নিষিদ্ধ সময়েই ইলিশ ধরতে দিনে দুবার সাগরে যাচ্ছে দাদন সিন্ডিকেট
প্রশাসনের সামনে রীতিমতো বসছে ইলিশের বাজারও
৬৫ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা না মেনে বঙ্গোপসাগর থেকে ইলিশ মাছ ধরা এখনও অব্যাহত রেখেছে চট্টগ্রামের ইপিজেড থানা এলাকার দাদন সিন্ডিকেট। প্রতিদিন ছোট-বড় মাছ সাগর থেকে আহরণ করে যাচ্ছে বহিরাগত জেলেরা। প্রশাসনের নিরব সম্মতিতেই প্রতিদিন দুবার ইলিশ শিকারে সাগরে যাচ্ছে তারা। এমনকি সরকারি জায়গা দখল করে তারা গড়ে তুলেছে মাছের সংরক্ষণাগারও। অথচ এ নিয়ে নির্বিকার প্রশাসন। এদিকে ইলিশের মৌসুম এলেও সাগরে জাল ফেলতে পারবেন কিনা তা নিয়ে আশংকায় রয়েছে স্থানীয় জেলেরা।
জেলেরা বলেছেন, রাজনৈতিক ও টাকার দাপট দেখিয়ে আকমল আলী বেঁড়িবাধ এলাকায় দীর্ঘদিন একচেটিয়া ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে আসছে ইপিজেড থানা আওয়ামী লীগের সি-ইউনিট সহসভাপতি ও ভেন্ডার ব্যবসায়ী মো. আক্কাস প্রকাশ আক্কাস সওদাগর। ভেন্ডার ব্যবসার আড়ালে সরকারি জায়গা দখল করে সাগরপাড়কেন্দ্রিক অবৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনাও করেন তিনি— এমন অভিযোগও রয়েছে। তার বিরুদ্ধে ওই এলাকায় কেউ কথা বলার সাহস পায় না। তার বাণিজ্যে কেউ বাধা হলে সেখানে ত্রাস তৈরি করে আক্কাস সওদাগরের লোকজন। তার কাছ থেকে (দাদন) সুদে যারা টাকা নেয়, তারাই অনুমতি পায় সাগরে জাল ফেলার।
বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রামের ইপিজেড থানার আকমল আলী বেড়িবাঁধ এলাকায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সি-বিচ আউটার রিং রোডে একটি পিকআপ ভ্যানে ইলিশ মাছ তুলছেন কয়েকজন লোক। একই সাথে বেড়িবাঁধের মুখে ইলিশ মাছের বেচাকেনার হাটও লক্ষ্য করা গেছে।
সামুদ্রিক মৎস্য বিধি অনুসারে ১৯৮৩ সালের সংযোজিত ১৯ নম্বর ধারা মোতাবেক সামুদ্রিক মাছের সুষ্ঠ, মজুদ সংরক্ষণ ও সহনশীল মৎস্য আহরণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত মোট ৬৫ দিন সকল যান্ত্রিক-অযান্ত্রিক নৌযান, ট্রলার দিয়ে মৎস্য এবং ক্রাস্টাশিয়ান্স (কাঁকড়া) আহরণ কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ মৎস্য অধিদফতর।
স্থানীয় জেলেরা জানান, সরকারের নিষেধ না মেনে এখানকার দাদন ব্যবসায়ীদের অনুমোদন পাওয়া জেলেরা সকাল-বিকেল ইলিশ মাছ ধরতে যায় সাগরে। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা ও সন্ধ্যার দিকে আকমল আলী বেঁড়িবাধ এলাকায় মাছের হাট বসে। প্রশাসনও তাদের কিছু করতে পারে না। স্থানীয় জেলেরা সরকারের আইন মেনে জাল বুননের কাজে ব্যস্ত থাকলেও বোট দিয়ে প্রতিদিন সাগরে মাছ ধরা অব্যাহত রেখেছেন আক্কাস সিন্ডিকেটের লোকজন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মো. আক্কাস সওদাগর বলেন, ‘সাগরপাড়ে অনেকেই দাদন ব্যবসা করছেন। সবার দায়িত্ব তো আমি নিতে পারবো না। সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকার পরও কারা অমান্য করছেন, সেটা আমি কিভাবে বলব?’
চট্টগ্রামের কোস্টগার্ড (পূর্বাঞ্চল) মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট শাহ জিয়া রহমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘পতেঙ্গা ও ইপিজেড বেড়িবাঁধ এলাকায় সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকার পর কিছু দুস্কৃতিকারীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সেখানকার এক শ্রেণির জেলে সাগরে মাছ আহরণ করছে— এমন খবর আমরা পেয়েছি। প্রতিদিন আমাদের অপারেশন টিম তাদের ধরার চেষ্টা করছে। কিন্তু তাদের কিছু সোর্স সেখানে আমাদেরকে ট্র্যাকিংয়ে রাখে। এ কারণে আমরা যখনই অভিযানে যাই, কাউকে ধরতে পারি না। তবে অপারেশন অব্যাহত রয়েছে।’
মুআ/এসএস/সিপি