নেই বিকল্প জীবিকা/ আতংকে মহেশখালীর ২০ হাজার জেলে

সাগরে মাছ ধরা বন্ধ

পঁয়ষট্টিদিন সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধের ঘোষণায় আতংকে দিন কাটাচ্ছেন এলাকার বিশ হাজার জেলে।সরকারের অপ্রতুল বরাদ্দে প্রাত্যহিক জীবন চালাতে হিমশিম অবস্থা হয় জেলেদের।দীর্ঘমেয়াদী কোন ভর্তুকির ব্যবস্থা করা না হলে এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট হতে পারে বলে আশংকা স্থানীয় সচেতন মহলের।

কুতুবজোমের এক জেলে আক্ষেপ করে বলেছেন,‘আমাদের জীবনটাই অভিশপ্ত। সমুদ্রগামী জেলেদের জীবনের নিরাপত্তাই নেই।’

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে,একজন জেলে সারা বছর ফিশিং ট্রলারের জেলের কাজ করে কোনমতে সংসার চালায়। প্রতিবছর বছর প্রায়ই তারা দুর্ঘটনার শিকার হয়। জলদস্যুতা, প্রাকৃতিক ঘূর্ণিঝড়সহ নানা সমস্যা পড়ে তারা আর ঘুরে দাড়াতে পারে না। তার মধ্যে সরকারের এমন ঘোষণায় এক টানা দুই মাস সাগরে মাছ ধরা বন্ধ! কী খাবে তারা, কিভাবে সংসার চালাবে,সামনে ঈদের খরচ সব মিলিয়ে এসব প্রশ্নের উত্তর কারো জানা নেই। এই সমস্যা নিয়ে চরম আতংকে রয়েছে মহেশখালীর বিশ হাজার জেলে।

মহেশখালী মৎস্য অফিস সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার প্রায় ২০ হাজারের অধিক জেলে থাকলেও তাদের মধ্যে নিবন্ধনকৃতদের সংখ্যা মাত্র ১১ হাজার ৪৪২। প্রতিবছর মাছ ধরা বন্ধ ঘোষণা করার প্রায় শেষের দিকে জেলেদের জন্য নামমাত্র বরাদ্দ দেয় সরকার।যা সব জেলেদের মাঝে বিতরণে চরম হিমশিম খেতে হয় সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে।উপজেলার কুতুবজোমের জনসংখ্যার মধ্যে সিংহভাগ জেলে। ওই ইউনিয়নসহ উপজেলার প্রতিটি জেলেদের দ্রুত পুনর্বাসন করা না হলে এলাকার জেলেরা অভাবগ্রস্ত হবে। এতে সামাজিক শৃঙ্খলাও নষ্ট হবে।

কুতুবজোমের ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন খোকন জানান,আমার ইউনিয়নের প্রায় মানুষ জেলে।দুই মাস বেকার বসে থাকলে সংসার চালাতে তারা খুব সমস্যায় পড়বে, র্দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসন করা না গেলে এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।

মহেষখালী মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, নিবন্ধনকৃত জেলেদের জন্য সরকারের কাছে বরাদ্দে অবেদন পাঠানো হয়েছে। তা আমাদের কাছে আসা মাত্র জেলেদের মাঝে বিতরণ করা হবে।

মহেশখালীর সচেতন মহল জানিয়েছেন, জেলেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঝড়-তুফান ও বৈরি আবহাওয়া উপেক্ষা করে সমুদ্রে মাছ ধরে দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষের আমিষ যোগান দেন তাদের জীবন কেমন কাটে, সেটি আমাদের নীতি নির্ধারকেরা খুব গুরুত্বের সঙ্গে ভাবেন বলে মনে হয় না। সমুদ্রগামী জেলেদের জীবনের দুরাবস্থার কথা উঠে এসেছে বিভিন্ন সেমিনারে। গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে মাছের উৎপাদন ৪–৫ গুণ বাড়লেও জেলেদের জীবনমানের কোনো উন্নতি হয়নি। সামগ্রিকভাবে জেলেরা বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার।কিন্তু তাদের মধ্যে যারা সমুদ্রে মাছ ধরেন তাদের অবস্থা শোচনীয়। অনেকের স্থায়ী ঘরবাড়িও নেই। কোনোভাবে অন্যের জায়গায় মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নেন। উপকূলীয় জেলেদের জীবনমান উন্নয়নের বিষয়টি দেখতে হবে সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের নিরিখে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, উপকূলীয় অঞ্চলে দারিদ্র্যের হার বেশি।সেখানে বছরের দীর্ঘ একটি সময় মানুষের কাজ থাকে না।

উল্লেখ্য, সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের উন্নয়নে সোমবার ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত মোট ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে সব ধরনের মৎস্য আহরণ বন্ধ থকেবে।বাণিজ্যিক ট্রলারের পাশাপাশি সব ধরনের নৌযানের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে।পঁয়ষট্টি দিনের এ নিষেধাজ্ঞাকে ‘মাছ আহরণের ছুটি’ হিসেব ভাবতে মৎস্যজীবীদের প্রতি আহ্বান সরকারের।

এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!