নেতা পেটানো পটিয়ার সেই চেয়ারম্যান এবার বরখাস্ত

জেল থেকে বেরিয়েছেন তিনদিন আগে

আওয়ামী লীগ নেতাকে রক্তাক্ত করে গাছের সাথে বেঁধে রাখার ঘটনায় চট্টগ্রামের পটিয়ার হাইদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিএম জসিমকে চেয়ারম্যান পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব একেএম মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত এক আদেশে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

আদেশে বলা হয়েছে, ‘চেয়ারম্যান বি এম জসিমের বিরুদ্ধে আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করায় তার দ্বারা ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষমতা প্রয়োগ প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণে সমীচীন নয়। তার দ্বারা সংঘটিত অপরাধমূলক কার্যক্রম ইউনিয়ন পরিষদসহ জনস্বার্থের পরিপন্থী বিবেচনায় স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন অনুযায়ী তাকে স্বীয় পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।’

গত ২৯ এপ্রিল হাইদগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ইফতার মাহফিলের ব্যানারে গত ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত ও স্বতন্ত্র নির্বাচিত চেয়ারম্যান বি এম জসিমের নাম না থাকায় আওয়ামী লীগ নেতা জিতেন কান্তি গুহের ওপর বরর্বোরচিত হামলা চালিয়ে তাকে মেরে রক্তাক্ত ও আহত করে গাছের সাথে বেঁধে রাখেন। এ ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ভাইরাল হয়ে যায় এবং সারা দেশে নিন্দার ঝড় ওঠে।

ঘটনার দিন রাতেই আওয়ামী লীগ নেতা জিতেন কান্তি গুহের ভাই তাপস কান্তি গুহ বাদী হয়ে ৭ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত ৫-৬ জনকে আসামি করে পটিয়া থানায় মামলা করা হয়। সেদিন ভোর রাতে চেয়ারম্যান বি এম জসিম ও তার ছেলে মুশফিক উদ্দিন ওয়াসিকে গ্রেফতার করেন পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) চার মাসের ও বেশি সময় ধরে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান চেয়ারম্যান জসিম।

এর আগে গত ২৭ জুন স্হানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের এক প্রজ্জাপনে হাইদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবদুর রাজ্জাক চৌধুরী, তছলিমা নুর ও নাছির উদ্দিনকে দিয়ে প্যানেল চেয়ারম্যানের অনুমোদন দেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব জেসমীন প্রধান।

পরদিন ২৮ জুন প্যানেল চেয়ারম্যান বোর্ডে পরিষদটির আরো ছয় সদস্য তাদের অনুসারীদের বোর্ডে না রাখার জের ধরে পরিষদে তালা ঝুলিয়ে দেন।

এরপর গত ৩১ জুলাই পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আতিকুল মামুন স্বাক্ষরিত একটি চিঠি জেলা প্রশাসক বরাবর দেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, হাইদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বি এম জসিমের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য।

সর্বশেষ রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব একেএম মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়— ‘যেহেতু চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলাধীন ১২ নং হাইদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব বদরুদ্দিন মোহাম্মদ জসীম প্র: বিএম জসিম এর বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৩২৩/৩২৫/৩২৬/307/382379/500/৫০৬ (২)/৩৪ ধারায় পটিয়া থানায় দায়েরকৃত মামলা নং-৫৪, তারিখ: ২৯/08/2012 এ গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে আছেন এবং মামলার অভিযোগপত্র বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক আমলে নেওয়ায় স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ এর ৩৪ (১) ধারা অনুযায়ী জেলা প্রশাসক, চট্টগ্রাম ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করেছেন;’

‘যেহেতু, চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলাধীন ১২ নং হাইদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব বদরুদ্দিন মোহাম্মদ জসীম প্র: বিএম জসিম এর বিরুদ্ধে দন্ডবিধির 323/325/326/307/342/379 / 500 /506 (2)/৩৪ ধারায় পটিয়া থানায় দায়েরকৃত মামলা নং-৫৪, তারিখ: ২৯/০৪/২০২২ এ গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে থাকায় এবং মামলার অভিযোগপত্র বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক আমলে নেওয়ায় তাঁর দ্বারা ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষমতা প্রয়োগ প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণে সমীচীন নয় মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে; সেহেতু, চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলাধীন ১২ নং হাইদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের গ্রেফতারকৃত চেয়ারম্যান জনাব বদরুদ্দিন মোহাম্মদ জসীম প্র: বিএম জসিম কর্তৃক সংঘটিত অপরাধমূল কার্যক্রম ইউনিয়ন পরিষদসহ জনস্বার্থের পরিপন্থী বিবেচনায় স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ এর ধারা ৩৪(৪) ধারার অপরাধ সংঘটিত করায় একই আইনের ধারা ৩৪ (১) অনুযায়ী উল্লিখিত ইউপি চেয়ারম্যানকে তাঁর স্বীয় পদ হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!