পতেঙ্গা থেকেই কর্ণফুলীতে উচ্ছেদ শুরু,১০ একর ভূমি উদ্ধার

হাইকোর্টের আদেশের প্রেক্ষিতে কর্ণফুলীর তীরবর্তী এলাকায় চট্টগ্রাম বন্দরের উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। সোমবার উদ্ধার করা হয়েছে বন্দরের ১০ একর ভূমি। সোমবার (২০ জানুয়ারি) সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলেছে উদ্ধার অভিযান। বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, ভূমি উদ্ধার অভিযান বন্দরের চলমান প্রক্রিয়া। একবছরে প্রচুর ভূমি উদ্ধার ও অর্থ আদায় হয়েছে।

জানা গেছে, সোমবার বন্দর কর্তৃপক্ষ পতেঙ্গা কর্ণফুলী তীর, সল্টগোলা, হালিশহর ও পানামা ট্রাক স্টেশনে অভিযান চালায়। এরমধ্যে পতেঙ্গায় দীর্ঘদিন ধরে নদীর তীর দখল করে নৌকা তৈরির কাজ করছিল একটি মহল। এখানে উচ্ছেদ করে ৪ একর ভূমি উদ্ধার করা হয়েছে। সল্টগোলায় ১ একর ও বন্দরের নতুন মার্কেট এলাকায় পানামা ট্রাক টার্মিনাল গত ১৬সাল থেকে দখল করেছিল। এটিও উদ্ধার করা হয়েছে। এখানেও ৪ একর ভূমি দখলমুক্ত হলো। এছাড়া মধ্য হালিশহরে ১ একর ভূমি উদ্ধার করা হয়েছে।

উদ্ধার অভিযানে বন্দর কর্তৃপক্ষের ডেপুটি ম্যানেজার (হেড অফ ল্যান্ড) জিল্লুর রহমান, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গৌতব বাড়ৈ, আইন কর্মকর্তা মোনতাসির আহমেদ নেতৃত্ব দেন। এ ব্যাপারে জিল্লুর রহমান বলেন, ‘বিভিন্ন সময় অবৈধ দখলদার বন্দরের জায়গা দখল করে ভোগ করে আসছিল। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ অভিযানের মাধ্যমে এসব ভূমি দখলমুক্ত করে। বন্দর কর্তৃপক্ষ সারাবছরই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে আসছে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরে এক বছরে জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৪৫ লাখ টাকা। বন্দরের পাওনা বকেয়া আদায় করা হয়েছে ৭৯ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ টাকা। এছাড়া কর্ণফুলীর দুই পাড়সহ প্রচুর পরিমাণ ভূমি উদ্ধার করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গৌতব বাড়ৈ বলেন, ‘হাইকোর্টের একটি নির্দেশনার প্রেক্ষিতেই বন্দর কর্তৃপক্ষের জায়গা আর কাউকে দখলে রাখতে দেওয়া হচ্ছে না। কর্ণফুলীর পাড়কে শতভাগ দখলমুক্ত করা হচ্ছে। আমাদের জায়গার বাইরে কোন ভূমি দখলে থাকলে সেটাও জেলা প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযান চালাতে পারে। এ যাবৎ কর্ণফুলীতে দখলে থাকায় তিনজনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ৩৩০জনকে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।’

প্রসঙ্গত, আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন না করার বিষয় ব্যাখ্যা দিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়াল অ্যাডমিরাল জুলফিকার আজিজকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ২৬ জানুয়ারি তাকে সশরীরে আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে। রোববার (৫ জানুয়ারি) বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। কর্ণফুলী নদীর তীরে অবৈধ দখল সংক্রান্ত ২০১০ সালে মিডিয়ায় প্রকাশিত রিপোর্ট নিয়ে জনস্বার্থে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) করা এক আবেদনে এ আদেশ দেওয়া হয়েছে। আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ। রিটের পর আদালত রুল জারি করেন। ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি কাশেফা হোসেনের আদালত রুল যথাযথ ঘোষণা করে ১১দফা নির্দেশনা দিয়েছিলেন। ওই রায় অনুসারে উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। কয়দিন চলার পর তা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৯ এপ্রিল চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তীরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা স্থাপনা অবিলম্বে উচ্ছেদে বন্দর চেয়ারম্যানের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরশেদ। আর বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কে এস সালাউদ্দিন আহমেদ। হাইকোর্টের নির্দেশনা মতে, উচ্ছেদ করে ৩০দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। মনজিল মোরশেদ জানান, আদালতের নির্দেশে আংশিক উচ্ছেদ করা হয়। এরপর আবার আবেদন করা হলে আদালত বন্দর কর্তৃপক্ষকে সময় দেন। সময় পার হয়ে গেলেও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করে ফের সময় আবেদন করায় বন্দরের চেয়ারম্যানকে তলব করে আদেশ দেন আদালত। এ সময় আদালত বলেছেন, ইদানিং দেখা যায়, অনেক কর্মকর্তাই আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে অনীহা দেখাচ্ছেন।

এএস/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!