নিলামে উঠছে যে ২২ প্লেন, দাম না পেলে বিক্রি কেজিদরে

বিমান কেটে কেজি দরে বিক্রির কথাও ভাবছে বাংলাদেশের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হযরত শাহজালালের বড় অংশ দখল করে রাখা ২২টি বিমান নিয়ে অভিনব সংকটে পড়ে গেছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। পার্কিং চার্জ না দিয়েই এই বিমানগুলো পড়ে আছে কার্গোতে। বছরের পর বছর এভাবে পড়ে থাকা ওই ২২টি বিমান শেষমেশ কার্গো থেকে সরিয়ে খোলা জায়গায় নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। সেগুলো বিক্রি করে দেওয়ার জন্য নিলাম ডাকা হবে। তাতেও যদি বিক্রি না হয়, তাহলে বিমানগুলো কেটে কেজি দরে বিক্রি করা হবে।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পড়ে থাকা বিমানগুলোর বেশিরভাগই ইতিমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া বিভিন্ন বিমান সংস্থার মালিকানাধীন। এছাড়া প্রায় ধুঁকতে থাকা বিমানসংস্থা রিজেন্ট এয়ারওয়েজ, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ও সরকারি সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সেরও কয়েকটি পরিত্যক্ত বিমান এর মধ্যে রয়েছে।

কার্গো ভিলেজ অ্যাপ্রোন থেকে পরিত্যক্ত এই উড়োজাহাজগুলো সরিয়ে নিলে সেখানে অন্তত সাতটি উড়োজাহাজ পার্কিং করা সম্ভব হতো। এছাড়া কার্গো উড়োজাহাজগুলোতে মালামাল উঠানো ও নামানো সহজ হতো— এমন দাবি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের।

নিলামে উঠছে যে ২২ প্লেন, দাম না পেলে বিক্রি কেজিদরে 1

কোন্ মডেলের কয়টি বিমান
যেসব বিমানসংস্থার পরিত্যক্ত বিমান কার্গো ভিলেজ অ্যাপ্রোনে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে রয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে জিএমজি এয়ারলাইন্স, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, স্কাই ক্যাপিটাল এয়ারলাইন্স, অ্যাভিয়েনা এয়ারলাইন্স, বিসমিল্লাহ এয়ারলাইন্সের মালিকানাধীন বিভিন্ন মডেলের বিমান। এছাড়া রয়েছে রিজেন্ট এয়ারওয়েজের একাধিক বিমান। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিত্যক্ত বিমানও রয়েছে এই বহরে।

২০১২ সালের ৩০ মার্চ অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সব ধরনের রুটের ফ্লাইট কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় বেসরকারি জিএমজি এয়ারলাইন্স। অপারেশন বন্ধ হওয়ার আট বছর চললেও শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে পরিত্যক্ত দুটি এমডি-৮২ উড়োজাহাজ সরিয়ে নেয়নি এয়ারলাইন্সটি। জিএমজি সেই আট বছর আগেই বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ অ্যাপ্রোনে ২০১২ সালের মার্চে পরিত্যক্ত দুটি এমডি-৮২ (রেজিস্ট্রেশন নং- এস২এডিও, এস২এডিএম) এবং দুটি ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজ ফেলে রাখে। পরে ড্যাশ-৮ বিমান দুটি বিক্রি করে দেওয়া হয়।

কার্গো ভিলেজ অ্যাপ্রোনে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে স্কাই ক্যাপিটাল এয়ারলাইন্সের একটি ট্রাইস্টার (রেজিস্ট্রেশন নং- এস২এইটি) উড়োজাহাজ। কার্গো পরিবহনে ব্যবহৃত এ উড়োজাহাজটি ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। একইভাবে অ্যাভিয়েনা এয়ারলাইন্সের একটি ড্যাশ-৮ (রেজিস্ট্রেশন নং- এস২এইএল) উড়োজাহাজ এবং বিসমিল্লাহ এয়ারলাইন্সের একটি ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজও পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে।

নিলামে উঠছে যে ২২ প্লেন, দাম না পেলে বিক্রি কেজিদরে 2

অন্যদিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দুটি এফ-২৮ ও চারটি ডিসি-১০ (রেজিস্ট্রেশন নং- এস২এসিও, এস২এসিকিউ, এস২এসিআর, এস২এসিপি) উড়োজাহাজ এবং রিজেন্ট এয়ারওয়েজের একটি ড্যাশ-৮ (রেজিস্ট্রেশন নং-এস২এএইচএ) উড়োজাহাজ কয়েক বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে।

এছাড়া ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের চারটি এমডি-৮৩ উড়োজাহাজ পড়ে আছে কার্গো ভিলেজ অ্যাপ্রোনে, যেগুলোর রেজিস্ট্রেশন নং এস২এইইউ, এস২এইজে, এস২এইভি ও এস২এইএইচ। একই সঙ্গে প্রায় দুই বছর ধরে ইউনাইটেডের একটি ড্যাশ-৮ (রেজিস্ট্রেশন নং- এস২এইএস) উড়োজাহাজও পড়ে আছে।

কার্গো ভিলেজের পার্কিং চার্জ না দিয়েই বিমানগুলো পড়ে ছিল এতোদিন ধরে। ওই বাবদ বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের পাওনাও বিশাল।

বারবার তাগাদা দিয়েও কোনো কাজ না হওয়ায় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সপ্তাহখানেক আগে বিমানগুলো সরিয়ে উত্তর প্রান্তে জেনারেল অ্যাভিয়েশনের খোলা জায়গায় নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু করেছে। সবগুলো বিমান সরিয়ে নেওয়ার পর সেগুলো নিলাম ডেকে বিক্রি করে দেওয়ার কাজ শুরু করবে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। যদি নিলামে বিক্রি না হয়, তাহলে ওই ২২টি বিমান ভেঙে কেজি দরে বিক্রি করা হতে পারে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!