পতেঙ্গার দুই ভবন নিয়ে মানুষের ভয়, বৃদ্ধের মৃত্যুর আগে হাত ভাঙল যুবকেরও

চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গার কাটগড় এলাকার ওসিএল গলির বাসিন্দাদের জন্য মৃত্যুফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে জরাজীর্ণ দুই বহুতল ভবন। জুয়েল ম্যানসন ও জননী কুঞ্জ নামের ভবন দুটি থেকে প্রতিনিয়ত খসে পড়ছে আস্তর। সম্প্রতি একটি ভবনের আস্তর খসে পড়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। এর আগে হাত ভাঙে এক ব্যক্তির। এমন দুর্ঘটনার পরও ভবন দুটির ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

পতেঙ্গার দুই ভবন নিয়ে মানুষের ভয়, বৃদ্ধের মৃত্যুর আগে হাত ভাঙল যুবকেরও 1

জানা যায়, গত ৪ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে জুয়েল ম্যানসনের চতুর্থ তলা থেকে আস্তর খসে পড়ে। এতে লাল চান্দ মিয়া (৫৫) নামের এক বৃদ্ধ গুরুতর আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান স্থানীয়রা। ওইদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা যান তিনি। এর প্রায় ৮ মাস আগে জননী কুঞ্জ থেকে আস্তর খসে পড়লে এক যুবকের হাত ভেঙে যায়।

নিহত লাল চান্দ মিয়া নেত্রকোনা জেলার মদন থানার গোবিন্দ গ্রামের মৃত মোমেনের ছেলে। তিনি পতেঙ্গা থানার কাটগড় ওসিএল গলিতে পরিবার নিয়ে থাকতেন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পতেঙ্গা থানার কাটগড় মোড় থেকে ১০০ ফুট দূরত্বে ওসিএল ডিপো। এ ডিপোর পাশঘেঁষে রয়েছে ওসিএল গলি। পাঁচ ফুটের সরু রাস্তার এ গলিতে প্রায় ১০ হাজার মানুষের বসবাস। গলি থেকে ৩০ ফুট ভেতরে গেলেই দেখা যাবে চার তলার জরাজীর্ণ ‘জুয়েল ম্যানসন’ ও তিন তলার ‘জননী কুঞ্জ’। দুটি ভবনের বারান্দাসহ চারপাশে আস্তর খসে ঝুলছে। বেশ কিছু স্থানে আস্তর খসে গিয়ে লোহার রড বেরিয়ে এসেছে। দীর্ঘদিন ধরে সেখানে ঝুঁকি নিয়ে থাকছে ভাড়াটিয়া। এছাড়া প্রতিদিন পথচারীদের চলাচল করতে হয় ঝুঁকি নিয়ে।

জানা যায়, জুয়েল ম্যানসনের মালিক এমএ মনছুর (৬৫)। তিনি আনোয়ারার তৈলারদ্বীপ সিকদার বাড়ির মৃত হাজী ওবায়দুল করিমের ছেলে। আর জননী কুঞ্জের মালিক মো. এজহার মিয়া (৯০)। তিনি বন্দর থানার মৃত সালেহ আহম্মদের ছেলে।

স্থানীয়রা জানান, ভবন দুটি অনেক পুরাতন। দীর্ঘদিন কোনো ধরনের সংস্কারকাজ না করায় ভবন দুটির এমন দৈন্যদশা। ভবন থেকে আস্তর খসে প্রতিদিন কোনো না কোনো পথচারী আহত হচ্ছেন। এছাড়া আস্তর খসে পড়ে মৃত্যুর ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে। কেউ আহত হলে মালিকপক্ষ গোপনে তা সমঝোতা করে ফেলে। ফলে কেউ মুখ খোলে না এ বিষয়ে। কয়েক মাস আগে বিল্ডিং থেকে আস্তর খসে পড়লে এক যুবকের হাত ভেঙে যায়। এরপর মালিকপক্ষ তাকে কিছু টাকা দিয়ে ঘটনা মীমাংসা করে ফেলে। সম্প্রতি বিল্ডিংয়ের আস্তর খসে পড়ে লাল চান্দ মিয়া নামের এক ব্যক্তি মারা গেলে তার গ্রামের বাড়িতে লাশবহনের খরচ দিয়ে ওই ঘটনাও মীমাংসা করে ফেলে। পরে থানায় আর মামলা করেনি নিহতের পরিবার।

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিষয়ে বক্তব্য নিতে সরেজমিন গিয়ে দুই ভবনের মালিকপক্ষের কাউকেই পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিন বলেন, ‘ওসিএল গলিতে জুয়েল ম্যানসন ও জননী কুঞ্জ নামের দুটি ভবনই ঝুঁকিপূর্ণ। সম্প্রতি এক ভবনের আস্তর খসে পরে এক বৃদ্ধ মারা গেছেন। মামলা করলে ব্যবস্থা নিতাম। পরে নিহতের পরিবারের কেউ মামলা আসেনি।’

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ইমারত নির্মাণ কমিটির চেয়ারম্যান আবু ঈসা আনসারী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি কাল অথরাইজ অফিসারকে পাঠিয়ে খোঁজ নেব। ঘটনার সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!