পটিয়ায় ৩ যুবলীগ নেতাকে বহিষ্কার করলো আওয়ামী লীগ, বিদ্রোহী হওয়ায় পদ হারালেন ১৪ জন

চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ১৪ বিদ্রোহী প্রার্থীকে বহিষ্কার করেছে আওয়ামী লীগ। ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হওয়ায় উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ-যুবলীগের এ ১৪ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বহিষ্কারের খবর নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, নৌকার বিপক্ষে অবস্থান করে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করায় তাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

বহিষ্কার হওয়া ১৪ জনের মধ্যে ৩জন রয়েছেন যুবলীগের বিভিন্ন পদে। যুবলীগ নেতাদের আওয়ামী লীগ বহিষ্কার করতে পারে কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মফিজুর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মূল সংগঠন। যুবলীগ হলো অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। কাজেই মাদার সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ যে কোন নেতা কর্মীকে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ করলে বহিষ্কার করতে পারেন। তবে কেন্দ্রীয় যুবলীগ কি নির্দেশনা দিয়েছেন তাদেরকে তা আমার জানা নেই। এর বাইরে আমি আর কিছু বলতে চাই না।’

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সভাপতি ও সংসদ সদস্য মোসলেম উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জরুরি সভায় উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, সহসভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, প্রদীপ দাশ, দেবব্রত দাশ দেবু, বিজন চক্রবর্তী, সিরাজুল ইসলাম, পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম সামশুজ্জামান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক হারুনুর রশীদ, নাছির চেয়ারম্যান প্রমুখ।

বহিষ্কৃতরা হলেন, আশিয়া ইউনিয়নের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বেলাল উদ্দিন চৌধুরী ও আশিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য মাঈনুল হক রাশেদ, হাইদগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক বি এম জসিম, কুসুমপুরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকারিয়া ডালিম ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুর উর রশীদ চৌধুরী এজাজ।

এছাড়া কোলাগাঁও ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মাহবুবুল হক চৌধুরী ও কোলাগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য কাসেম রাসেল, কেলিশহর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নিখিল দে, জঙ্গলখাইন ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি সাহাদাত হোসেন সবুজ, উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক দিদারুল আলম, ধলঘাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক শফিউল আলম বাদশা, জিরি ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল কালাম ভোলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য আবুল কালাম বাবুল, ছনহরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী আবু জাফর।

এ ব্যাপারে পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক হারুনুর রশীদ বলেন, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় দলের গঠনতন্ত্র অনুসারে জেলা আওয়ামী তাঁদের বহিষ্কার করেছে। আমরা দফায় দফায় বৈঠক করে তাদেরকে অনুরোধ করেছি যাতে তারা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোটের মাঠে না নামে। কিন্তু তারা আমাদের কথা রাখেননি।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি আ ম ম টিপু সুলতান চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ মুরব্বি সংগঠন হিসেবে বিদ্রোহী যুবলীগের প্রার্থীদের বহিষ্কারের নির্দেশনা দিতেই পারে। কেন্দ্রীয় যুবলীগের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক গত মাসে নির্দেশনা দিয়েছেন লিখিতভাবে। এর বাইরে আমি আর কিছু বলতে রাজি নই।

অপরদিকে গত ২১ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন দলের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মইনুল হোসেন খান নিখিল। এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যুবলীগের কোন স্তরের নেতা কর্মী যদি বিদ্রোহী প্রার্থী বা নৌকা প্রতীকের বিরোধিতা বা সরাসরি নৌকার বিপক্ষে কাজ করলে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তাদেরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করতে পারবেন। তবে কেন্দ্রীয় যুবলীগের নির্দেশনা ব্যাতিত কোন স্তরের নেতা কর্মীকে বহিষ্কার বা অব্যাহতি দেয়া যাবে না বলে স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ নিয়ে পটিয়া উপজেলা জুড়ে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতা কর্মীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

পটিয়া উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক হাসান উল্লাহ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ যুবলীগের কোন নেতাকে বহিষ্কার করতে পারে কিনা আমার জানা নেই। তবে আগামী শনিবার ১১ ডিসেম্বর উপজেলা যুবলীগের বর্ধিত সভা আহবান করা হয়েছে। সে বৈঠকে আমরা তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিব।

এক প্রশ্নের জবাবে হাসান উল্লাহ চৌধুরী বলেন, কোলাগাঁও ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মাহবুবুল হক চৌধুরী ও জঙ্গলখাইন ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি সাহাদাত হোসেন সবুজ ও দিদারুল আলম দলীয় নির্দেশ অমান্য করে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আমরা তাদেরকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের মাধ্যমে বিদ্রোহী প্রার্থী হতে সরে আসতে অনুরোধ করেছিলাম।

কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!