নাছির—নওফেল অনুসারীদের ‘ভাগবাটোয়ারায়’ হতে পারে স্বেচ্ছাসেবকলীগের কমিটি

চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভার্চুয়াল সম্মেলন আজ। সংগঠনটির ২৪ বছরের পথ চলায় চট্টগ্রামে প্রথম সম্মেলন এটি। ২০ বছর পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি পেতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম নগর স্বেচ্ছাসেবকলীগ।

স্বাভাবিকভাবেই সম্মেলন নিয়ে মাতামাতি থাকলেও কোন প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব নির্বাচন হবে সেটি নিয়ে দোলাচাল থেকেই গেছে। তবে প্রচলিত নিয়মে গ্রুপিং হিসেবে ‘ভাগবাটোয়ারা’ করেই নেতৃত্ব বাছাই করা হতে পারে বলে ইতোমধ্যে গুঞ্জন উঠেছে।

নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের একটি সূত্রে জানা গেছে, দুই ধারায় বিভক্ত নগর আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে আলোচনা করে এরই মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন কমিটিতে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারীদের একজনকে সভাপতি ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারীদের একজনকে সাধারণ সম্পাদক করার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এমন হলে এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা দেবাশীষ নাথ দেবু ও কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা হেলাল উদ্দিনকে নিয়েই কমিটি ঘোষণার সম্ভাবনা বেশি। তবে এই প্রক্রিয়ার বাইরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্তমান কমিটির তিন নেতা মিলে সাদেক হোসেন পাপ্পুকে সভাপতি করার বিষয়ে অনড় বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।

এছাড়াও সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় আছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল অনুসারী আজিজুর রহমান আজিজ ও লালখান বাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল হাসনাত বেলাল। অন্যদিকে আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীদের মধ্যে রয়েছেন সুজিত দাশ, মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ও আব্দুর রশীদ লোকমানের নামও আলোচিত হচ্ছে।

এদিকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্তমান নেতাদের পছন্দের তালিকায় আছেন সাদেক হোসেন পাপ্পু ছাড়াও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় আছেন দেলোয়ার হোসেন ফরহাদ, আনোয়ার উদ্দিন বাপ্পী, অ্যাডভোকেট তসলিম উদ্দিন, আজাদ খান অভি, নুরুল কবির ও শাহেদ আলী রানা। এছাড়া আলোচনায় আছে দেবাশীষ আচার্য্যের নামও। তিনি সিডিএর সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুচ ছালামের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

করোনাভাইরাসের প্রকোপে সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে দুই দফায় পেছানোর পর ১৯ জুন চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের ভার্চুয়াল সম্মেলনের নতুন দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিতব্য এই সম্মেলনে কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারা ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেবেন বলে জানানো হয়েছে।

তবে সম্মেলনস্থলে সশরীরে উপস্থিত থাকবেন বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ সভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা।

এর বাইরে ২৫০ ডেলিগেটর ও ২৫০ কাউন্সিলর এই সম্মেলনে যোগ দিতে পারবেন। তবে নির্ধারিত এই ৫০০ জন ছাড়া অন্যকোনো নেতাকর্মী সম্মেলনস্থলে প্রবেশ করতে পারবেনা বলে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

এছাড়াও সম্মেলনের নিরাপত্তার জন্য সম্মেলনস্থলের কয়েক কিলোমিটার এলাকা সিসিটিভি ও ড্রোন দিয়ে মনিটরিং করা হবে বলেও জানানো হয়েছে সংগঠনটির পক্ষ থেকে।

সম্মেলনের নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জিয়াউদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা এখনও এই বিষয়ে নিশ্চিত নই। এসব কিছু কাউন্সিলেই নির্ধারণ হবে। তবে কাউন্সিলরদের ভোট নেওয়া সম্ভব না হলে আমরা প্রস্তাব দিয়েছি কাউন্সিলরদের থেকে নাম নিয়ে, সাবজেক্ট কমিটি করে নেতৃত্ব নির্বাচন করতে। এমন হলে দীর্ঘদিন সংগঠনে যাদের ত্যাগ ও শ্রম রয়েছে তারা মূল্যায়িত হবে।’

স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘যেহেতু দীর্ঘদিন সম্মেলন নাই, সম্মেলন সচল করার লক্ষ্যে যে প্রক্রিয়া করলে সুবিধা হয় সেভাবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। চট্টগ্রামে সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ও নগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের নেতৃবৃন্দ আছেন। সবার সাথে আলাপ আলোচনা করে কিভাবে কী করা যায় সেটা ঠিক করবো আমরা।’

কাদের গুরুত্ব দিয়ে কমিটি করা হবে— এমন প্রশ্নের জবাবে নির্মল রঞ্জন গুহ বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবকলীগ হচ্ছে সাবেক ছাত্রনেতাদের একটা সংগঠন। এখানে ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃবৃন্দ যারা ছিল, যারা ছাত্রলীগ করে দীর্ঘদিন পদ-পদবি ছাড়া আছে আমরা সাধারণত তাদের গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আর বিগত কমিটিতে দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ার কারণে যারা মূল্যায়িত হয়নি তাদের সকলের বিষয় দেখেশুনে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো। দীর্ঘদিন পর সম্মেলন হচ্ছে। এখানে একটা সুন্দর স্ট্রাকচার দাঁড় করানোই আমাদের লক্ষ্য। আমরা তো সিভিও নিয়েছি।’

এদিকে দীর্ঘ ২১ বছর সম্মেলন না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক কেবিএম শাহজাহান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রথম দিকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কাঠামো দাঁড় করানোর বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। খুব বেশি নেতাকর্মী এই সংগঠনের বিষয়ে আগ্রহী ছিল না। শুধু সংগঠন সম্পর্কে বোঝাতেই আমাদের কয়েক বছর লেগেছে। এরপর তো বিএনপি ক্ষমতায় এলো। আমাদের আন্দোলন-সংগ্রাম নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে সাতটা বছর। এরপরও আমরা সম্মেলন করতে প্রস্তুত ছিলাম। কেন পারিনি তা দলীয় ফোরামে বলেছি। আমাদের আগ্রহের কোনো ঘাটতি ছিল না। থাকলে কেন্দ্রীয় কমিটি সম্মেলন দিতে বলার ২৩ দিনের মাথায় আমরা সম্মেলনের দিনক্ষণ ঘোষণা করতে পারতাম না।’

এআরটি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!