নিঃস্ব গরীবেরা ॥ ধরা-ছোঁয়ার বাইরে বহুতল ভবন নির্মাণকারীরা

আবু-বিন-আজাদ, নীলফামারী ॥
রহস্যের বেড়াজালে বন্দি হয়ে রইল সৈয়দপুর রেলওয়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের অভিযান। বিভিন্ন গণমাধ্যমে রেলওয়ের জমিতে বহুতল ভবনের খবর প্রকাশিত হলে রেল কর্তৃপক্ষ এসব উচ্ছেদের পরিকল্পনা করে। আর ভবনগুলো গুড়িয়ে দিতে সংশ্লি¬ষ্টরা স্কেবেটরসহ প্রবেশ করে এ রেলশহরে। তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তাঁরা উচ্ছেদ অভিযানের আগের রাতে শহরের ব্যবসায়ী নেতাদের সাথে বৈঠক করে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় পরেরদিন তাঁরা শুধু উচ্ছেদের নামে ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র বৈধ দোকান-পাটগুলো গুড়িয়ে দেন। এতে সম্পূর্ণরুপে অবৈধ বহুতল ভবন নির্মাতারা একবারেই থাকেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। ফলে স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়ীরা দোকান-পাট হারিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আর উচ্ছেদ অভিযানের আগে ও পরেও বর্তমানে আবারো মহোৎসব লেগেছে রেলওয়ের জমিতে অবৈধ বহুতল ভবন নিমার্ণের। উচ্ছেদের দুই দিন ১৮ ও ১৯ মার্চ স্থানীয় এমপি’ থানার সামনে রেললাইনের ধারের তাঁর জাতীয় পার্টির অফিস ও ক্যান্টনমেন্ট সড়কের তাঁর আবাসিক রনি বোর্ডিং ভাঙ্গতে দেননি। অথচ, তার পাশের ভবনগুলো গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
জানা যায়, ১৮৭০ সালে আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের বিশাল এ কারখানা স্থাপনের পর থেকেই একে একে ৭৯৯.৯৮ একর সম্পত্তির মধ্যে ধীরে-ধীরে সাড়ে ৬শ একর ভূ-সম্পত্তি বেদখল হয়ে যায়।  বেদখলকারীরা রেলওয়ের ভূমি অফিস পাকশী থেকে বরাদ্দ নিয়ে দোকান পাট নির্মাণ করে শুরু করেন ব্যবসা। অনেকে রেল বিভাগের কাছে কোন অনুমতি না নিয়েই রেল সম্পত্তিতে নির্মাণ করেন দোকান পাট, বহুতল ভবন ও ঘরবাড়ি। ১৯৮৫ সালে সৈয়দপুর পৌরসভার কাছে এ সম্পত্তির মধ্যে বাণিজ্যিক এলাকা ২৫.৫০ একর সম্পত্তি জেলা প্রশাসক হস্তান্তর করেন। শর্ত সাপেক্ষ্যে এ এলাকার আয় হতে পৌর কর্তৃপক্ষ রেলওয়েকে ৪০ ভাগ প্রদান করবে। এতে রেলওয়ের এ জমিতে দিন-দিন বাড়তে থাকে বহুতল ভবন। এ নিয়ে দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, আঞ্চলিক ও স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় “রেলের জমিতে অবৈধভাবে বহুতল ভবন নির্মাণের হিড়িক” শীর্ষক খবর প্রকাশ হয়। এতে রেল কর্তৃপক্ষ গত ১৮ ও ১৯ মার্চ উচ্ছেদ অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করেন। সে পরিকল্পনা অনুযায়ী উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। প্রথম দিনে রেলওয়ে কারখানা সংলগ্ন, ষ্টেশন ও রেললাইনের দুই ধারে উচ্ছেদ করেন। এছাড়া যারা রেল বিভাগের কাছে অনুমতি না নিয়েই অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছেন শুধু তাদের বিরুদ্ধেই উচ্ছেদ অভিযান চালানোর কথা সাংবাদিকদের বলেন রেলওয়ের উচ্ছেদকারিরা। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ করেছে সম্পূর্ণ উল্টো কাজ। বৈধ দোকান পাট ভেঙ্গে তাঁরা অবৈধদের বহুতল ভবন নির্মাণের উৎসাহ যুগিয়েছেন। এতে সাধারন থেকে ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ীরা বুঝতে পারেন উচ্ছেদের নামে সৈয়দপুরে কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে। আর এ নিয়ে কয়েকজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করে লোক দেখানো লিজ নেয়া ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করেছেন তাঁরা। এছাড়া উচ্ছেদের তালিকা নিয়ে তাঁরা কাদের দোকান ভেঙ্গেছেন এ প্রশ্ন সকলের ? এসব কি হচ্ছে ? অথচ, রহস্যজনক কারণে রেলবাজারের কাপড় পট্রী ও মনিহারী এবং মসল্লা পট্রীতে দুই দিন রাতের বেলা অগ্নিকান্ডের সুযোগ নিয়ে পুরনো দোকান-পাটের স্থানে নির্মিত হচ্ছে বহুতল ভবন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ যারা ভারত থেকে অবৈধভাবে কাপড়-কসমেটিকস-মসল্লা আনেন, তাঁদের দোকান পুড়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল মহামান্য উচ্চতর আদালতের স্থিতিবস্থার আদেশ থাকলেও ৪-১০তলা ভবন নকশা ছাড়াই নির্মাণ করছেন। ইতিমধ্যে অনেকেই নির্মাণ কাজ শেষও করে ফেলেছেন। আর রেল কর্তৃপক্ষের অবৈধভাবে দোকান ভাঙ্গার কারণে অনেকে আজ পথে বসেছেন। তাই দুঃচিন্তায় সিরাজ হোটেলের মালিক সিরাজ এ ঘটনার সপ্তাহ না পেরুতেই মারা যান। বেচুয়া নামের এক পান দোকানি অভিযোগ করেন, দোকানপাট উচ্ছেদে ১/১১ এর সময়কে হার মানিয়েছে। বর্তমানে নি¤œ শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছেন। এখন তারা ভাবছে খাবে কি? অনেকের পরিবারে নেমে এসেছে ভয়াবহ অবস্থা। কারণ অভিযানের আগে তাদেরকে কোন নোটিশ প্রদান করা হয়নি। আর অভিযানের সময় তাদের দোকানের মালামাল বের করতে কোন রকম সময় দেয়নি। এসব ব্যবসায়ী অভিযানের সময় তাদের ব্যবসার পুঁজি হারিয়ে ফেলেছে। এজন্য তারা দায়ী করেছে রেলওয়ের বিভাগীয় স্টেট অফিসার মোস্তাক আহমেদ সহ স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের যারা রেলের জমিকে নিয়ে রাজনীতির পাশাপাশি আর্থিক সুবিধা নিয়ে থাকেন। অভিযোগ রয়েছে এসব নেতাদের কারণেও উচ্ছেদকারীরা বহুতল ভবন নির্মাণকারীদের উচ্ছেদ করতে পারেন নি। এদিকে অবৈধভাবে আহসান হাবিব পলাশ নামে এক ব্যক্তি তাঁর ওষুধের দোকান উচ্ছেদের নামে গুড়িয়ে দেয়ায় রেলওয়ের পাকশী’র ষ্টেট অফিসার মোস্তাক আহমেদ সহ ৬জনের নামে নীলফামারী আদালতে মামলা করেছেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!