নির্বাচন কমিশনের অহেতুক নামবদলে রাজনৈতিক দলগুলোর ‘না’

সাধারণ মানুষের মধ্যে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া বিভিন্ন নাম বদলে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে ভাষাবিজ্ঞানী, সুশীল সমাজ ছাড়াও নির্বাচনের কমিশনের এই ‘অহেতুক’ প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর বেশিরভাগই। আওয়ামী লীগ পক্ষে বা বিপক্ষে সরাসরি কোনো মত দেয়নি। তবে নাম পরিবর্তনের কারণে একাধিক আইনে সংশোধনী আনার প্রয়োজন পড়বে বলে মতপ্রকাশ করেছে। অন্যদিকে বিএনপি নাম পরিবর্তনের এই প্রস্তাবকে ‘অনৈতিক ও অপ্রয়োজনীয়’ বলে বর্ণনা করে সরাসরি বিপক্ষে মত দিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো বলছে, প্রচলিত নাম পরিবর্তন করে যেসব নামের প্রস্তাব করা হয়েছে তা দুর্বোধ্য।

জানা গেছে, রাজনৈতিক দলসমূহের নিবন্ধন আইন, ২০২০ এর খসড়া অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবিত নামগুলো পরিবর্তন হলে সিটি করপোরেশন পরিচিত হবে ‘মহানগর সভা’ নামে, সিটি করপোরেশনের মেয়র পরিচিত হবেন ‘মহানগর আধিকারিক’ নামে, পৌরসভা হবে ‘নগর সভা’, পৌরসভার মেয়রকে ডাকা হবে ‘পুরাধ্যক্ষ’, ওয়ার্ডগুলো হবে ‘মহল্লা’, কাউন্সিলররা পরিচিত হবেন ‘পরিষদ সদস্য’ নামে, উপজেলা চেয়ারম্যানকে ডাকা হবে ‘উপজেলা পরিষদ প্রধান’, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানকে ‘উপজেলা পরিষদ উপপ্রধান’, ইউনিয়ন পরিষদ পরিচিত হবে ‘পল্লি পরিষদ’ নামে আর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ‘পল্লি পরিষদ প্রধান’।

জানা গেছে, রাজনৈতিক দলসমূহের নিবন্ধন আইনের খসড়া নিয়ে ৫৫টি মতামত জমা পড়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের। এর মধ্যে ১৭টি নিবন্ধিত ও ২৩ অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। এছাড়া রয়েছে বেশকিছু সংগঠন। ব্যক্তিগতভাবে মতামত দিয়েছেন ১৫ জন। এই ৫৫টি মতামতের মধ্যে ১৮টিই নাম পরিবর্তন সংক্রান্ত। এর মধ্যে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নয়টি। এতে বিএনপিসহ ৫টি রাজনৈতিক দলই নাম পরিবর্তনের বিপক্ষে মতামত দিয়েছে।

বিএনপি জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশনের নামে ইংরেজি শব্দ অক্ষুণ্ণ রেখে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নাম ও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের পদবি পরিবর্তনের প্রস্তাব অনৈতিক ও অপ্রয়োজনীয়। নাম পরিবর্তনের বিপক্ষে মত দিয়ে গণফোরাম বলেছে, অন্য ভাষার কিছু কিছু শব্দ বাংলা ভাষায় আত্তীকরণ হলে বাংলা ভাষা দুর্বল হয় না, বরং শক্তিশালী হয়। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ পক্ষে বা বিপক্ষে সরাসরি কোনো মত না দিলেও নাম পরিবর্তন বা বাংলা পরিভাষা ব্যবহার করলে স্থানীয় সরকারের কয়েকটি আইন পরিবর্তন করতে হবে বলে মতপ্রকাশ করেছে।

জাতীয় পার্টি, সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, গণতন্ত্রী পার্টি, সাম্যবাদী দল, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, জাতীয় পার্টি-জেপিসহ বেশ কয়েকটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল তাদের মতামত দেয়নি।

পৌরসভার মেয়রদের সংগঠন মিউনিসিপ্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ম্যাব লিখিত মতামতে বলেছে, চারটি শব্দকে বাংলা পরিভাষার নামে অপরিচিত ও দুর্বোধ্য শব্দে রূপান্তরিত করার প্রয়াস জটিলতা বাড়াবে, যা অহেতুক ও অগ্রহণযোগ্য। তারা বলেছে, এ শব্দগুলোর পরিবর্তন হলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বকারী পৌরসভার জনপ্রতিনিধিরা ব্যাপক পরিচয় সংকট এবং মর্যাদা ও গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নের মুখে পড়বেন। যা পৌরসভার জনপ্রতিনিধি হিসেবে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করবে।

শিক্ষাবিদ ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘মিউনিসিপ‌্যালিটি, সিটি করপোরেশন ও মেয়র—এ তিন শব্দ বিশ্বব্যাপী পরিচিত ও সর্বজনীনভাবে ব‌্যবহৃত শব্দ। ইংরেজি, ফরাসি, স্প্যানিশ, পর্তুগিজ, রুশ, চীনা, জাপানি সব ভাষায় ‘মেয়র’ শব্দটি সর্বজনীনভাবে ব‌্যবহৃত হয়। এটি নগর স্থানীয় সরকারের বিশ্বজনীন পরিচিতির স্মারক। মেয়রের মতো কাউন্সিলর পদটিও দুনিয়াব্যাপী পরিচিত। পৃথিবীর অনেক দেশে মেয়ররা পর্যন্ত তাদের নামের আগে কাউন্সিলর লিখে থাকেন। কারণ, তারা মনে করেন, তাদের মূল পদ কাউন্সিলর, তারপরে তারা মেয়র। আরও একটি ছোট সমস্যা। ইউনিয়ন একটি প্রশাসনিক একক। যখন ইউনিয়ন পরিষদ পল্লি পরিষদে রূপান্তর হবে, তখন ইউনিয়ন কোথায় যাবে?’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!