নগর বিএনপির বর্ধিত সভা বিতর্ক, অসন্তোষ বাড়ছেই

নগর বিএনপির নেতাদের অভিযোগ- দলের প্রয়োজনে নয়, নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনের জন্য আয়োজন করা হয়েছে বর্ধিত সভা। তাদের দাবি, বর্ধিত সভা আয়োজন করা হয় হাই কমান্ডের সিদ্ধান্ত যারা বাস্তবায়ন করবেন অর্থাৎ ওয়ার্ড ও থানা কমিটির নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে।

থানা কমিটির সুপার ফাইভ এবং ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে নগরের কার্যনির্বাহী কমিটির বর্ধিত সভা করাটাই হলো নিয়ম।

কিন্তু শাহাদাত-বক্করের নগর কমিটি তাদের মেয়াদে কোন বর্ধিত সভা করতে না পারলেও নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্ধিত সভার নামে মূলত কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকই করছেন।

বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) সকাল ১০টা থেকে নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে নগর বিএনপি এই বর্ধিত সভার আয়োজন করে। এতে চট্টগ্রাম থেকে বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়া সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

এই বর্ধিত সভাকে তথাকথিত আখ্যা দিয়ে দুইজন সহ-সভাপতি ও তিনজন যুগ্ম সম্পাদক একই সুরে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, এই সভার চিঠি ছাড়া গত সাড়ে তিন বছরে কোন ডকুমেন্ট নগর বিএনপি থেকে আমরা পাইনি। আমাদের একাধিক সহ-সভাপতি আছেন যারা কমিটি গঠনের পর নগর অফিসে পা ফেলেননি। ২৭৫ সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটির সবাই সবাইকে চিনি না আমরা।

সাড়ে তিন বছর দলের প্রয়োজনে একটি বর্ধিত সভা নগর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক আহ্বান করতে না পারলেও নিজেদের প্রয়োজনে ঠিকই তা করতে পেরেছেন।

বর্ধিত সভার ফলাফল নিয়ে তারা বলেন, এই সভা নির্বাচনে তেমন কোন ভূমিকা রাখতে পারবে কিনা যথেষ্ট সন্দেহ আছে।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাওয়া এক কাউন্সিলর প্রার্থী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, আমি নগর কমিটিতে আছি। আমার ওয়ার্ডেই কমিটি নেই। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে কেন্দ্র কমিটি গঠন হবে। তাও এক দিনের জন্য। ভোট কেন্দ্রের ঝামেলায় কেউ যেতে চাচ্ছেন না। তাদের দাবি, দলে আমাদের কোন পদ-পদবির পরিচয় নেই। আমরা কেন ঝুঁকি নিবো? এই অবস্থায় নির্বাচন কীভাবে পরিচালনা করবো এখনো কূল কিনারা পাচ্ছিনা।

প্রসঙ্গত, গত ৬ আগস্ট ডা. শাহাদাত হোসেন ও আবুল হাশেম বক্করের নেতৃত্বাধীন কমিটির তিন বছরের মেয়াদে শেষ হয়েছে। নিজেদের মেয়াদে আকবরশাহ থানা ছাড়া নগরীর অন্য কোনো সাংগঠনিক থানার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনি তারা। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর দিন অর্থাৎ ৭ আগস্ট কোতোয়ালী থানা কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

থানা কমিটিগুলো চলেছে ‘সুপারফাইভ’ ঘরানায়। আহ্বায়ক, যুগ্ম আহ্বায়ক, সদস্য সচিব, অর্থসচিব, সদস্য-এই পাঁচটি পদে নেতার নাম ঘোষণা করেই দায়িত্ব শেষ করেছে নগর কমিটি।

আহ্বায়ক কমিটিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল সেই এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে নগর কমিটি থেকে অনুমোদন নিতে। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কমিটি করছে বললেও কোনো থানাই তা নগর কমিটির কাছে জমা দেয়নি।

আবার খুলশী থানা কমিটিতে হাতও দিতে পারেনি নগর কমিটি। কারণ ওই কমিটির আহবায়ক অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার। যিনি দলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমানের ঘনিষ্ঠজন।

ওয়ার্ড কমিটিগুলোও চলছে থানা কমিটির মতো। জালালাবাদ, পাঁচলাইশ, বকশিরহাট, কাট্টলীসহ কয়েকটি ওয়ার্ডে আহবায়ক আর সদস্য সচিবের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। জামালখান, বাগমনিরাম, উত্তর আগ্রাবাদ, মাদারবাড়ি, উত্তর মাধ্যম হালিশহর, পাথরঘাটাসহ কয়েকটিতে পাঁচ সদস্যের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

আবার কোনো কোনো আহবায়ক কমিটিতে ১০ থেকে ২০জন সদস্য রাখা হয়েছে। চকবাজার, বাকলিয়া, চান্দগাঁও, মোহরাসহ কয়েকটি ওয়ার্ডে পূর্ণাঙ্গ কমিট ঘোষণা করা হয়েছে, তবে তা সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ।

গত ২০ জানুয়ারি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্কাইপের সংলাপে চট্টগ্রাম নগর নেতারা তোপের মুখে পড়েন। তারেক রহমান নগর কমিটি ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এরই প্রেক্ষিতে নির্বাচনের পর নগর কমিটি ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। দলের নেতাদের মতে, দলকে সুসংগঠিত না করে, নাজুক অবস্থায় রেখে যতই বর্ধিত সভা করা হোক, নির্বাচনের ফলাফল কতটুকু ঘরে তোলা যাবে সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।


এসএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!