শিশুদের একা ডেকে যৌন হয়রানি করতেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ

পটিয়ায় অধ্যক্ষ আটক, এলাকায় বিক্ষোভ

শিশু শিক্ষার্থীদের রুম পরিষ্কার করার কথা বলে একা ডাকেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। এরপর তার ওপর চলে যৌন নিপীড়ন। এভাবেই বারবার বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের নিজের বিকৃত যৌনতার শিকার বানাতেন এই মাদ্রাসা শিক্ষক। এক শিক্ষার্থী মাকে জানিয়ে দেবার পর এলাকায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

ঘটনাটি ঘটেছে পটিয়ার জিরিতে। শিশুদের শ্লীতাহানির অভিযোগে মুহাম্মদিয়া তালিমুল কোরআন নূরানী মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতের নাম ফারুক চৌধুরী। তিনি জিরি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মৌলানা মাহমুদ মিয়া চৌধুরীর পুত্র।

এ নিয়ে গতকাল বুধবার সকাল ১০-১২ টা পর্যন্ত বিক্ষুব্ধ জনতা ও অভিভাবকরা মাদ্রাসা ঘেরাও করে অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে রাখে এবং মাদ্রাসার জানালা ও চেয়ার টেবিল ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে পটিয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত করে অবরুদ্ধ অধ্যক্ষকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন।

শ্লীলতাহানির শিকার বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ফারুক চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে শিশু শিক্ষার্থীদের শ্লীলতাহানি করে আসছেন। সর্বশেষ বৃহস্পতিবারও দুই শিশু শিক্ষার্থীর সাথে তিনি একই আচরণ করেন। ভিকটিম শিশু তার মাকে জানালে তা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিক্ষুব্ধ অভিভাবক ও এলাকাবাসীরা সকাল ১০টায় মাদ্রাসা ঘেরাও করে অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে এবং ভাঙচুর চালায়।

খবর পেয়ে পটিয়া থানার উপ-পরিদর্শক মোক্তার আহমদসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ সময় পুলিশ অধ্যক্ষকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।

সরেজমিন গিয়ে কথা বললে হয়রানির শিকার শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমাদেরকে একজন করে তিনি তার রুম পরিষ্কার করার কথা বলে ক্লাসরুম থেকে ডেকে আনেন। সেখানে জড়িয়ে ধরে তাকে শ্লীলতাহানি করে। আমরা তা লজ্জায় এতদিন প্রকাশ করিনি। বর্তমানে তিনি বারবার এসব করছেন। বিশেষ করে গত বৃহস্পতিবার একজনকে খুব বাজেভাবে শরীর স্পর্শ করায় সে তার মাকে বিষয়টি বলে দেয়।

এক অভিভাবক বলেন, আমার ভাতিজিরও শ্লীলতাহানি করেছেন এ হুজুর নামে কলংকিত ব্যক্তি। আমরা তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী অভিভাবক বলেন, এভাবে যদি ছোট ছোট শিশুদের উপর বর্বর আচরণ করা হয় তাহলে আমাদের মেয়েদের আমরা পড়ানোর জন্য কোথায় পাঠাবো। আমরা তার বিচার চাই।

মাদরাসার সহকারী শিক্ষক মুহাম্মদ হোসাইন বলেন, আমি ৯ মাস ধরে এখানে শিক্ষকতা করছি। এ সময়কালে ঘর ঝাড়ু দেওয়ার কথা বলে তিনি শিশু শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সময়ে রুমে ডেকে নেন।

মাদরাসার আরেক শিক্ষক জিয়াউর রহমান বলেন, আমি ৩ বছর এ মাদরাসায় শিক্ষকতা করছি। কিন্তু অধ্যক্ষের এ খারাপ আচরণ দেখেও না দেখার ভান করেছি। কারণ এ নিয়ে বেশি এ নিয়ে কথা বললে তিনি আমাকে চাকরিচ্যুত করতেন।

জিরি ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. হাসান বলেন, এ ন্যাক্কারজনক ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের নেই। তিনি একজন ৬০ বছর বয়সী লোক শিশুদের সাথে যে আচরণ করেছেন তা পশুর চেয়ে ও জঘন্য অপরাধ।

পটিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘অধ্যক্ষের শ্লীতাহানির খবর প্রচারিত হওয়ায় এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে তাকে ঘেরাও করে রাখে। আমরা খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসি। নির্যাতিতদের পক্ষে থানায় মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি চলছে।’

এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!