান আহমদ মিলনায়তনে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি ও ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. সেকান্দার খান বলেন, ‘পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত জনগণের সম্পদ। এটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সরকারের। সমুদ্র সৈকতে জনগণের প্রবেশাধিকার রুদ্ধ করা যাবে না। যার যার ব্যবসা সে করুক, আমাদের কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু জনগণের প্রবেশ বন্ধ করা যাবে না।’

তিনি বলেন, ‘সমুদ্র সৈকতে সর্বসাধারণের যে অধিকার রয়েছে সেটি হরণ করা হচ্ছে। এভাবে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসের মাঠ, ফয়’স লেক চলে গেছে। আমরা চাইলেও এমন নৈসর্গিক পরিবেশে বসে সময় কাটাতে পারবো না। বাণিজ্যিকীকরণের কারণে সেখানে সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার রুদ্ধ করা হয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন, ‘উন্নতমানের নগরীতে সর্বশ্রেণির মানুষের অবকাশ ও বিনোদনের জন্য খেলার মাঠ, পার্ক ও উন্মুক্ত পরিসরের নেটওয়ার্ক থাকে। চট্টগ্রাম নগরীতে এর সিকিভাগও নেই। নানান উপায়ে তাতে সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার সীমিত বা বন্ধ করা হয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যরা বলেন, সিডিএ কর্তৃক নগরীর উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা এবং বিস্তৃত অঞ্চল পরিকল্পনায় (ড্যাপ) পতেঙ্গা সৈকতকে পাবলিক ওপেন স্পেস বা ‘সর্বজনের উন্মুক্ত পরিসর’ হিসেবে সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। ঢাকায় তুরাগ নদীর দখল ও দূষণ নিয়ে করা রিটের প্রেক্ষিতে সংবিধানের ১৮ক, ২১, ৩১ ও ৩২ নম্বর অনুচ্ছেদের কথা উল্লেখ করে ‘পরিবেশ, প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, সকল উন্মুক্ত জলাভূমি, সমুদ্র, সমুদ্র সৈকত, নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর-বাওর, বিল, নদীর পাড়, পাহাড়-পর্বত, টিলা, বন ইত্যাদি কোনো ব্যক্তি বা কোম্পানিকে বাণিজ্যিকভাবে ইজারা দেওয়া চলবে না’ মর্মে হাইকোর্ট রায় দিয়েছে। কার্যত সিডিএ কোনো স্থান আইনগতভাবে ইজারা দেওয়ার অধিকার সংরক্ষণ করে না।

বক্তারা আরও বলেন, পুল ব্যয়ে আউটার রিং রোড নির্মাণের পর পর্যটনের যে ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তা যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানতে পেরেছি। আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য হলো, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের মতো একটি সর্বজনীন উন্মুক্ত পরিসরে ভ্রমণ পিপাসুদের আগমন উন্মুক্ত রেখেও বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব। সৈকতে আগতদের বিনোদন ও অবসরের প্রেক্ষিতে জলযান ভ্রমণ, ক্যাফে, রেস্টুরেন্ট, হরেক রকমের দোকান, খেলার ব্যবস্থা ইত্যাদি নির্মাণ করে সিডিএ চাইলে এসব নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। এসব পরিচালনার সুযোগ লাভ ও ব্যক্তিগত খাতে ইজারা দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করে বিনিয়োগকারী কর্তৃক নিরাপত্তাসহ ভ্রমণকারীদের সকল সুবিধা নিশ্চিত করে সহজেই মুনাফা উঠিয়ে আনা যায়। আমরা সিডিএকে সেই পথে অগ্রসর হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

শাহরিয়ার খানের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহ-সভাপতি আহমেদ জিন্নুর চৌধুরী, প্রকৌশলী এবিএম এ বাসেত, সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাসলিমা মুনা।

এমএ/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!