রপ্তানির আড়ালে বিদেশে টাকা পাচার ছাড়াও কালো টাকা সাদা করার চেষ্টায় ছিল বাংলা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড। চট্টগ্রাম কাস্টমসের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কোম্পানিটি কোনো পণ্য রপ্তানি না করেই বিদেশে বড় অংকের টাকা পাচার করার চেষ্টা করছিল। বিষয়টি ধরা পড়ার পর গত ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার মতিঝিলভিত্তিক ওই প্রতিষ্ঠানকে ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে প্রণোদনার অর্থ আত্মসাৎ এবং টাকা পাচারের অভিযোগে মামলা করা হবে বলে কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গার বেসরকারি ইস্টার্ন লজিস্টিকস ডিপোতে দুটি চালানের দুই কনটেইনার খাদ্যপণ্য আটক করা হয়। কাগজপত্রে দেখা যায়, ঢাকার মতিঝিলের সার্কুলার রোডের বাংলা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড ও নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের ছোট কৃষ্ণদি মালয়েশিয়ায় ১ লাখ ৩ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যের খাদ্যপণ্যের দুটি চালান রপ্তানি করতে যাচ্ছে।
কোম্পানি দুটি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট হিসেবে চট্টগ্রামের গোসাইলডাঙ্গার জাফর ম্যানশনে অবস্থিত আর ইসলাম এজেন্সিকে মনোনয়ন দেয়। এই সিঅ্যান্ডএফ প্রতিনিধি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে গত বছরের ২১ ডিসেম্বর বিল অফ এক্সপোর্ট (নম্বর-সি-১৭৭৬৮৮৮ এবং সি-১৭৬১৯৭৭) দাখিল করে। এরপর উত্তর পতেঙ্গার ইস্টার্ন লজিস্টিকস ডিপোতে দুটি চালানের বিপরীতে দুটি ২০ ফুট কনটেইনারে পণ্য বোঝাই করা হয় এবং চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জাহাজে তোলার ডাক আসার অপেক্ষায় ডিপোতে কনটেইনার দুটি রাখা হয়।
প্রতিটি কনটেইনারে প্রায় ১১ টন পণ্য থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে তা নেই— এমন খবর পেয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস কনটেইনার দুটি খুঁজে বের করে আলাদা করে রাখে। পরে কাস্টম হাউসের অডিট, ইনভেস্টিগেশন ও রিসার্চ টিম (এআইআর) এবং জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা, সংশ্লিষ্ট ডিপো ও সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে কনটেইনার দুটির পণ্য পরীক্ষা করা হয়।
কনটেইনারের সামনে সুসজ্জিত মুড়ি, ড্রাই কেক ও টোস্টের কার্টন সরিয়ে দেখা যায়, পেছনে ফাঁকা এবং প্রতি কনটেইনারে প্রায় ১১ টন পণ্য থাকার কথা থাকলেও পাওয়া যায় মাত্র আধা টন পণ্য। দুটি চালানের দুই কনটেইনারে ২১ হাজার ৭২৬ কেজি পণ্য থাকার কথা ছিল, কিন্তু কাস্টমসের তল্লাশিতে পাওয়া যায় মাত্র ১১৩৫ কেজি পণ্য। একটি চালানে ১০ হাজার ৮৭৬ কেজি পণ্য থাকার কথা থাকলেও পাওয়া গেছে মাত্র ৫৪৩ কেজি পণ্য। অন্য একটি চালানে ১০ হাজার ৮৫০ কেজির জায়গায় পাওয়া গেছে ৫৯২ কেজি পণ্য।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই সময় হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে কালো টাকা পাচার করে রপ্তানির নামে টাকা সাদা করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। তা ছাড়া রফতানি বাণিজ্যকে উৎসাহিত করতে খাদ্যসামগ্রী রপ্তানির ক্ষেত্রে নগদ প্রণোদনা দেয় বাংলাদেশ সরকার। এই প্রণোদনা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টাও চলে এর মাধ্যমে।
এ ঘটনার পর কাস্টমস আইন অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হয়। একই সাথে কাস্টম হাউসের এন্টি মানিলন্ডারিং ইউনিট কাজ শুরু করে। দীর্ঘ তদন্ত ও শুনানির পর বাংলা ফুডকে ৩৫ লাখ জরিমানা করে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস। এই জালিয়াতির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে এর আগে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট আর ইসলাম এজেন্সির লাইসেন্স সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম বলেন, রপ্তানির আড়ালে মানিলন্ডারিং, কালো টাকা সাদা করার কৌশল ও সরকারের কাছ থেকে অবৈধ উপায়ে নগদ প্রণোদনা গ্রহণের অপচেষ্টা করায় ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে বাংলা ফুডকে। এর মধ্যে ৫ লাখ টাকা বিমোচন জরিমানা ও ৩০ লাখ ব্যক্তিগত জরিমানা।
সিপি