পতেঙ্গায় বিদ্যুতের খুঁটি আছে, আলো নেই— অন্ধকারে বাড়ছে অপরাধ

একের পর এক উন্নয়নের ছোঁয়ায় যেখানে বদলে যাচ্ছে পতেঙ্গার চিত্র, সেখানে রাতের অন্ধকারে চলাচল করতে হচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের দক্ষিণ পতেঙ্গা ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের বড় একটি অংশের বাসিন্দাদের। এই এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে মাইজপাড়া, চৌধুরীপাড়া, হিন্দুপাড়া, নাজিরপাড়া, ডেইলপাড়ার, চরপাড়া ও ফুলছড়ি পাড়া।

এলাকাবাসীর দাবি, সড়কে বৈদ্যুতিক খুঁটি থাকলেও বাতিগুলো অকেজো এবং নষ্ট দীর্ঘদিন ধরে। ঘুটঘুটে অন্ধকারে নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে জনসাধারণকে। আলোবিহীন রাতের অন্ধকারে চুরি, ছিনতাই, মাদক সেবনসহ বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা। একে তো গত ৮-১০ বছর ধরে ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে নেই স্থায়ী কাউন্সিলরের কার্যালয়, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ, এখন যোগ হয়েছে সড়ক বাতি না জ্বলাসহ নানা সমস্যা।

পতেঙ্গায় বিদ্যুতের খুঁটি আছে, আলো নেই— অন্ধকারে বাড়ছে অপরাধ 1

দক্ষিণ পতেঙ্গার ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গুরুত্বপূর্ণ সড়কের কিছু এলাকায় সড়কবাতি আছে, তবে অপর্যাপ্ত। আবার কিছু সড়কে অনেক দূর পর পর দু-একটি খুঁটিতে বাতি জ্বলে, তারপর আবার অন্ধকার। রাজার পুকুর মার্কেট থেকে এম এ এস রোড আলীর দোকান পর্যন্ত পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নেই। ডাক্তার আইয়ুব আলী সড়কের মসজিদের পিছনে আলোয় ব্যবস্থা নেই, মওলানা আবদুল্লা রোড ও চৌধুরী পাড়া, ডেইলপাড়ার, চরপাড়ার কিছু কিছু এলাকায় পর্যাপ্ত বাতি নেই।

এদিকে রাজাপুকুর হিন্দু পাড়া এলাকায় দুর্গাপুজা উপলক্ষে বাতি লাগানো হলেও বছরের ৬ মাস এখানে বাতি জ্বলে না— এমনটাই অভিযোগ এলাকাবাসীর। চড়িয়ালদা এলাকায় মূল সড়কে কয়েকটি বৈদ্যুতিক খুঁটিতে বাতি থাকলেও তা মিটমিট করে জ্বলে। নাজিরপাড়া মসজিদ গলি থেকে শুরু করে বিমানবন্দর রানওয়ে পর্যন্ত অন্তত ২২টি বৈদ্যুতিক খুঁটির বিপরীতে বাতি জ্বলে ১০টি খুঁটিতে। এলাকাবাসীর দাবি, সেখানে আরও ১৫টি সড়ক বাতির প্রয়োজন।

ফুলছড়ি পাড়ার শুরুতেই এবং ফুলছড়ি পাড়া স্লাক রোডে অসংখ্য বৈদ্যুতিক খুঁটি থাকলেও বাতি জ্বলে হাতেগোনা কয়েকটিতে। বটতল এলাকার বেশ কিছু স্থান অন্ধকারে, এলাকাবাসীকে মোবাইলে টর্চ জ্বালিয়ে পথ চলতে দেখা গেছে। মাদ্রাসা গেইট দিয়ে গলিতে ঢুকতেই সড়কবাতি নেই। কোথাও কোথাও ঘুটঘুটে অন্ধকারে ব্যবসায়িক দোকানপাট ও বাসাবাড়ির নিজস্ব বৈদ্যুতিক বাতির আলোয় পথচারীদের চলাচলে একমাত্র ভরসা। তবে ১২ অক্টোবর নাজিরপাড়ার বিভিন্ন স্থানে বিকেল ৪টায় দিনের আলোতে বাতি জ্বলতে দেখা যায়।

পতেঙ্গা নিজাম মার্কেট এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা মো.সেলিম বলেন, এলাকায় সড়কবাতি থাকলেও সব বাতি জ্বলে না। একটু বাতাস বা বৃষ্টি হলে কিছু লাইট জ্বলে, কিছু নষ্ট হয়ে যায়। ওয়ার্ড কার্যালয়ের দায়িত্বে থাকা বিদ্যুৎ বিভাগের আরও নিয়মিত তদারকি দরকার। আমরা কাউন্সিলরের বাসার কাছাকাছি থাকার কারণে কিছুটা সুযোগ-সুবিধা পেলেও অবহেলিত রয়েছে নাজিরপাড়া, ফুলছড়ি পাড়া, হিন্দুপাড়া ও ডেইলপাড়ার বাসিন্দারা।

বিজয়নগর এলাকায় একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সড়কে বাতির বিষয়ে কেউ অভিযোগ করলে সিটি কপোরেশনের বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বে থাকা লোকজন বৈদ্যুতিক খুঁটিতে নতুন লাইট লাগালে কিছুদিন সড়কে বাতি জ্বলে। তারপর ৩-৪ মাস আর কোন খবর থাকে না। কয়েক মাস পর হঠ্যাৎ করে সড়কে বাতি জ্বলা আসলে স্থায়ী সমাধানের মধ্যে পড়ে না। সিটি কপোরেশনে নিয়মিত তদারকির অভাবে লাইটগুলো নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তীতে আবার অভিযোগ করে ফোন দিয়ে তাদের আনতে হয়।

রিকশাচালক মো. জামাল বলেন, ‘রাতের অন্ধকারে যাত্রী নিয়ে রিকশা চালাতে অনেক সময় বিপদে পড়তে হয়। বিশেষ করে নাজিরপাড়া মসজিদ গলি, ফুলছড়ি পাড়া ও ফুলছড়ি পাড়া স্লাক রোডে এবং বটতল এলাকায় বেশি অন্ধকার। কোন কারণে বিদ্যুৎ না থাকলে যাত্রীরা মোবাইলে টর্চ জ্বালিয়ে রাখলে আমি রিকশা চালাই।’

বিভিন্ন সমস্যার ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে দক্ষিণ পতেঙ্গার ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছালেহ আহমেদ চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে আমি এ পর্যন্ত ১ হাজার লাইট লাগিয়েছি। সড়কে বিদ্যুতের সমস্যাগুলো সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুৎ বিভাগের ইঞ্জিনিয়ার, সুপারভাইজার ও কর্মচারী ওনারা দেখেন। মানুষ যেন অনায়াসে চলাফেরা করতে পারে এজন্য মাইজপাড়া কবরস্থানেও নতুন করে ৫টি লাইট লাগিয়েছি। সব স্থানে লাইট লাগানো হচ্ছে। আমার কাছে লাইট জমা আছে, কিন্তু আমি কাউকে দিচ্ছি না— এমন কোন অভিযোগকারী থাকলে আমাকে বলেন।’

কাউন্সিলর বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন উন্নয়নের বিষয়ে সড়ক আলোকায়ন করতে, বর্জ্য অপসারণ করতে,রাস্তার উন্নয়ন, হোল্ডিং টেক্স দিতে হয়। পতেঙ্গা এলাকার কয়জন মানুষ হোল্ডিং ট্যাক্স দিচ্ছে? আমার অ্যান্টি একটি মহল আমার পিছনে ওঠেপড়ে লেগেছে।’

কাউন্সিলর ছালেহ আহমেদ বলেন, ‘দোষ ধরলে অনেক ভাবে দোষ ধরা যায়। কারও কোন অভিযোগ থাকলে সরাসরি আমাকে জানাবে, সিটি কপোরেশনকে জানাবে। আমি কাজ না করলে তখন তারা অভিযোগ করুক।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!