নামেই প্রথম শ্রেণি, রেলযাত্রীদের কপালে জুটছে ময়লা কম্বল-চাদর-ছেঁড়া বালিশ

তুর্ণা নিশীথা ট্রেনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে চট্টগ্রামে কর্মরত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক কর্মকর্তা বালিশ-চাদর নিয়ে ভোগান্তিতে পড়ে যান। ওই ট্রেনের ‘গ’ নম্বর বগির এসি বার্থে তাকে সরবরাহ করা হয় ময়লা কম্বল ও ছেঁড়া বালিশ— যা ছিল পুরোপুরি ব্যবহার অনুপযোগী। দুদকের ওই কর্মকর্তা নির্ঘুম রাত কাটিয়ে সকালে ঢাকা পৌঁছান। এরপর তিনি হোয়াটসঅ্যাপে সেই ময়লা কম্বল ও ছেঁড়া বালিশের ছবি তুলে পাঠান রেলের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তাকে। ঘটনা জেনে ওইদিনই বেডিং ইনচার্জ জিয়াউল হক ঠাকুরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

এই ঘটনা অন্তত ৫ মাস আগের হলেও ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে আসা ঢাকা-চট্টগ্রাম মেইল ট্রেনের প্রথম শ্রেণির যাত্রীদের প্রতিনিয়তই ভোগান্তি পোহাতে হয় বালিশ-চাদর নিয়ে। প্রথম শ্রেণির বার্থের যারা টিকিট কেনেন তাদের প্রত্যেকেই বালিশ-চাদর নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন।

জানা গেছে, টিকিট নেওয়ার পর অথবা পাস রিজার্ভেশন কাউন্টারে এন্ট্রি খাতায় লেখার পর আলাদাভাবে বালিশ-চাদরের জন্য ৫০ টাকা জমা দেওয়া নিয়ম রয়েছে। কিন্তু পাস এন্ট্রির পর এ বিষয়ে যাত্রীদের জানানো হয় না। ফলে ট্রেনে ওঠার পর বার্থে গিয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে প্লাটফর্ম থেকেই তাদের কিনতে হয় বালিশ-চাদর।

অথচ নির্ধারিত ৫০ টাকা কাউন্টারে জমা দিয়ে যাত্রীদের সুবিধা গ্রহণের সুবিধা রয়েছে। এ বিষয়ে যাত্রীদের কাউন্টার থেকে জানানো হয় না। এছাড়া যেসব টাকা প্লাটফর্মে বালিশ-চাদর সরঞ্জাম সরবরাহ বাবদ আয় হয় তা সরকারি কোষাগারে জমা না দেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে।

আবার অনেক সময় যাত্রী বা পাসধারীদের নাম রিজার্ভেশন রেজিস্ট্রার খাতায় লিপিবদ্ধ করা হলেও ট্রেনের যাত্রীশিটে তাদের নাম থাকে না। ফলে তাদের বার্থ ও বালিশ-চাদর নিয়ে পড়তে হয় বিড়ম্বনায়।

রোববার (২৪ জুলাই) রাত সাড়ে ১০টার ঢাকা-চট্রগ্রাম মেইলে ট্রেনে এ ধরনের সমস্যায় পড়েন রেল কর্মচারী ইদ্রিস আলীর ছেলে মহিউদ্দিন সাগর (২৫)। তার পরিবারের পাস নম্বর ০২৬২৪৫।

মহিউদ্দিন সাগর অভিযোগ করে বলেন, ‘গত ২৩ জুলাই রাতে আমি পরিবার নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পৌঁছাই। ট্রেন থেকে নেমে কমলাপুর রিজার্ভেশন কাউন্টারে গিয়ে ২৪ জুলাই রাতে চট্টগ্রাম যাবো বলে পাস দিয়ে চারজনের একটি কেবিন বুক করি। যা রিজার্ভেশন রেজিস্ট্রার খাতায় লিপিবদ্ধ করা হয়। কিন্তু ভ্রমণের দিন রাত ১০টা ১৫ মিনিটে যাত্রীশিটে আমার নামে কোনো কেবিনই দেওয়া হয়নি। ফলে চরম ভোগান্তির সম্মুখীন হই। এ বিষয়ে ট্রেনের থাকা কর্মচারীদের কেউ সহযোগিতা করেননি।’

তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে তপু নামের এক রেল কর্মচারীকে ফোন করা হলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে মৌখিকভাবে বগি নম্বর ২১২ এর কেবিন নম্বর ৬-এ যেতে বলেন। ওই কেবিনে গিয়ে দেখি, আগে থেকে সেখানে অন্য লোক ছিলেন। তালিকায় নাম না থাকায় কোনো বগিতে উঠতে দেওয়া হচ্ছিল না। অনেকটা জোর করেই খালি থাকা ১ম শ্রেণীর একটি বগিতে উঠতে পারলেও টাকা ছাড়া কোনোভাবে বালিশ-চাদর দিচ্ছিল না দায়িত্বরত কর্মচারীরা। পরে নিরুপায় হয়ে ৪০০ টাকায় বালিশ-চাদর নিই।’

আমি লিখিত অভিযোগ দেব পূর্বাঞ্চল বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও-ঢাকা) বরাবরে। ঢাকায় পাস রিজার্ভেশন কাউন্টারে বালিশ-চাদরের জন্য আলাদা টাকার কথা জানানো হয় না। এছাড়া তাদের ‘চা-পানির’ টাকা না দিলে যাত্রীসহ রেল কর্মচারীরা প্রায়ই ভোগান্তির শিকার হন বলে জানান মহিউদ্দিন সাগর।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্লাটফর্মে বালিশ-চাদর দিলে সেই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয় না।’

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে পূর্বাঞ্চল বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও-ঢাকা) শওকত জামিল মহসিনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে মুঠোফোনে ক্ষুদেবার্তা দিলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।

রেলওয়ে (পূর্ব) বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা ইতি ধর বলেন, ‘রিজার্ভেশন কাউন্টার থেকে টিকিট বা পাস নিলে কাউন্টারে জনপ্রতি ৫০ টাকা জমা নিয়ে বালিশ-চাদর দেওয়া হয়। তবে প্লাটফর্মে টাকা নিয়ে বালিশ-চাদর দেওয়ার বিষয়ে জানা নেই।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!