নাছিরের বাজিতে যেভাবে হেরে গেলেন কাদের

শনিবার যা ঘটেছিল গণভবনের মনোনয়ন বোর্ডে

আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনমনীয় অবস্থানের কারণে হেরে গেলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক বসেছিল। এই বৈঠকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানাচ্ছে যে, এই মেয়র পদের জন্য আ জ ম নাছিরের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আ জ ম নাছিরকে কেন আরেকবার মেয়র পদের জন্য মনোনয়ন দেওয়া উচিত— এ বিষয়ে অনেক যুক্তিও তিনি উপস্থাপন করেছিলেন। সেই সঙ্গে তার পক্ষে ছিলেন মনোনয়ন বোর্ডের অনেক সদস্যও। শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে অনমনীয় অবস্থান গ্রহণ করেন। মনোনয়ন বোর্ডের সভায় তিনি বলেন যে, ‘নাছিরকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না, তার বদলে অন্য কারও নাম বলো।’

এ নিয়ে বিভিন্ন বিভিন্ন যুক্তি উপস্থাপন করা হলেও শেখ হাসিনা তার অবস্থানে অনড় ছিলেন। শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার দৃঢ়তার কাছে পরাজিত হতে হয় ওবায়দুল কাদেরসহ কয়েকজনকে।

আরেকটি পক্ষ ছিল যারা আবদুচ ছালামের পক্ষে। কিন্তু যেহেতু আবদুচ ছালাম টানা দশ বছর চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব ছিলেন, তার বিরুদ্ধেও নানারকম অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। এ কারণে তিনিও আর আলোচনায় আসেননি। শেষ পর্যন্ত নাটকীয়ভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেজাউল করিমের নাম উচ্চারণ করেন এবং তাকে মনোনয়ন দেওয়ার কথা বলেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, পরিস্থিতি তখন এমন ছিল যে, শেখ হাসিনার এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো ছাড়া অন্য কারো কোনো উপায় ছিল না।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি এবং চমক সৃষ্টির ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা এক অসামান্য উচ্চতায় নিজেকে প্রতিস্থাপিত করেছেন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মনোনয়ন বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সেটাই আরেক ঝলক দেখলো আওয়ামী লীগ। এমনকি চট্টগ্রামের নেতাকর্মীরাও চিন্তাও করতে পারেনি যে প্রায় আনকোরা প্রার্থী রেজাউল করিম আওয়ামী লীগের মেয়র পদের জন্য মনোনয়ন পাবেন। কারণ কয়দিন আগেই তিনি জাতীয় নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৮ আসনের জন্য মনোনয়ন চেয়েছিলেন। সেই মনোনয়ন চেয়ে তিনি ব্যর্থ হন। এবারও তিনি মনোনয়ন পাবেন না ভেবেই তিনি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন বলে তার ঘনিষ্ঠদের জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট ওই সূত্র বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনীতি এমনই, একজন মানুষ যখন দীর্ঘদিন ধরে দলের জন্য নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেন তাকে তিনি এক না এক সময় পুরস্কৃত করেন। শুধু প্রয়োজন ধৈর্য্য ধরে থাকা। রেজাউল করিম ধৈর্য্য ধরে ছিলেন বলেই এই পুরস্কার তিনি পেলেন। আরেকটি বিষয় আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য, তা হলো তিনি সবসময় বিভিন্ন পুরস্কার প্রদানের ক্ষেত্রে খোঁজ করেন যে তিনি কখনও কিছু পেয়েছেন কিনা। রেজাউল করিম গত ১১ বছরের ক্ষমতার মেয়াদে না পেয়েছেন মনোনয়ন, না পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় উচ্চ পদ। এ কারণেই তিনি মনোনয়ন পেয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক মহলের দাবি, শেখ হাসিনা যে সবসময় ত্যাগী পরীক্ষিত রাজনৈতিক কর্মীদের পক্ষে— এই মনোনয়নের ক্ষেত্রে তিনি সেটি আরেকবার প্রমাণ করলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই সিদ্ধান্তের ফলে তৃণমূলে যারা কিছুটা হলেও হতাশ হয়ে পড়েছিল, তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কি হবে? আওয়ামী লীগের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে কি হবে তারা আশার আলো দেখছেন। কারণ তাদের মধ্যে একটি বদ্ধমূল ধারণা এই মনোনয়নের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হলো, দলের জন্য যদি নিবেদিতভাবে কাজ করা যায় তা আওয়ামী লীগ সভাপতির দৃষ্টি এড়ায় না। দল অবশ্যই তাকে একদিন মূল্যায়ন করবে। রেজাউল করিমের মেয়র মনোনয়ন পদ তার একটি নতুন উদাহরণ।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!