পতেঙ্গায় পশুরহাটে বাধা বৈরী আবহাওয়া ও যানজট

কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কায় দুই ইজারাদার

বৈরী আবহাওয়া, ফুটপাত দখল ও সড়কে অতিরিক্ত ভারী যানবাহনের চলাচলের কারণে চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা এলাকায় পশুরহাটের গরু ব্যাপারিসহ বিপাকে পড়েছে দুই ইজারাদারও। বুধবার (৭ আগস্ট) কাটগড় সড়ক থেকে প্রশাসনের গরু ও ছাগল উচ্ছেদ করা নিয়ে চলছে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এতে পশুরহাটে বেচাকেনায় চলছে ধীরগতি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা গরু ব্যাপারিদের আর্থিক ক্ষতিসহ দুই ইজারাদার প্রায় কোটি টাকা লোকসানের আশঙ্কা করছে। সরেজমিনে পতেঙ্গা থানার চসিকের দুটি অস্থায়ী পশুরহাট কাটগড় ও স্টিল মিলস বাজারে এ দৃশ্যটি দেখা যায়।

দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) সকাল থেকে কাটগড় এলাকায় যানজট তেমন ছিল না। পশুরহাটে রয়েছে প্রচুর গরু ও ছাগল। গরু বেশি থাকলেও সেই অনুসারে নেই ক্রেতা। ব্যাপারি কেউ কেউ গরু ও ছাগল বিক্রি করছে। সকাল থেকে ট্রাকে ট্রাকে আসছে গরু। বেচাকেনায় কম থাকায় বেপারীরা অনেকেই অলস সময় পার করছে। অনেককেই ওই স্থানে দুপুরের রান্না করে খাবার খেতে দেখা যায়।

বগুড়া থেকে গরু নিয়ে এসেছেন ব্যাপারী রশিদ হোসেন। তিনি বলেন, দু’দিন আগে ছোট ও বড় ১৫টি গরু নিয়ে এসেছি। কিন্তু মঙ্গলবার পাঁচটি বিক্রি করেছি। বৈরী আবহাওয়া ও সড়কে অতিরিক্ত গাড়ি চাপ থাকায় গতবারের চেয়ে এবার বিক্রি খুবই কম। ঈদের বাকি তিনদিন। এর মধ্যে বাকি সময়ে গরুগুলো বিক্রি করতে না পারলে লাখ টাকা লোকসান গুণতে হবে।

একাধিক গরু ব্যাপারির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতবারের চেয়ে এবারও দাম ক্রেতাদের নাগালে রয়েছে। কাটগড় ও স্টিলমিলস বাজারে বগুড়া, রাজশাহী, নওগাঁসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গরু নিয়ে এনেছে ব্যাপারিরা। কিন্তু রাস্তায় অতিরিক্ত যানজট ও প্রশাসনের উচ্ছেদ অভিযানের কারণে বেচাকেনা তেমন হয়নি। সামনে যদি এ পরিস্থিতি হয় তাহলে লাভের চেয়ে লোকসান গুণতে হবে বেশি। ৪-৫ হাজার টাকার লাভের আশায় চট্টগ্রামে গরু নিয়ে আসছি। এক্ষেত্রে প্রশাসন ও স্থানীয় ফুটপাত দখলদাররা সহযোগিতা করে তাহলে লোকসান থেকে মুক্তি মিলতে পারে বলে জানান।

পতেঙ্গায় পশুরহাটে গরু বেশি থাকলেও সেই অনুসারে নেই ক্রেতা।
পতেঙ্গায় পশুরহাটে গরু বেশি থাকলেও সেই অনুসারে নেই ক্রেতা।

স্টিলমিলস পশুরহাটের ইজারাদার কাজী আনোয়ার হাফিজ বলেন, গত দু’দিন বেচা ভাল হয়েছে। গতকাল একটু কম হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিন ট্রাকে ট্রাকে আসছে গরু। দাম কম। ক্রেতা কম থাকায় একটু চিন্তিত। কোরবানির আর মাত্র তিনদিন বাকি। এ সময়ের মধ্যে ভালভাবে বিক্রি বাড়াতে না পারলে ইজারার টাকা, ডেকোরেশনের বিল, ভলান্টিয়ার ব্যয় ও অন্যন্য খরচসহ মেটাতে প্রায় ৪০-৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান।

কাটগড় পশুরহাট ইজারাদার হাজী মো. আবুল হোসেন বলেন, প্রশাসনের সড়ক থেকে উচ্ছেদের ঘটনায় ক্রেতারা আতঙ্ক ছিল। যার কারণে গতকাল তেমন বিক্রি হয়নি। হাটে প্রচুর গরু রয়েছে। কিন্তু ক্রেতা নেই। দামও ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে আছে। কম টাকায় ভাল গরু-ছাগল কিনতে পারছে। এতে ব্যাপারিরাও ৪-৫ হাজার টাকা লাভে বিক্রি করছে।

তিনি আরও বলেন, বৈরী আবহাওয়া ফুটপাতে অবৈধ টমটম গাড়ি ও ডিপোর ভারী যানবাহনের কারণে চলাচলের কারণে গত দু’দিন ধরে বেচাকেনা খুব কম। ঈদের বাকি তিনদিন। সমস্যা সমাধান না হলে একদিকে ক্ষতিগ্রস্থ হবে বেপারীরা, অন্যদিকে প্রায় ৪০-৫০ লাখ টাকা লোকসান গুণতে হবে।

ঘটনাস্থলে থাকা মহানগর পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (বন্দরজোন) মো. হামিদুল আলম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, গতকাল কাটগড় পশুরহাটে সড়ক থেকে যানচলের বিঘ্ন ঘটায় কিছু গরু সরিয়ে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার এখানকার যানচলাচলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ইজারাদার ও গরু ব্যাপারিরা কোন ধরনের সমস্যা সমাধানে পুলিশ পাশে থাকার কথা জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, ১ আগস্ট থেকে শুরু হয় কোরবানীর পশুরহাট। কাটগড় পশুহাটের ইজারা নেয় হাজী মো. আবুল হোসেন। এটি কাটগড় মোড় মন্দির গেইট থেকে ৪১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অস্থায়ী কার্যালয় ও পতেঙ্গা সিটি করপোরেশন স্কুল ও কলেজ মাঠ ও রোড। অপরদিকে স্টিলমিলস পশুরহাটের ইজারা নেয় কাজী আনোয়ার হাফিজ। এটি স্টিলমিলস বাজারের পূর্বদিকে খালপাড় এলাকা (যানচলাচল ব্যাতীত) স্থান। এছাড়া সল্টগোলা ও পতেঙ্গা বাটারফ্লাই পার্কেও চসিকের দুটি পশুরহাট রয়েছে।

আজাদ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!