নুসরাতের দুই নারী খুনী চট্টগ্রাম কারাগারে ফাঁসির অপেক্ষায়

মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যামামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া দুই নারী আসামি কামরুন নাহার মনি ও উম্মে সুলতানা পপি এখন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যুর প্রহর গুণছেন। ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র মাদরাসার ছাত্রী নুসরাত খুনের মামলায় ২০১৯ সালের অক্টোবরে তাদেরকে দণ্ডাদেশ দেওয়ার পরই নিয়ে আসা হয় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে। কারণ ফেনী কারাগারে নারী বন্দিদের জন্য কোনো কনডেম সেল নেই।

মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া কামরুন নাহার মনি ও উম্মে সুলতানা পপি চট্টগ্রাম কারাগারের কনডেম সেলে আছেন বলে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার দেওয়ান মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম।

২০১৯ সালের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা নিজ অফিস কক্ষে ডেকে নিয়ে নুসরাতকে যৌন হয়রানি করেন। এ ঘটনায় সিরাজের বিরুদ্ধে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন নুসরাতের মা শিরিন আখতার। ওই দিনই স্থানীয়দের সহায়তায় অধ্যক্ষ সিরাজকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সিরাজের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করতে মাদরাসা ছাত্রলীগের সভাপতি, তৎকালীন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ সবাই মিলে নুসরাত ও তার পরিবারকে সিরাজের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারে চাপ দেন।

কিন্তু মামলা প্রত্যাহার না করায় ওই বছরের ৬ এপ্রিল আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে পূর্বপরিকল্পিতভাবে সিরাজের অনুসারীরা নুসরাতকে মাদরাসার সাইক্লোন শেল্টারে ছাদে ডেকে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করে। নুসরাতের চিৎকারে পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য ও স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। ১০ এপ্রিল সেখানেই তিনি মারা যান।

থানা ও পৌর আওয়ামী লীগের নেতাদের সম্পৃক্ততায় স্থানীয় প্রশাসন প্রথমে আত্মহত্যা বলে এই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এই মামলার তদন্তভার পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পিবিআইয়ের তদন্তে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে তাদের সবাইকে পরে আওয়ামী লীগ দল থেকে বহিস্কার করা হয়।

২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদ-দৌলা, উপজেলা আওয়ামী লীগ তৎকালীন সভাপতি ও মাদরাসার গভর্নিং কমিটির সহ-সভাপতি রুহুল আমিন, মাদরাসা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন শামীম, পৌর কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা পপিসহ ১৬ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত।

তবে এই আদেশের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ উচ্চ আদালতে আপিল করেছে বলে জানান জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও বাদী পক্ষের আইনজীবী শাহজাহান সাজু। তিনি বলেন, ‘আপিলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানির জন্য বেঞ্চ গঠন করেছিলেন প্রধান বিচারপতি। বিচারপতি হাসান ইমাম ও সৌমেন্দ্র সরকারের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে এ মামলার শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। করোনার কারণে সে বেঞ্চ বাতিল হয়ে গেছে। এরপর বেঞ্চ গঠন হয়নি। তাই মামলাটির শুনানি হচ্ছে না। করোনাভাইরাসের সংকটময় পরিস্থিতি কেটে গেলে অগ্রাধিকারভিত্তিতে শুনানি হবে।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!