নগরে তৎপর অজ্ঞান পার্টি, সর্বস্বান্ত ১৯ জনের ঠিকানা মেডিকেলের শয্যা

চট্টগ্রাম নগরে তৎপর হয়ে উঠছে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। গত কয়েকদিনে এদের দৌরাত্ম্যে অন্তত ১৯ জনের ঠিকানা হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শয্যা। ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে পুরোমাত্রায়। তারা যাতে সংগঠিত হতে না পারে সেজন্য গরুর বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে পুলিশ সক্রিয় রয়েছে বলে জানা গেছে।

শুক্রবার (১৯ জুলাই) বিকাল পৌনে ৫টায় নগরীর টাইগারপাস পুলিশ বক্সের সামনে থেকে অজ্ঞান পার্টির সক্রিয় সদস্য চুনু (৩৫) ও আকবরকে (৩৮) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাদের দেওয়া তথ্য মতে একই গ্রুপের জসিম (৩২) ও নুর ইসলামকে (৩৫) পুরাতন স্টেশন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তাদের কাছ থেকে আট পাতা ডিসোপ্যান-২ ঘুমের ওষুধ, ওষুধপূর্ণ গুলের কৌটা চারটি, ঘুমের ওষুধ মেশানো জুসও পাওয়া যায়। এসবকে অস্ত্র হিসেবে ধরে নিয়ে মানুষকে অজ্ঞান করে সর্বস্বান্ত করা হয়।

নগরীর কোতোয়ালি থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে নগর পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার নোবেল চাকমা জানান, চারজনই আন্তঃজেলা অজ্ঞান পার্টির সক্রিয় সদস্য। তারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় গত ১০ বছর ধরে এই ধরনের কাজ করে আসছিল। ১০ বছর আগে ভোলার লালমোহনের রফিক বিশ্বাস প্রকাশ বলির কাছে এই কাজের হাতেখড়ি নেয় তারা। এদের সবার বাড়িই ভোলা জেলায় হওয়ায় তারা ‘ভোলাইয়া গ্রুপ’ নামে পরিচিত।

নোবেল চাকমা জানান, ‘সারা দেশে গত ১০ বছরে এই অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়েছে অন্তত ৮০০ জন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম নগরে তাদের শিকার শতাধিক। তবে গত ১০ বছরে মুন্সিগঞ্জ জেলার মাওয়া ফেরীঘাট এবং নোয়াখালীতে মাত্র দুবার গ্রেপ্তার হয়েছিল তারা।’

কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসিন বলেন, ‘এই চক্রের সদস্যরা সাধারণত নিজ বাড়ি ভোলা যাওয়ার পথে নোয়াখালী হয়ে লক্ষীপুর মজু চৌধুরী ঘাট হয়ে লঞ্চযোগে যাতায়াত করে। যাতায়াতের সময় চট্টগ্রাম থেকে নোয়াখালীতে বাসে অথবা নোয়াখালী থেকে বাসে মজু চৌধুরী ঘাটে এবং মজু চৌধুরী ঘাট থেকে লঞ্চে ভোলা যাওয়ার পথে সহজ সরল লোকজনকে অজ্ঞান করে তাদের সর্বস্বান্ত করে থাকে।

ওসি মহসিন বলেন, ‘চট্টগ্রাম নগরের নিউমার্কেট, টাইগারপাস, কদমতলী বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, অক্সিজেন মোড়, বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল, অলংকার মোড়, জিইসি মোড়, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, আগ্রাবাদ, হালিশহরসহ নগরের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মোড় থেকে ছেড়ে যাওয়া বাসের সহজ সরল যাত্রীকে টার্গেট করে তাদের পাশে বসে এই অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। এরপর কথাবার্তার মাধ্যমে খাতির জমিয়ে নিজ আয়ত্বে এনে টার্গেটকে অজ্ঞান হওয়ার উপকরণ মিশিয়ে কিছু খেতে দেয়।’

তিনি বলেন, ‘কখনও সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকের বেশে, আবার কখনো যাত্রীবেশে ঘুরে বেড়ায় অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। সাধারণ পথচারীও সেজে থাকে অনেক সময়। সুযোগ পেলেই লোকজনের সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে যায়। কিন্তু ভুক্তভোগীরা বেশিরভাগ সময় মামলা না করায় এরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।’

থাকতে হবে সতর্ক

নগরবাসীকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়ে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মহসিন বলেন, রাস্তায় অপরিচিত কারও কাছ থেকে যাতে কেউ কিছু না খান। নগদ টাকা পরিবহন ও রাস্তায় চলাফেরার সময় সতর্ক থাকতে হবে। আর এই ধরনের কিছু দেখলেই ৯৯৯ নম্বরে কল করার অনুরোধ জানান তিনি।

এইচটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!