নেতার আদরে শিবির ক্যাডার ‘যুবলীগ নেতা’র অপরাধের জাল চট্টগ্রামে

চট্টগ্রাম নগরীর ভয়ংকর সন্ত্রাসী ফিরোজ এবার ধরা পড়লেন ইয়াবা নিয়ে। খুন ও ডাকাতিসহ একাধিক মামলার এ সন্ত্রাসীকে শুক্রবার (১ মে) গ্রেপ্তার করেছে বায়েজিদ থানা পুলিশ। ফিরোজ মূলত জামায়াত-শিবিরের ক্যাডার এবং ইন্টারপোলের রেড তালিকাভুক্ত দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ খানের অন্যতম সহযোগী বলে জানিয়েছে পুলিশ।

তবে দীর্ঘদিন ধরে নিজেকে যুবলীগ নেতা বলে পরিচয় দিয়ে আসছিলেন ফিরোজ। বিভিন্ন সময়ে নিজেকে যুবলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের ছবিসহ নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ব্যানারও সাঁটিয়েছিল ফিরোজ।

শিবিরের ক্যাডার হলেও আ জ ম নাছির মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই বদলে যায় তার অপরাধের ধরন ও রাজনৈতিক পরিচয়। রাতারাতি তিনি বনে যান নগর যুবলীগ নেতা। অভিযোগ রয়েছে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে প্রত্যাশী দিদারুল আলমের হাত ধরেই ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠে আ জ ম নাছিরের সঙ্গে।

এ নগরের সব ধরনের অপরাধকর্মে নিজেকে যুবলীগ নেতা এবং মেয়রের অনুসারী পরিচয় দিলেও মধ্যপ্রাচ্যে লুকিয়ে থাকা দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ, সরওয়ার ও ম্যাক্সনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন বলে জানান পুলিশ।

ফিরোজের ডানে চট্টগ্রাম নগর যুবলীগ নেতা দিদারুল আলম ও জাবেদুল আলম সুমন।
ফিরোজের ডানে চট্টগ্রাম নগর যুবলীগ নেতা দিদারুল আলম ও জাবেদুল আলম সুমন।

পুলিশ বলছে, যুবলীগ পরিচয় দিয়ে ফিরোজসহ সাজ্জাদের একাধিক সহযোগী নগর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। কখনও প্রকাশ্যে, আবার কখনো গা ঢাকা দিয়ে একের পর এক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে তারা।

শুক্রবার (১ মে) ভোরে বায়েজিদ থানা এলাকার বনানী আবাসিকের সামনে থেকে ফিরোজকে গ্রেফতার করেন বায়েজিদ থানার উপ-পরিদর্শক গোলাম মোহাম্মদ নাসিম। এ সময় ফিরোজের কাছে ৫৪০ পিস ইয়াবা পাওয়া গেছে। পরে পাঁচলাইশ থানা এলাকার শ্যামলী আবাসিক এলাকায় ফিরোজের বাসায় অভিযান চালিয়ে ১২ রাউন্ড শটগানের গুলি উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ফিরোজ কুমিল্লা জেলার নাঙ্গলকোট এলাকার আবদুল হামিদের ছেলে। চাঞ্চল্যকর তাসফিয়া হত্যা, শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ডাকাতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে নগরের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

বায়োজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রিটন সরকার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ফিরোজ নামে একজনকে সকালে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সে শিবিরের সন্ত্রাসী সাজ্জাদের অন্যতম সহযোগী। সাজ্জাদের অন্য দুই সহযোগী ইকবাল, একরাম ও অক্সিজেনের মামুনের সাথে মিলে চট্টগ্রামে সাজ্জাদের সব অপকর্মের নেতৃত্ব দেয় ফিরোজ। সম্প্রতি পাঁচলাইশ থানা এলাকায় চাঁদার দাবিতে যে বোমা মারার ঘটনা ঘটেছে সেখানে ইকবালও ছিল। তিনদিন আগেও ইকবাল ফিরোজের বাসায় ছিল। আমরা ইকবালকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রেখেছি।’

পুলিশের তালিকায় শিবির ক্যাডার সাজ্জাদের সহযোগী হলেও বিভিন্ন সময়ে নিজেকে যুবলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে কখনও গোপনে আবার কখনও প্রকাশ্যে নগরজুড়ে একের পর এক অপরাধমূলক কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল ফিরোজ।

বিভিন্ন সময়ে নগরের মুরাদপুর এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় নিজেকে যুবলীগের নেতা দাবি করে ব্যানারও লাগিয়েছিলেন তিনি। মুরাদপুরে টাঙানো একটি বিলবোর্ড ব্যাপক আলোচনায় আসে ২০১৫ সালের শেষের দিকে। বহুল সমালোচিত ওই ব্যানারে ফিরোজের ছবি ও নামের পাশে লেখা ছিল ‘যুবলীগ নেতা’। বিলবোর্ডে চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা দিদারুল আলমসহ আরও দুজনের ছবি ব্যবহার করা হয়েছিল। দিদারুল আলমকে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে দেখতে চান বলে দাবি তুলে ওই ব্যানারটি লাগিয়েছিলেন ফিরোজ।

রাজনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, নগর যুবলীগ নেতা দিদারুল আলমের হাত ধরেই মেয়র আজম নাছিরের সাথে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয় ফিরোজের। পরে নাছিরের সঙ্গে এ সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে ফিরোজ সহযোগিতা নেন মেয়রের অনুসারী জাবেদুল আলমের। শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদের এই সহযোগীকে নিয়মিতভাবে মেয়র নাছিরের আশেপাশে দেখা গেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও। এছাড়া মহানগর যুবলীগের আরেক সদস্য জাবেদুল আলমের সাথেও ফিরোজের ঘনিষ্ঠতা দেখা গেছে। মূলত এই দুজনের সহযোগিতায় নিজেকে ‘যুবলীগ নেতা’ পরিচয় দিয়ে আসছে ফিরোজ।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি প্রিটন সরকার বলেন, ‘এটাই তো করে আসছে তারা। শুধু ফিরোজ না, ইকবাল একরামরাও তো নিজেদের যুবলীগ নেতা বলে পরিচয় দেয় এখন।’

ফিরোজের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি নতুন মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানান ওসি প্রিটন সরকার।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!