নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের জিরো পয়েন্টে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা

নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের জিরো পয়েন্টে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা 1মোঃ ইউনুছ, নাইক্ষ্যছড়ি ঃ পার্বত্য বান্দবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের পিলার ৪১ন¤॥^র থেকে ৪৭ন¤॥^র পিলারে ঘুমধুম,তুমরু,চাকঢালা,আশারতলীসহ বেশ কয়েকটি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। তবে হঠাৎ করে চাকঢাল সীমান্ত দিয়েও রোহিঙ্গা আসার খবরে বিজিবির রেজিওন কমন্ডার কর্ণেল এম এম আনিছুর রহমান, নাইক্ষ্যংছড়ি ৩১ বিজিবির অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল আনোয়ারুল আযীমসহ বিজিবি কর্মকর্তারা চাকঢালা সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। এসময় তারা রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে ঠেকাতে বিজিবিকে সর্তক থাকার নির্দেশ দেন। নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান তসলিম ইকবাল চৌধুরী জানান, চাকঢালা সীমান্তের পরিস্থিতি হঠাৎ করেই অবনতি হয়েছে। সোমবার দুপুর থেকে ২০ হাজারের মত রোহিঙ্গা শিশু,নারী-পুরুষ সীমান্তে পলথিন দিয়ে বাসা বেধে তাদের পালিত গরু সহ অবস্থান নিয়েছে। তবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে স্থানীয়রা বিজিবিকে সহায়তা দিচ্ছেন বলে জানান। এছাড়াও বিজিবির সাথে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে স্থানীয় লোকজনও। ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানান সীমান্তে গত শুক্রবার থেকে শত শত রোহিঙ্গা নারী, শিশু অবস্থান নেয় এর মধ্যে সোমবার দুপুরে আবারো হঠাৎ করেই মিয়ানমারের ক্যাম্প থেকে গুলিবর্ষণের ঘটনা নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে সীমান্তে।
জানা যায় গত শুক্রবার থেকে মিয়ানমার সেনাদের নির্যাতনের মুখে প্রাণ বাঁচাতে আরকন রাজ্য থেকে বাংলাদেশ সীমান্তে দলে দলে ছুটে আসে হাজার হাজার মুসলিম রোহিঙ্গারা। তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পেরে নারী-শিশু বুদ্ধাসহ অসংখ্য রোহিঙ্গা জিরো পয়েন্টে অবস্থান করছেন। সোমবার দুপুর থেকে পার্ব্ত্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তে মিয়ানমারের একদল সেনা সদস্য মহড়া দিতে দেখে জিরো পয়েন্টে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এসময় তারা দিগ্বিদিক ছুটাছুটি করতে থাকেন। এ পারে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষি বিজিবিও কড়া অবস্থান নেয় এবং জিরো পয়েন্ট থেকে সবাইকে সরে আসার নির্দেশ দেয়। স্থানীয়রা জানান ২৮ আগষ্ট সোমবারও মিয়ানমার সীমান্তের ভেতরে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। সীমান্তের এই পাড় থেকে আগুনের কুনন্ডলি ও ব্যাপক পরিসরে ধোঁয়া দেখা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর ফের হত্যাযজ্ঞ এবং জ্বালাও-পোড়াও শুরু করেছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে উগ্রপন্থী বৌদ্ধারাও চালায় হত্যাযজ্ঞ। বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া আর পাশাাশি রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ যেন নিত্য ব্যাপার। চলতি মাসের শুরুতে রাখাইনে সেনা মোতায়েন করে মিয়ানমার সরকার। ঘোষণা দেয় অভিযানের। এরই মধ্যে গ্রামের পর গ্রাম রোহিঙ্গাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। ২০১৬সালে অক্টোবর মাসে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো মিয়ানমার সেনাদের এমনই এক হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় জাতিসংঘের সাবেক প্রধান কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত কমিশন বৃহস্পতিবার তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করে। কমিশন রোহিঙ্গাদের ওপর থেকে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার এবং তাদের নাগরিকত্ব প্রদানের আহ্বান জানায়। প্রতিবেদন প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নতুন করে হামলা ও হত্যাযজ্ঞ শুরু করে মিয়ানমার। এই সংঘর্ষে সোমবার সকাল পর্যন্ত সরকারি হিসাবে নিহতের সংখ্যা ১০০ শত ছাড়িয়েছে, যার মধ্যে ১২ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য রয়েছেন। তবে রোহিঙ্গা নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠনের দাবি, নতুন করে ৮ শতাধিক রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে। সংগঠনটি দাবি করে, রাখাইনের উত্তরাঞ্চলীয় রাথেতুয়াং শহর এলাকা গত দুই সপ্তাহ ধরে অবরুদ্ধ। সেখানে রোহিঙ্গারা না খেয়ে মারা যাচ্ছেন। মাউংদোতেও তারা যখন একই কাজ করতে যাচ্ছিল, তখন বার্মিজ উপনিবেশিক বাহিনীকে হটাতে চূড়ান্ত পর্যায়ে এই পদক্ষেপ নিয়েছি। বরাবরের মতো গত বছরের অক্টোবরে এ ধরনের সংঘষের পর প্রাণ বাঁচাতে প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। পরে তারা কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নেন। বৃহস্পতিবারের সংঘষের পরও একইভাবে স্রোতের বেগে সীমান্তে আসছে নির্যাতিত রোহিঙ্গারা। মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রায় ২৭০ কিলোমিটার সীমান্ত। এসব এলাকায় বাংলাদেশ সীমান্ত বাহিনী বিজিবির কড়া নজরদারি থাকা সত্ত্বেও তারা রাতে অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা করছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!