নগর পুলিশের ঈদ/ এ পথচলাতেই আনন্দ তাদের

মানুষের নিরাপত্তাই তাদের কাছে আনন্দের। সবাই যখন ঈদের জামাতে, পাশেই দাঁড়িয়ে তারা চোখকান খোলা রেখে সতর্ক অঘটনের আশঙ্কায়। সবাই যখন ঈদের আনন্দে, তখন তারা মানুষের নিরাপত্তা দেওয়ার কাজে ব্যস্ত। ঈদের নতুন পাঞ্জাবি কিংবা জামাটাও হয়তো রয়ে গেছে ব্যারাকের সেই ট্রাঙ্কেই। সেদিকে তাকানোর ফুরসৎ কোথায়! নিরাপত্তাই সবার আগে — প্রতিবারের মতো এবারও এই একই লক্ষ্য নিয়ে ঈদের দিনগুলোতে কাজ করে যাচ্ছে নগর পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। মা বাবা, স্বামী-স্ত্রী-সন্তান কিংবা পরিবার-পরিজনের স্নেহ মমতা আর ভালোবাসাবঞ্চিত পুলিশ সদস্যরা ঈদ আনন্দ উপভোগ করছেন মানুষের ঈদ আনন্দের মাঝেই। তারা মনে করেন পেশাটাই সবচেয়ে আগে— এ পথচলাতেই আনন্দ।

chittagong-metropolitan-police-cmp-eid
নিজের নিরাপত্তা জ্যাকেট মাটিতে বিছিয়ে ঈদের নামাজ পড়ার চেষ্টা
ঈদের দিন দামপাড়া পুলিশ লাইন ফটকে দায়িত্বরত ছিলেন কনস্টেবল সাইয়িদ। নোয়াখালীর লক্ষীপুরে তার বাড়ি। চাকরিতেও নতুন। যোগদানের পর এটাই প্রথম ঈদ তার। শৈশব কেটেছে গ্রামে। প্রতিবার মা বাবা, ভাই বোনসহ পরিবারের সঙ্গে ঈদ কাটালেও এবারের ঈদ তার কাছে অনেকটা ভিন্ন। শৈশবের স্মৃতি এবারের ঈদের সকালটায় তার মনে বিষণ্ন ভাব এনে দিলেও পেশাটার গুরুত্ব ভেবে আবার আনন্দও পেয়েছেন। মন কি মানে তবু! আলাপচারিতায় চোখের তারায় জল টলমল করছিল কনস্টেবল সাইয়িদের।

একই স্থানে দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত ছিলেন হাবিলদার আলমগীর। তার বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ এলাকায়। পরিবারের সব সদস্যই থাকে গ্রামে। পুলিশের চাকরিতে যোগদান অনেক আগে হওয়ায় সবই মেনে নিতে অভ্যস্থ তিনি। তাই কর্মরত নবীন কনস্টেবলদের সাহস আর সান্ত্বনা দিয়ে মনোবল তৈরির কাজটিই করে গেছেন তিনি ঈদের দিনটায়।

সিএমপির চকবাজার থানার এসআই শামসুল ও কনস্টেবল ফরিদুল। ঈদের দিন সকাল ৯টায় নগরের এমএম আলী রোডে দায়িত্ব পালন করছিলেন তারা। কথা হয় কনস্টেবল ফরিদুলের সঙ্গে। বাড়ি দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়ায় হলেও দায়িত্ব আর কতর্ব্যের তাগিদে ঈদে বাড়িতে যাওয়ার ছুটি হয়নি তার। পরিবারের জন্য একটু কষ্ট লাগলেও হাসিমুখেই দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বলেন, ‘ছোট্ট মেয়েটা বেশ অসুস্থ। ঈদের আগের রাতে ফোনে আবদার করে লিচু আনতে বললেও তা আর কেনা হয়নি।’

কোতোয়ালি থানার পুলিশ কনস্টেবল রাসেল। সিএমপিতে যোগদান গত বছরেই। বাড়ি শরীয়তপুর। ঈদের দিনে বাড়িতে থাকা মা-বাবা, ভাই-বোন সবাইকে বেশ মনে পড়ছিল তার। আইনশৃঙ্খলার কথা ভেবে ছুটির আবেদনও করেননি তিনি। ঈদের প্রথম দিন রাত সাড়ে তিনটায় কর্তব্যরত ছিলেন সংবাদপত্রপাড়া হিসেবে পরিচিত মোমিন রোড চেরাগি পাহাড় মোড়ে। বললেন, ‘এ পেশাকেই মনেপ্রাণে মেনে নিয়েছি। তাই লোকবলের কথা ভেবে ছুটির আবেদন করাটা সমুচিত মনে করিনি।’

ঈদের দিন পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে অসুস্থ পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন সিএমপি  কমিশনার মাহাবুবর রহমান
ঈদের দিন পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে অসুস্থ পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন সিএমপি কমিশনার মাহাবুবর রহমান

খুলশী থানায় কর্মরত উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর। ছুটি পাননি এবারও। স্ত্রী-সন্তানরা ছুটি পাবেন বলেই পথ চেয়ে বসে ছিলেন। ঈদের দিন ভোর চারটায় ডিউটি শেষ করে আবার সাড়ে ছয়টায় চলে গেলেন জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদের সামনে। সকাল ১১টায় তার সঙ্গে দেখা হয় টাইগারপাস মোড়ে। ডিউটির কারণে সকালে সেমাই খাওয়ার সুযোগ হয়নি তার। তিনি বললেন, মানুষের নিরাপত্তা দেওয়াটাই আমাদের পেশার অন্যতম কাজ। একটু হয়তো মন খারাপ থাকবে। তবে মানুষের মুখে একটু হাসি আর আনন্দ দেখতে পেলে সেখানেই আমি নিজের আনন্দ খুঁজে পাই।

সামিরা এবং লামিয়া। দুজনেই কর্মরত আছেন র‌্যাব ৭-এ। সামিরার বাড়ি ঢাকার কাঁচপুর আর লামিয়ার বাড়ি চাঁদপুরে। ঈদের দ্বিতীয় দিনে তারা কর্তব্যরত ছিলেন চট্টগ্রাম রেলস্টেশন এলাকায়। বাড়িতে মা বাবা, ভাই বোন সবাইকে খুব মনে পড়লেও পেশাগত দায়িত্বকে তারা এর চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন বলে জানালেন।

রেলওয়ে জিআরপি থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান। ঈদ কেটেছে রোজকার ডিউটিতেই। এবার মলম ও অজ্ঞান পার্টির কবল থেকে ঈদযাত্রীদের রক্ষায় বেশ সজাগ ছিল রেল পুলিশ। ঈদের আগের ভোররাত সাড়ে চারটায় বাসায় গিয়ে ঈদের দিন (বুধবার) সকাল থেকে মধ্যরাত অবধি কর্মরত ছিলেন তিনি। ঈদের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার সকালেও কথা হয় মোস্তাফিজের সঙ্গে। তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, পেশাটাই সবচেয়ে পবিত্র, এ পথচলাতেই আনন্দ।

এদিকে ৫ জুন ঈদের দিন সকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিনের সঙ্গে নগর পুলিশের কমিশনার মাহাবুবর রহমান চট্টগ্রামের দামপাড়া পুলিশ লাইন্সের মাল্টিপারপাস শেডে ঈদের নামাজ পড়েন। নামাজ আদায় করার পর সিএমপি কমিশনার পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কূশল বিনিময় করেন। পরে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে সেখানে চিকিৎসাধীন অসুস্থ পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। রোগীদের চিকিৎসার খোঁজও নেন তিনি।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!