নগরীতে ব্লু-হোয়েল আতঙ্ক !

নগরীতে ব্লু-হোয়েল আতঙ্ক ! 1প্রতিদিন ডেস্ক : নগরীর বহদ্দারহাট সংলগ্ন ওয়াপদা কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিইসি পরীক্ষার্থী শাহাদাত হোসেন রণি। রবিবার বিকেলে বিদ্যালয়ের পাঠদান শেষে ঘরে ফিরে হাফাঁতে হাঁঁফাতে বলল-মা শুনেছো, ব্লু-হোয়েলে নাকি মরে যাচ্ছে ছাত্র/ছাত্রীরা।

কিন্তু ব্লু-হোয়েল কি জানে না তার মা পারভিন আক্তার। তাই উল্টো প্রশ্ন-ব্লু-হোয়েল কি বাবা। গেম মা গেম। মোবাইল গেম। কি বলিস বাবা, মোবাইল আর ধরিস না। এ কথা বলেই বুকে জড়িয়ে ধরলেন ছেলে রণিকে। সেই সাথে মেয়ে তন্নিকেও কাছে টেনে বলল-তোমরা আর মোবাইলে গেম খেলবানা।

রণি আর তন্নিকে নিয়ে মা-বাবার সংসার। নগরীর চকবাজার থানার কাপাসাগোলায় ভাড়া বাসায় থাকেন তারা। মা পোশাক কারখানার সুপারভাইজার। বাবা আলী হায়দার কুলিং কর্ণার ব্যবসায়ী। দোকান থেকে রবিবার রাতে ফিরে মা-ছেলের মুখে রাজ্যের আতঙ্ক দেখতে পান।

জানতে চাইলেই মা-ছেলের মুখে শুনেন ব্লু-হোয়েল গেমে জীবনহানির কথা। আর তখনই ঘরের মোবাইল পকেটে পুড়েন আলী হায়দার। তাই সোমবার ব্যক্তিগত সকল যোগাযোগ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন বলে জানান মা পারভিন আক্তার।

তাতে কি, এ বিষয়টি নিয়ে আশপাশের ১৫-১৬ জন প্রতিবেশীর সাথে আলাপ করেন তিনি। যাদের কাছেও ব্লু-হোয়েল আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে জানান তিনি।

পারভিন আক্তার বলেন, প্রতিবেশী প্রতিটি পরিবারে শিশু ও মা-বাবাদের মাঝে বিরাজ করছে ব্লু-হোয়েল আতঙ্ক। মা-বাবারা তাদের ছেলে সন্তানদের মোবাইল ছুঁতে পর্যন্ত দিচ্ছে না।

কথা হয় নগরীর মুরাদপুর এলাকার মোহাম্মদপুর আবাসিক এলাকার বাসিন্দা ওয়াহিদুল আলমের সাথে। তিনি বেসরকারি একটি ওষুধ কোম্পানীর হিসাব রক্ষক পদে কাজ করেন। তিনি বলেন, শিশুরা লেখাপড়ার পাশাপাশি মোবাইলে গেম খেলে বেশি।

কিন্তু এখন শুনছি, ব্লু-হোয়েল গেমে মরছে শিশু-কিশোর ও ছাত্র/ছাত্রীরা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা যেখানে এ গেমে আসক্ত, সেখানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা না বুঝে এ গেম খেলতে পারে। তাই শিশুদের মোবাইল ধরতে বারণ করেছি। এমনকি মোবাইল এখন আমার পকেটেই থাকে।

তিনি বলেন, চট্টগ্রামের অফিস-আদালত, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ, হাটে-মাঠে-ঘাটে সবখানে ব্লু-হোয়েল গেম নিয়ে চলছে আলোচনা। যেখানে যায় সেখানে অভিবাবকদের মুখে শুনা যায় এ নিয়ে উৎকন্ঠা।

শুধু অভিবাবক নয়, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন স্কুলসহ খেলার মাঠেও শিশুদের মাঝে এখন বিরাজ করছে ব্লু-হোয়েল আতঙ্ক। নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার সিডিএ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ক্রিকেট খেলার সময় এ নিয়ে কথা বলা শুরুর আগেই ব্লু-হোয়েল গেমের কথা বলতে শুরু করে ১৫-১৬ জন শিশু-কিশোর। এদের প্রত্যেকের বয়স ১২ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে।

এরমধ্যে ওই বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্র সোহান জানান, তার শ্রেণিতে ১১৩ জন ছাত্র/ছাত্রী রয়েছে। প্রত্যেকেই ব্লু-হোয়েল সম্পর্কে জানে। এ খেলায় একজন মডেলের মৃত্যু; চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজ ছাত্র আসক্ত এবং সাদাফ নামে এক কিশোর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির বিষয়ে সব জানেন বলে জানান সোহান।

সোহান বলেন, পাঠদানের সময় শিক্ষকরা তাদেরকে মোবাইলে ব্লু-হোয়েলসহ অনলাইনে কোন গেম না খেলার জন্য বলেছেন। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরাও আতঙ্কে ভুগছে।

নগরীর কাজেম আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসিফ আল ইমরান জানান, ব্লু-হোয়েল গেম নিয়ে তার বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। শিক্ষার্থীরা একে অপরের সাথে এ নিয়ে কথা বলছে।

প্রশ্নের জবাবে তাসিফ বলেন, এ গেম কিভাবে খেলে জানি না। বিদ্যালয়ের কেউ জানে না। কিভাবে খেলে তা নিয়ে একে-অপরের কাছে জানতে চাইলেও মরে যাওয়ার ভয়ে কেউ এ গেম খেলতে রাজী না।

নগরীর অপর্ণাচরণ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী রৌফিয়া খানম বিজলি জানান, ব্লু-হোয়েল গেমে মৃত্যুর কথা জানার পর আমি মোবাইলে আর গেম খেলিনা। মা-বাবা মোবাইলে গেম খেলতে বারণ করে দিয়েছেন। ব্লু-হোয়েলের কারণে আগে যে গেমগুলো খেলতাম এখন সেটাও খেলছে না বলে জানান বিজলি।

নগরীর বাকলিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কৃষ্ণ রঞ্জন দত্ত বলেন, শিশু-কিশোররা এমনিতে গেম প্রিয়। মা-বাবার মোবাইল পেলেই গেম খেলতে শুরু করে। সেদিক থেকে মা-বাবাকে সচেতন থাকতে হবে। শিশু-কিশোররা যাতে গেম খেলতে না পারে।

প্রসঙ্গত, গত ১১ অক্টোবর বুধবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্লু-হোয়েল গেমে আসক্ত এক শিক্ষার্থীকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার পর সংবাদ মাধ্যমে তা চট্টগ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। এ গেমের বিপদজ্জনক ধাপ সম্পর্কে জানার পর চট্টগ্রামজুড়ে শিশু-কিশোর শিক্ষার্থী ও অভিবাবকদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে ব্লু-হোয়েল নিয়ে তেমন মাতামাতি ও আতঙ্ক দেখা যায়নি।

ব্লু-হোয়েল গেম খেলা কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, এ গেমে ৫০ ধাপ পর্যন্ত আছে। ধাপগুলোতে হাত-পা ও পেট কাটার মতো কাজও আছে। প্রতিটি ধাপে অনুভুতি যাচাই করে সঠিক উত্তর পেলে; এমনকি প্রমাণের জন্য ছবি তুলে পাঠালে পরবর্তি ধাপ খেলা যায়। এ গেমের প্রতিটি ধাপই বিপদজ্জনক। এই গেমের শেষ ধাপে আতœহত্যার নির্দেশ দেওয়া হয়।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!