নয়ছয় করে পতেঙ্গায় হচ্ছে ওয়াশব্লক নির্মাণ, তদারকি নেই কর্তাদের

চট্টগ্রাম নগরীর বিমানবন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘেঁষে প্রায় ২১ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি ওয়াশ ব্লকের দোতলা ভবনের একতলার আইসিসি কলাম নির্মাণ করা হয়েছে ইটের বক্স বানিয়ে। অথচ সেখানে দেওয়ার কথা ছিল কাঠের সাটারিং। কলামের ঢালাই কাজ ও পুরো ভবনের ব্যবহার হচ্ছে ‘তিন নম্বর’ মানের ইট। ওয়াশব্লকের পাশে দুটি সেপটিক ট্যাংকি বসানোর কথা থাকলেও নির্মিত হয়েছে মাত্র একটি। সম্প্রতি ওই ভবনটির প্রথমতলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে তিন ধাপে। এভাবে হেলাফেলার নির্মাণকাজ নিয়ে ভবনটির স্থায়ীত্ব নিয়েই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।

চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানার বিমানবন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংলগ্ন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাবলিক হেলথ আওতায় প্রকল্পের ‘ওয়াশ ব্লক’ ভবনের চিত্র এটি।

অভিযোগ রয়েছে, থানা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দায়সারা মনোভাব, সাইট ইঞ্জিনিয়ারের তদারকির অভাব এবং বিমানবন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার যোগসাজশে হেলাফেলার মধ্য দিয়েই চলছে ওয়াশব্লকের নির্মাণকাজ। শুধু বিমানবন্দর বিদ্যালয় নয়, উত্তর ও দক্ষিণ পতেঙ্গা এলাকায় চলমান পাঁচটি দোতলা ওয়াশব্লকেরই নির্মাণকাজ চলছে নয়ছয় করে।

জানা যায়, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের অধীনে চট্টগ্রামে নির্মাণ করা হচ্ছে ১২০টি ওয়াশব্লক ভবন। ভবনগুলো নির্মিত হচ্ছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওয়াশরুম হিসেবে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা এলাকায় রয়েছে বিমানবন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পোড়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর পতেঙ্গা এলাকায় হাফিজুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মিরাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাইজপাড়া জালালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওয়াশব্লক।

জানা গেছে, তিন মাস আগে শুরু হয়েছে এই ওয়াশব্লক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ। দ্বিতলবিশিষ্ট প্রতিটি ওয়াশব্লকের ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ লাখ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর। ওয়াশব্লক ভবনটির প্রথম তলা থাকছে তিনটি এবং দ্বিতীয় তলায় থাকছে চারটি টয়লেট। এছাড়া একটি হাত ধোয়ার বেসিনসহ শিক্ষার্থীদের পা ধোয়ার ব্যবস্থাও।

অভিভভাবকরা জানান, প্রায় আড়াই মাস আগে শুরু হয় বিমানবন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওয়াশব্লক ভবনের নির্মাণকাজ। ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে ভবনটি নির্মিত হচ্ছে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে। অল্পবয়সী এক সাব-কনট্রাক্টর দিয়ে পুরো ভবনের নির্মাণকাজ তত্ত্বাবধান করা হচ্ছে। আড়াই মাসে ভবনটি কিভাবে হচ্ছে— তা দেখার জন্য একবারও আসেননি থানা শিক্ষা অফিসার।

ছাদ ঢালাইয়ের সময় সাব-কন্ট্রাক্টরের সঙ্গে ইমোতে কথা বলেই দায় সেরেছেন সাইট ইঞ্জিনিয়ার। এমনকি মূল ঠিকাদারেরও দেখা নেই। জানা গেছে, সেপটিক ট্যাংকি করার কথা ছিল দুটি, সেখানে একটি করেই দায় সারা হয়েছে। ঢালাই ও ভবনের সমস্ত নির্মাণকাজও করা হচ্ছে এসএবি নামের ‘তিন নম্বর’ ইট দিয়ে।

অভিযোগ মিলেছে, ২০ ফুটের একটি ছাদ ঢালাইয়ের কাজে সিমেন্ট ও বালির সংমিশ্রণ করা হয়েছে ৮:১। অথচ সেখানে করার কথা ছিল ৩:১। এর ফলে ভবনটির স্থায়ীত্ব নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকেই।

এদিকে ভবনের সাটারিংবিহীন কলাম ও প্রথম তলার ছাদ তিন ধাপে করার বিষয়ে জানতে চাইলে ঘটনাস্থলে থাকা সাব-কন্ট্রাক্টর মো. আলমগীর বলেন, ‘ড্রয়িংয়ে কলাম করার কথা ছিল ১১ ইঞ্চি। সেখানে আমি ভুলে ১৫ ইঞ্চি করে ফেলেছি। এ কারণে তিনবারে ছাদ ঢালাই শেষ করতে হয়েছে। শুরুতে কলাম করতে সাটারিং ছিল না, তাই ইট দিয়ে বক্স করে কলামে ঢালাইয়ের কাজ করেছি। পরে কাঠ আসায় সাটারিং করে বাকি কলামের কাজ করা হয়েছে।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে থানা শিক্ষা অফিসার (বন্দর) সেলিনা আক্তার বলেন, ‘লকডাউনের কারণে আর যাওয়া হয়নি ওয়াশব্লক ভবনটি পরিদর্শনে। সাইট ইঞ্জিনিয়ারের (রাশেদুজ্জামান) সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয়। উনি তদারকি করছেন।’

তবে সাইট ইঞ্জিনিয়ার রাশেদুজ্জামানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন রায় এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বিমানবন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওয়াশব্লক ভবন নির্মাণ নিয়ে অভিযোগ এই মাত্র শুনলাম।’ এর বাইরে আর কোন্ কোন্ স্থানে এ ধরনের অনিয়ম চলছে সেটা জানানোর জন্য এই প্রতিবেদককে অনুরোধ জানান এই কর্মকর্তা।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি বিমানবন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চলমান ওয়াশব্লক নির্মাণকাজের বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। এটা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে আর কোথাও এ ধরনের অনিয়মের খবর পেলে সেটাও খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মুআ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!