নগরে খোঁড়াখুঁড়ির যন্ত্রণা, চসিকের ঘুম ভাঙছে শেষবেলায়

রাস্তা সংস্কারের টাকা বাড়াতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি

চট্টগ্রাম নগরীজুড়ে নির্বিচারে অসহনীয় খোড়াখুঁড়িতে নাগরিক জীবনে নেমে এসেছে অন্তহীন দুর্ভোগ। পানির পাইপলাইন বসাতে গিয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসা দীর্ঘদিন ধরে যত্রতত্র এই খোড়াখুঁড়ি চালিয়ে গেলেও নগর কর্তৃপক্ষ হিসেবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) জনভোগান্তি কমাতে কোনো তৎপরতাই দেখা যায়নি। বরং সড়ক খোড়াখুঁড়ির পর সেটি সংস্কারের টাকা বুঝে নিতেই বেশি উদগ্রীব দেখা গেছে সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বশীলদের। এখন শেষবেলায় এসে চিঠি চালাচালি শুরু করেছে সংস্থাটি। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য চিঠিটিই রাস্তা সংস্কারের টাকা বাড়ানোর চিঠি।

জানা গেছে, নগরবাসীর তীব্র সমালোচনার মুখে আগামীতে চট্টগ্রাম নগরের সড়কগুলোতে ওয়াসার সংস্কার কাজের ক্ষেত্রে শর্তসাপেক্ষে অনুমতি দেয়ার কথা ভাবছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। ওয়াসার সংস্কার কাজের বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছে চসিক। এছাড়া সংস্কার কাজে সৃষ্ট জনদুর্ভোগের বিষয়ে সচেতন হতে সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থাগুলোকে চিঠি দিয়ে সতর্কও করেছে চসিক।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, যেখানে ইচ্ছে সেখানে খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করতে এমন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে খননের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট সড়কের জন্য অনুমতি নিতে হবে ওয়াসাসহ অন্যান্য সেবা সংস্থাগুলোকে। সেক্ষেত্রে সংস্কার কাজের টাইম ফ্রেমও জানাতে হবে চসিককে। এছাড়া খনন করা সড়কগুলো সংস্কারে ওয়াসা যে ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে তা অপর্যাপ্ত। এই টাকার পরিমাণ বাড়াতেই মূলত মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হচ্ছে।

ওয়াসা, পিডিবি, কর্ণফুলী গ্যাস, বিটিসিএলসহ যেসব সেবা সংস্থা রাস্তা খুঁড়ে বিভিন্ন লাইনের কাজ করে, রাস্তা সংস্কারের জন্য তারা মন্ত্রণালয় থেকে ধার্য করা অংকের ক্ষতিপূরণ চসিককে দেয়। এই ক্ষতিপূরণের টাকার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০১২ সালে। বর্তমানে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ায় ঐ ক্ষতিপূরণ দিয়ে সংস্কার কাজ চালাতে হিমশিম খাচ্ছে চসিক। তাই নির্মাণ সামগ্রীর বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী সংস্কারের অর্থ পেতে মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেবে তারা।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী লে.কর্নেল সোহেল আহমেদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এখন সেবা সংস্থাগুলো যেভাবে একটা অনুমতি নিয়ে যেখানে ইচ্ছে সেখানে খোঁড়াখুঁড়ি করছে তার জায়গায় সুনির্দিষ্ট করে অনুমতি দেয়ার চিন্তা করছি আমরা। সামনে থেকে সুনির্দিষ্টভাবে স্থান ও সময় উল্লেখ করে রাস্তা খননের অনুমতি নিতে হবে সবাইকে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এছাড়া সংস্কার কাজে রাস্তা খোঁড়া হলে খনন শেষে ঐ সংস্থা ও চসিকের যৌথভাবে একটা সার্ভে করার আইন থাকলেও অনেক সময় তারা আমাদের না জানিয়ে খনন করা রাস্তা রিফিল করে দিয়ে চলে আসেন। এতে আমরা অনেক ক্ষেত্রে সঠিক হিসাবও পাই না। এতে চসিক যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয় তেমনি রাস্তা সংস্কার কাজেও সমস্যা হয়। আর রাস্তার সংস্কারে যে টাকা এখন আমরা পাচ্ছি সেটা ২০১২ সালে সর্বশেষ নির্ধারণ করা হয়েছিল। এখন সব কিছুর দাম বেড়েছে। বর্তমান বাজার অনুযায়ী ঐ টাকা প্রয়োজনের অর্ধেকও না। এসব নিয়েই আমরা মন্ত্রণালয়ের কাছে একটা আবেদন করছি।’

ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়িতে সৃষ্ট দুর্ভোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শুধু ওয়াসা নয় বিটিসিএল, পিডিবি, কর্ণফুলী গ্যাস কর্তৃপক্ষকে আমরা এর মধ্যে জনদুর্ভোগের ব্যাপারে চিঠি দিয়েছি। তাদের কাজের অনিয়মের ফলে ধুলোবালিসহ যেসব সমস্যা দেখা যাচ্ছে সেসব ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছি। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে চলমান সব সংস্কার কাজ শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র। আমাদের যারা ঠিকাদার তাদেরও এই বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’

এআরটি/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!