নিরাপদ খাদ্য অভিযান শুরু করতে হবে ঘর থেকেই: খাদ্যমন্ত্রী

খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, ভেজাল খাদ্যের বিরুদ্ধে সরকারি পদক্ষেপের কারণে মানুষ অনেকটা সচেতন হয়েছে। কারখানার শ্রমিক, ফুটপাতের ছোট বিক্রেতা থেকে বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান সর্বক্ষেত্রে ভেজালের বিরুদ্ধে আরো সচেতনতা সৃষ্টি করে সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য নিজের ঘর থেকে নিরাপদ খাদ্য অভিযান শুরু করতে হবে।

মন্ত্রী বুধবার (২৩ অক্টোবর) চট্টগ্রামের মোটেল সৈকতের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) ও বিভাগীয় প্রশাসন আয়োজিত ‘নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩ বাস্তবায়নে জনসচেতনতা’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।

সেমিনারে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নিরাপদ খাদ্যের জন্য সকল পেশাজীবীর সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকতে হবে। প্রতিটি ঘরে ভেজাল খাদ্যের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী একজন ম্যাজিস্ট্রেট তৈরি করে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে। সাধারণ মানুষকে নিরাপদ খাদ্য কী সেটা বোঝাতে হবে। সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, ইমাম প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে মানুষকে সচেতন করলে সুফল পাওয়া যাবে। শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে এক মিনিট মাদক ও এক মিনিট নিরাপদ খাদ্য, ইমাম তার খুতবায় এ মিনিট মাদক ও এক মিনিট নিরাপদ খাদ্য সম্পর্কে বললে এ প্রচেষ্টা সফল হবে। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার, উপজেলা চেয়ারম্যান, মেম্বাররা এ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে পারে। ফেসবুকসহ সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ বিষয়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। এনজিও কর্মীরা তাদের ঋণের কিস্তি আদায়কালীন সময় উঠান বৈঠকে বাড়ির গৃহিণীদের এ বিষয়ে সচেতন করতে পারে। এভাবে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত হবে।

মন্ত্রী আরো বলেন, এক সময় বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকিতে ছিল। সরকারের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সে ঝুঁকি আমরা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। এখন আমরা নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিতে কাজ করছি। খাদ্যে ভেজাল রোধে নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩ এ উল্লেখিত শাস্তি শুধু নয়, এর বিরুদ্ধে দণ্ডবিধিতে নির্দিষ্ট শাস্তির পাশাপাশি বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪ এ মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে মোবাইল কোর্ট অভিযান জোরদার করতে তিনি এ সময় সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএফএসএ’র সদস্য একেএম নুরুল আফসার। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বিশ্বে প্রতি বছর ১০ জনে একজন অনিরাপদ খাদ্য দ্বারা সৃষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে শতকরা ৭০ ভাগ আক্রান্ত হয় ডায়রিয়ায়। বিশ্বে প্রতি বছর ৪ লক্ষ ২০ হাজার মানুষ অনিরাপদ খাদ্যজনিত রোগে মারা যায় যার মধ্যে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুর সংখ্যা শতকার ৪০ ভাগ। অনিরাপদ খাদ্যজনিত রোগে বিশ্বের স্বল্পোন্নত ও দরিদ্র দেশসমুহের ১১০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়। এছাড়া অনিরাপদ খাদ্যের কারণে মানুষের ২শ প্রকারের রোগ-ব্যাধি হয়। এসব রোগ-ব্যাধি ভৌত বিপত্তি, রাসায়নিক দূষণ, অনুজীব সংক্রমণ ও টক্সিনের কারণে হয়ে থাকে।

সেমিনারে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘জনমত সৃষ্টিতে গণমাধ্যম গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই গণমাধ্যমকে এ বিষয়ে বিশেষ ভূমিকা পালনে এগিয়ে আসতে হবে।

অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মো. নুরুল আলম নিজামীর সভাপতিত্বে কর্মশালায় আরো বক্তব্য রাখেন, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহাবুদ্দিন আহমদ, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সৈয়দা সারোয়ার জাহান, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মোছাম্মৎ নাজমুন আরা খানম প্রমুখ।

কর্মশালায় বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী ম্যাজিস্ট্রেট, ব্যবসায়ী, রেস্টুরেন্ট মালিক, এনজিও কর্মী, ক্যাব কর্মকর্তাগণ অংশ নেন। এর পূর্বে এ উপলক্ষে এক বর্ণাঢ্য র্যা লি নগরীর মুসলিম হাই স্কুল থেকে শুরু হয়ে মোটেল সৈকতে এসে শেষ হয়।

এফএম/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!