চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার কচুয়াই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইনজামুল হক জসিমের বিরুদ্ধে পটিয়া পৌরসভার কর্মচারীকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি চাঁদা দাবির অভিযোগও উঠেছে এই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
এ নিয়ে বুধবার (২৭ এপ্রিল) চেয়ারম্যান জসিমসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে পটিয়া থানায় এজাহার দায়ের করেছেন পৌরসভার কনজারভেন্সি ইন্সপেক্টরের দায়িত্বে থাকা অজিত কুমার দে। এছাড়া আরও অজ্ঞাত ১৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।
চেয়ারম্যান জসিম ছাড়া বাকি ছয় অভিযুক্ত হলেন নাসির উদ্দিন (৪৫), মো. সাইফুদ্দিন (৩০), নজরুল (৩৮), ফোরকান (৩৬), মহিউদ্দিন (৪০) ও বোরহান (৩৩)।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, ৩০ বছর ধরে পটিয়া পৌর এলাকার ময়লা-আবর্জনা পটিয়া থানার বিসিক শিল্পনগরীর আরাকান রোডের উত্তর পাশে পরিত্যক্ত জায়গায় ফেলা হচ্ছে। বুধবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরের দিকে পৌরসভার কর্মচারী মিন্টু বসাক ময়লা নিয়ে ফেলতে গেলে বাধা দেন চেয়ারম্যান জসিম ও তার সহযোগীরা।
এ সময় জসিম ও তার লোকজন ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দেওয়ায় মিন্টুসহ অজিত ও শাহেদকে বেধড়ক মারধর করে তারা। পরে চাঁদার টাকা না দিলে ‘পরিণাম ভালো হবে না’ বলে জানায় তারা। মারধরে মিন্টু গুরুতর আহত হন বলে উল্লেখ করা হয় এজাহারে।
পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামাল উদ্দিন বেলাল বলেন, ‘পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বিসিক শিল্প এলাকায় ময়লা ফেলতে গেলে চেয়ারম্যান ইনজামুল হক জসিম এসে বাধা দেয়। এ সময় তিনি ও তার লোকজন চাঁদা দাবি করেন এবং পরিচ্ছন্নকর্মীকে মারধর করেন। এ ব্যাপারে থানায় একটি লিখিত এজাহার দেওয়া হয়েছে।’
চেয়ারম্যান ইনজামুল হক জসিম প্রথমে ঘটনাটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের লোকজন উদ্যেশ্য প্রনোদিত দাবি করে বলেন, ‘ঘটনাটি বানানো। সড়কের পাশ্ববর্তী এলাকায় পৌরসভার ময়লা ফেলা নিয়ে ঘটনাটির বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অভিযোগ থানায় হয়নি। আমি মেয়র ও এমপিকে অবহিত করেছি। এ ব্যাপারে আগামী শুক্রবার উভয় পক্ষের একটা বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।’
তবে চেয়ারম্যান জসিম থানায় লিখিত অভিযোগে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের মধ্যে ঘটনাস্থলে দুইজন ছিলেন স্বীকার করে বলেন, ‘বাকি লোকজন এসময় ঘটনাস্থলে ছিলেন না।’
লিখিত অভিযোগের ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান জসিম জানান, ‘অভিযোগ লিখা হয়েছে তবে থানায় জমা দেওয়া হয়নি।’
তবে এ প্রতিবেদকের কাছে থানার সিল দেওয়া রিসিভ কপি হাতে আছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘থানার ওসি ও মেয়র তো আমার কাছে স্বীকার করেছেন কোনো অভিযোগ তারা গ্রহন করেননি। রাগের মাথায় হয়তো তারা অভিযোগটি লিখে ফেলেছেন। এরপর সবার সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে তা আর জমা দেওয়া হয়নি।’
৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘কয়েক দিন আগে রাতের আঁধারে পৌরসভার একটি ট্রাক সড়কে ময়লা ফেলে চলে যান। সেদিন রাতে তিনটি বাইক দুর্ঘটনায় পড়ে। রাতে আমার ইউনিয়নের এক সদস্য আমাকে ফোনে বিষয়টি জানালে আমি সাথে সাথে মেয়রকে অবহিত করি। তারপর দিন আবারো সড়কের পাশে ময়লার গাড়ি ময়লা ফেলতে আসলে আমরা বাঁধা দিই।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের পটিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারিক রহমান বলেন ‘এটি একটি ছোটখাট ঘটনা। ভুল বুঝাবুঝি। বড় কোনো ব্যাপার না।’
লিখিত অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘অভিযোগ মানে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় আর হুমকি হয়েছে। এ অভিযোগ কি যে করব তা বুঝতে পারছি না। অভিযোগ মানে হট টকে যা হয় আর কি। অভিযোগ দেওয়ার মতো না।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হুমকি-ধমকি দিয়েছে এমন না যে মেরে ফেলার। বলা হয়েছে চর থাপ্পড় মেরে দাঁত ফেলে দেয়া মাত্র।
এ বিষয়ে মেয়র মো. আইয়ুব বাবুল বলেন, ‘এ ঘটনায় এখন আমি কোনো বক্তব্য দিব না। পরে দেখা যাবে।’
এমএফও