নৌযান ধর্মঘট উঠে গেল খোরাকিভাতার আশ্বাসে, ১০ কোটি টন পণ্য আটকে আছে বন্দরে

১১ দফা দাবিতে চলমান ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছেন পণ্যবাহী নৌযান শ্রমিকরা। খোরাকিভাতার দাবি মেনে নেওয়ায় পণ্যবাহী নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত বৈঠকে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মো. শাহ আলম ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান। উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এবং শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা। ১১ দফা দাবি আদায়ে গত ২০ অক্টোবর রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘট শুরু হয়। বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের আওতাধীন আটটি সংগঠন এ ধর্মঘটের ডাক দেয়।

এই ধর্মঘটের কবলে পড়ে চট্টগ্রাম বন্দরের আউটারে আটকা পড়ে ৬০টি মাদার ভেসেল। এসব জাহাজে রয়েছে ১০ কোটি টন পণ্য। এই মাদার ভেসেলগুলোর প্রতিটিকে চট্টগ্রাম বন্দর ডেমারেজ দিতে হয়েছে ১০ হাজার ডলার করে। সে হিসেবে ৬০টি মাদার ভেসেল গুণতে হয়েছে দৈনিক ৬ লাখ ডলার।

এর আগে ২০১৬ সালে প্রকাশিত গেজেট অনুযায়ী সর্বস্তরের শ্রমিকদের বেতন দেওয়াসহ ১১ দফা দাবি মেনে নেওয়ার সরকারি ঘোষণা না এলে ধর্মঘট প্রত্যাহার করবে না বলে জানিয়েছিল নৌযান শ্রমিক নেতারা। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের আউটারে পণ্য ওঠানামা বন্ধ হয়ে যায়। ১১ দফা দাবি আদায়ে সোমবার (১৯ অক্টোবর) রাত ১২টা থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট ডাকে নৌযান শ্রমিকরা। সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি ঘোষণার পর নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সঙ্গে সম্মতি জানিয়ে ওই ধর্মঘটে অংশ নেয় নৌযান শ্রমিকদের আটটি সংগঠন। এতে মঙ্গলবার সকাল থেকে কোন লাইটারেজ জাহাজ আউটারে না যাওয়ায় বন্ধ থাকে পণ্য ওঠানামা। বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের আওতাধীন আটটি সংগঠন এ ধর্মঘটে অংশ নেয়।

শ্রমিক ফেডারেশনের ১১ দফা দাবিগুলো ছিল—
১. বাল্কহেডসহ সব নৌযান ও নৌপথে চাঁদাবাজি-ডাকাতি বন্ধ করা
২. ২০১৬ সালে ঘোষিত গেজেট অনুযায়ী নৌযানের সর্বস্তরের শ্রমিকদের বেতন প্রদান
৩. ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিং পাস এবং মালিক কর্তৃক খাদ্যভাতা প্রদান
৪. সব নৌযান শ্রমিকের সমুদ্র ও রাত্রিকালীন ভাতা নির্ধারণ
৫. এনডোর্স, ইনচার্জ, টেকনিক্যাল ভাতা পুনর্নির্ধারণ
৬. কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ
৭. প্রত্যেক নৌশ্রমিককে মালিক কর্তৃক নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র ও সার্ভিস বুক প্রদান
৮. নদীর নাব্য রক্ষা ও প্রয়োজনীয় মার্কা, বয়া ও বাতি স্থাপন
৯. মাস্টার/ড্রাইভার পরীক্ষা, সনদ বিতরণ ও নবায়ন, বেআইনি নৌচলাচল বন্ধ করা
১০. নৌপরিবহন অধিদফতরে সব ধরনের অনিয়ম ও শ্রমিক হয়রানি বন্ধ এবং
১১. নৌযান শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

এসব দাবি আদায়ে ২০১৫ সাল থেকে আন্দোলন করে আসছেন শ্রমিকরা। কয়েকটি দাবি পূরণ হলেও অমীমাংসিত ১১ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে ২০১৮ সালে শ্রম অধিদফতরে আবেদন করেন ফেডারেশন নেতারা। যার অনুলিপি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, নৌযান মালিকদের বিভিন্ন সংগঠনসহ সংশ্নিষ্ট সব দফতরে দেওয়া হয়। কিন্তু শ্রম ও কর্মসংস্থান অধিদফতর থেকে সমস্যা সমাধানে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন নেতাদের।

বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) সন্ধ্যা পর্যন্ত চট্টগ্রামের এফএমএস শিপিং লাইনের তিনটি মাদার ভেসেল রয়েছে বন্দরের আউটারে। এমভি জাগোয়ান, এমভি আলকিয়ান, এমভি বার্ড নামে এ তিনটি জাহাজকে দৈনিক ৩০ হাজার ডলার ডেমারেজ দিতে হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে। বিকেলে এই প্রতিষ্ঠানের মালিক জামাল উদ্দিন সিকদার বলেন, ‘এভাবে ডেমারেজ হলে ব্যবসা গুটিয়ে চলে যেতে হবে। এতে বহির্বিশ্বে আমাদের দেশের ভাবমূর্তিও নষ্ট হচ্ছে।’

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান এহসানুল হক চৌধুরী জানিয়েছিলেন, ‘বন্দরের ডেমারেজসহ ব্যবসায়ীদের ক্ষতি অপূরণীয়। এ ধর্মঘট দ্রুত প্রত্যাহার চাই আমরা। বন্দরের আউটারে ৬০টি মাদার ভেসেলে ১০ কোটি টন পণ্য আটকে আছে।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!