নেতার আশকারায় শীর্ষ জলদস্যু খুঁজছে যুবলীগের ছায়া

আবার চেনা রূপে উড়িরচরের জাসু বাহিনী

চট্টগ্রামের জলদস্যু কবলিত দ্বীপ উড়িরচরে আবারও সক্রিয় হচ্ছে জলদস্যু বাহিনী। আলোচিত জলদস্যু শাহাদাৎ হোসেন জাসু র‍্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যাওয়ার পর জলদস্যুদের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত এই দ্বীপ ৬ বছর ধরে শান্ত ছিল অনেকটাই। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ফের সক্রিয় হচ্ছে জাসুর সহযোগী জলদস্যুরা।

জাসু বাহিনীর অন্যতম সদস্য রাহাতের নেতৃত্বে সন্দ্বীপের এক জনপ্রতিনিধির ছত্রচ্ছায়ায় নতুন করে উড়িরচরে সংগঠিত হচ্ছে এসব জলদস্যু। রোববার (১৫ নভেম্বর) উড়িরচরে সরকারের এক মন্ত্রীর পরিদর্শন উপলক্ষে আয়োজিত সূধী সমাবেশকে কেন্দ্র করে উড়িরচর ইউনিয়ন যুবলীগের ব্যানারে শোডাউন দিয়ে নিজেদের অবস্থানের কথা জানানও দিয়েছে তারা।

এদিকে জাসু বাহিনীর সদস্যরা নতুন করে সক্রিয় হওয়ায় চরের স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে নতুন করে।

জানা গেছে, রোববার উড়িরচরের নদী ভাঙ্গন পরিস্থিতি পরিদর্শন করতে আসেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। এ সময় মন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে স্থানীয় আওয়ামী ও অঙ্গ সংঠনের ব্যানারে আয়োজিত সুধী সমাবেশে বিশাল মিছিল নিয়ে যোগ দেন রাহাত। উড়িরচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. জাহাঙ্গীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সূধী সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সন্দ্বীপের সাংসদ মাহফুজুর রহমান মিতা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাহাত উড়িরচরের দুর্ধর্ষ জলদস্যু জাসু বাহিনীর অন্যতম সদস্য। ২০১৪ সালের ৫ এপ্রিল র‍্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে জাসুসহ তার বাহিনীর দুজন সদস্য নিহত হলে গা ঢাকা দিয়ে কাতার পালিয়ে যান রাহাত। সম্প্রতি সন্দ্বীপের এক জনপ্রতিনিধির আশ্রয়ে বিদেশ থেকে ফিরে নতুন করে জলদস্যুদের সংগঠিত করতে শুরু করেন রাহাত। এই লক্ষে দীর্ঘ ৬ বছর পর ২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি অতর্কিত হামলা চালিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সোহরাব হোসেনকে জবাই করে রাহাত ও তার সঙ্গীরা। এর পরে দীর্ঘদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকলেও রোববার হঠাৎ মন্ত্রীর অনুষ্ঠানে মিছিল নিয়ে যোগ দিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দেন রাহাত ও তার বাহিনী। ওই মিছিল থেকে তিনি নিজেকে ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী হিসেবেও ঘোষণা দেন।

এদিকে রাহাতের বিরুদ্ধে জলদস্যুতা ও হত্যা মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ নিশ্চিত করে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রবিউল হক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘রাহাত বন্দুকযুদ্ধে নিহত জাসুর অন্যতম সহযোগী। তাছড়া সোহরাব হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। মামলার তদন্ত করতে গিয়ে আমরা এই হত্যায় তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছি।’

সন্দ্বীপ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘রাহাত যুবলীগ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। আমরা যাচাইবাছাই করছি। কিন্তু জলদস্যুতার অভিযোগ থাকলে কাউকে তো আমরা যুবলীগে সম্পৃক্ত করতে পারি না। বিষয়টা আমি দেখবো।’

র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান জুয়েল বলেন, ‘আমরা জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছি। যারা এতে সাড়া দেবে তাদের আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সহযোগিতা করবো। জলদস্যুদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!