নাটক শেষে উঠে গেল চবির ৭ ছাত্রলীগ নেতার বহিষ্কারাদেশ, লাইনে আরও ৫

প্রক্টরের ‘মানবিক চিঠি’ গেল বিভাগে বিভাগে

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় বিভিন্ন মেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয় ১২ ছাত্রলীগকর্মীকে। এদের মধ্যে দুইজনকে এক বছর করে ও বাকি ১০ জনকে ৬ মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কারাদেশ চলাকালে সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ না নেওয়ার কথা থাকলেও বেশ কয়েকজন বর্ষ ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন।

সর্বশেষ দুই মাসের মাথায় এই বহিষ্কারদেশ প্রত্যাহার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বহিষ্কারদেশ প্রত্যাহারের বিষয়ে বিভিন্ন বিভাগে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। যদিও এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, প্রক্টর ও বহিষ্কারাদেশ প্রদানকারী হেলথ, রেসিডেন্স অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির কয়েকজন সদস্যও।

১২ জনের মধ্যে ৭ জনের বহিষ্কারাদেশ ইতিমধ্যে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে প্রক্টর অফিস সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

জানা যায়, গত ১৫ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত চিঠিতে ‘মানবিক দৃষ্টিতে’ বহিষ্কারদেশ প্রত্যাহারের বিষয়টি জানানো হয়। বিভিন্ন বিভাগের সভাপতিদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের চিঠি পেয়েছেন বলে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছেন।

প্রক্টর স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘ক্ষমা চেয়ে আবেদনের প্রেক্ষিতে মানবিক দিক বিবেচনায় গত ১৭ অক্টোবর বহিস্কার হওয়া শিক্ষার্থীর বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হলো। এরপর থেকে স্বাভাবিক নিয়মে পরীক্ষা ও একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন। তবে ভবিষ্যতে বিভাগের একাডেমিক বা পরীক্ষা কার্যক্রমে আপনি (বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী) বা আপনার পক্ষের কেউ বিঘ্ন ঘটালে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো প্রকার শৃংখলা বিরোধী কর্মকাণ্ডে আপনার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে কোনো প্রকার কারণ দর্শানো ছাড়াই আপনার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

১৭ ডিসেম্বর চবি প্রক্টর দেশের বাইরে ছুটিতে যাওয়ার কারণে এ বিষয়ে তার মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

তবে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করা সহকারী প্রক্টর শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহারের বিষয়ে জানি না। আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। এর আগে কোনো আদেশ হয়েছিল কিনা আমার জানা নেই।’

চবির রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত)অধ্যাপক এসএম মনিরুল হাসান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার জানা নেই। এটা হয়ত প্রক্টর অফিস থেকে করা হয়েছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ, রেসিডেন্স অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির সদস্য ও খালেদা জিয়া হলের প্রভোস্ট ড. মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম সোহেল চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের বিষয়টি আমার জানা নেই।’

বহিষ্কৃতরা হলেন— ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের মো. নাঈম, একই শিক্ষাবর্ষের বাংলা বিভাগের সাইফুল ইসলাম, রসায়ন বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের আশরাফুল আলম নায়েম, একই শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের আকিব জাভেদ, ইতিহাস বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের জুনায়েদ হোসেন জয় ও অর্থনীতি বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের ফরহাদ। এদের মধ্যে আশরাফুল আলম নায়েমকে ১ বছর ও বাকিদের ৬ মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এরা সবাই সিক্সটি নাইন গ্রুপের কর্মী।

অন্যদিকে সিএফসি গ্রুপের বহিষ্কৃতরা হলেন— আইন বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের মির্জা খবির সাদাফ, একই বিভাগের ১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের খালেদ মাসুদ, লোক প্রশাসন বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের অহিদুজামান সরকার, সমাজতত্ত্ব বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের আরিফুল ইসলাম, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের তানজিল হোসেন ও আরবি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের তৌহিদ ইসলাম। এদের মধ্যে সাদাফকে এক বছর ও বাকিদের ৬ মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!