পটিয়ায় ডাক্তারের ওপর হামলা ও হাসপাতাল ভাঙচুরের নেপথ্যে

চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ এনে চিকিৎসকের উপর হামলা ও হাসপাতাল ভাংচুর করেছে রোগীর স্বজনরা। শুক্রবার (৯ অক্টোবর) সকাল সাড়ে দশটায় এ ঘটনা ঘটে।

পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) জিয়াউদ্দিন মো. সাকিব বলেন, শুক্রবার সকাল ১০টা ৪০ মিনিটের দিকে বড়লিয়া ইউনিয়নের ওকন্যারা গ্রামের ইমরান হোসনের দেড় বছর বয়সী ছেলে জুবায়েরকে পুকুর থেকে উদ্ধার করে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটিকে ইসিজি করে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর শিশুটিকে স্বজনরা বাড়িতে নিয়ে যায়।

শিশুটিকে বাড়িতে নেওয়ার পর কে বা কারা বলতে শুরু করে শিশুটি এখনও বেঁচে আছে। হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়ার প্রায় ঘণ্টা পর স্বজনরা শিশুটিকে বেঁচে আছে বলে আবারও হাসপাতালে নিয়ে আসে। কর্তব্যরত চিকিৎসক ওই শিশুকে আবারও মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় পূর্বে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ এনে শিশুর স্বজনরা আরও ৪০-৪৫ জন লোক নিয়ে এসে চিকিৎসককে মারধর ও হাসপাতালে ভাংচুর চালায়।

শিশু জুবায়েরের চাচা মোহাম্মদ ইরফান বলেন, শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টায় আমার ভাতিজাকে পুকুর থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন।কিন্তু ভাতিজাকে বাড়িতে নিয়ে আসার পর দেখি সে নড়াচড়া করছে। আমরা আবারও তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসকরা আমাদের পৃর্বের ইসিজি প্রতিবেদন কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলে এবং ডাক্তাররা আমাদের দিকে তেড়ে আসে। তবে ডাক্তারদের উপর কে বা কারা হামলা করেছি আমি জানি না।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার মোহাম্মদ জাবেদ বলেন, পানিতে ডুবে মারা যাওয়া শিশুটি বেঁচে আছে এমন অভিযোগ এনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসারের উপর হামলা করেছে শিশুটির স্বজনরা। এই হামলার অভিযোগে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এদিকে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. জিয়াউদ্দিন মো. সাকিবের উপর হামলার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘পানিতে ডুবে যাওয়া একজন শিশুকে মৃত অবস্থায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন স্বজনরা। যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষে শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করে মৃতদেহ স্বজনদের হস্তান্তর করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।তারা মৃতদেহ নিয়ে বাড়ি গেলে মৃতদেহে পেশির সংকোচন অবলোকন করলে শিশুটির স্বজনরা দলেবলে হাসপাতালে এসে শিশুটি বেঁচে আছে বলে দাবি করতে থাকে এবং চিকিৎসকে বেধড়ক মারধর করে।

ডা. মিনহাজ আরও বলেন, মৃত্যু পরবর্তী ২-৪ ঘণ্টার মধ্যে পেশি সংকোচন অবলোকন করা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এরপরও চিকিৎসককে দায়ী করে এ ধরনের ন্যাক্কারজনক হামলা চিকিৎসকদের স্বাভাবিক চিকিৎসাসেবা প্রদানের ব্যাহত করবে। তিনি হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়ার প্রশাসনের প্রতি দাবি জানান।

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!