পতেঙ্গায় জুলাইয়ে টার্মিনাল চালু হচ্ছে ৫ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের আশা নিয়ে

একসঙ্গে সাড়ে ৪ হাজার টিইইউএস (টোয়েন্টি ফিট ইকুইভিলেন্ট ইউনিটস) কনটেইনার রাখার ইয়ার্ড নিয়ে আগামী জুলাইয়ে প্রথম সপ্তাহে চালু হবে চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি)। যেখানে বছরে ৫ লাখ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং হবে বলে আশা করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

তবে সৌদি আরব, আরব আমিরাতের দুবাই, ভারত ও সিঙ্গাপুরের চার প্রতিষ্ঠান পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) অপারেশনের কাজ পরিচালনা করতে চাইলেও এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি কোনো প্রতিষ্ঠানকেই। এর মধ্যে রয়েছে সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল, দুবাইয়ের ডিপি ওয়ার্ল্ড, ভারতের আদানি পোর্ট অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোন লিমিটেড ও সিঙ্গাপুরের পিএসএ।

শেষ পর্যন্ত কারা পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনা করবে সেটি নির্ধারণ করা হবে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকেই। তাও আগামী জুনের মধ্যে হতে পারে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, দেশের প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পটির নির্মাণকাজ ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০২২ সালের জুলাই থেকেই শুরু হবে অপারেশনাল কর্মকাণ্ড। টার্মিনালটির নির্মাণকাজ শেষ হলে এর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করবে আন্তর্জাতিক বেসরকারি অপারেটর। এতে কনটেইনার হ্যান্ডলিং ক্ষমতা হবে বছরে ৪ লাখ ৫০ হাজার টিইইউএস।

এ প্রকল্পে ৫৮৩ মিটার কনটেইনার টার্মিনালে তিনটি জেটি, ২০৪ মিটারে ডলফিন জেটি, ৮০ হাজার বর্গমিটার আরসিসি পেভমেন্ট/ইয়ার্ড, ৪২০ মিটার ফ্লাইওভার, ১.২০ কিলোমিটার চার লেইনের রাস্তা নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। অফিস বিল্ডিংসহ অন্যান্য নির্মাণকাজও শেষের দিকে। এছাড়া টাগবোট, পাইলট বোট, স্পিট বোট, পেট্রোল পিক-আপ কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যে।

পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) পদ্ধতিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের আওতাধীন প্রকল্পটির জন্য আন্তর্জাতিক মানের বেসরকারি অপারেটর নিয়োগের উদ্দেশ্যে ‘ইকুইপ, অপারেট অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স অব পিসিটি অন পিপিপি মডেল’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে যার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে বর্তমানে ৩২ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং হচ্ছে। ২০৩১ সালে ৫৮ লাখ ১৯ হাজার একক ও ২০৪৩ সালে ৭৫ লাখ ৯৭ হাজার একক কনটেইনার হ্যান্ডলিং সামাল দিতে হবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে।

পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মিজানুর রহমান সরকার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের নির্মাণকাজ ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। আগামী জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহেই অপারেশনে যাওয়া যাবে। তবে চার দেশের চারটি সংস্থা অপারেটর হিসেবে কাজ করতে চায় পিসিটির। যা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে সিলেক্ট করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘বন্দরের মূল জেটির চেয়ে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে কম সময়ে জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে। পিসিটির তিনটি জেটিতে একই সঙ্গে ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে। এছাড়া এ জেটির সঙ্গে সড়কের কানেক্টিভিটি খুবই ভাল।’

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপারেটরদের পেশাদারিত্বের জায়গাটিও অনেক বেশি শক্তিশালী। পিসিটির নির্মাণকাজ সব মিলিয়ে প্রায় ৯০ শতাংশ শেষ হয়ে গেছে।’

২০১৭ সালের ১৩ জুনে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থে বাস্তবায়নাধীন পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল শীর্ষক প্রকল্পটি ১ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে অনুমোদিত হয়। তখন এর বাস্তবায়নে সময়সীমা নির্ধারিত ছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরের পক্ষ থেকে প্রাক্কলিত ব্যয় ১ হাজার ৩৯৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা এবং প্রকল্পের মেয়াদ ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব করে আরডিপিপি পাঠানো হয়। প্রাক-সমীক্ষা অনুযায়ী টার্মিনালটির বার্ষিক পরিচালনা ব্যয় ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

টার্মিনালটি পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে গেলে একসঙ্গে তিনটি জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো-নামানোর সুবিধা থাকবে। এতে বছরে সাড়ে চার লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা যাবে। এছাড়া তেলবাহী জাহাজ ভেড়ানোর সুবিধাও থাকবে। সাড়ে নয় মিটার ড্রাফটের (জাহাজের পানির নিচের অংশ) এবং ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভেড়ানো যাবে এই টার্মিনালে।

পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনী। শতভাগ কাজ শেষে তারা চট্টগ্রাম বন্দরকে টার্মিনালটি বুঝিয়ে দেবে।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!