বাকির নাম ফাঁকি/ নগদ ছাড়া ঢাকায় যাবে না চট্টগ্রামের চামড়া

দুই বছরের বকেয়া মেলেনি এখনও

মন ভালো নেই কাঁচা চামড়ার আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের! চোখের সামনে নষ্ট হয়ে গেছে নিজেদের রুটি-রোজগারের একমাত্র অবলম্বন কোরবানির পশুর কোটি কোটি টাকার কাঁচা চামড়া। হাতছাড়া হতে চলেছে বাপ-দাদার পারিবারিক ব্যবসায়। ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে গত দুই কোরবানির কাঁচা চামড়া বিক্রির বকেয়া টাকা মেলেনি। ফলে এ বছর লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চামড়াও কেনা সম্ভব হয়নি।

সবমিলিয়ে চট্টগ্রামের চামড়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। তবে ইতিমধ্যে কেনা চামড়া লবণজাত করে আবারও ঢাকার ট্যানারি মালিকদের দিকে তীর্থের কাকের মতো চেয়ে আছেন তারা। এবার প্রাণ গেলেও আর বাকিতে চামড়া বিক্রি করবেন না আড়তদারেরা—এমনটিই প্রতিজ্ঞা তাদের।

এদিকে কাঁচা চামড়ার ব্যবসায় ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণ করতে সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সৈয়দা নাহিদা হাবিবা গত বুধবার (১৪ আগস্ট) এ সংক্রান্ত একটি অফিস আদেশ জারি করেছেন। এতে বলা হয়েছে, ‘কাঁচা চামড়ার বাজার পর্যালোচনার বিষয়ে ১৮ আগস্ট রোববার বিকাল ৩টায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের সভাপতিত্বে তার অফিসে একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে।’

জানা যায়, চট্টগ্রাম শহরে চট্টগ্রাম পৌর করপোরেশন কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের অধীনে ১১২ জনসহ প্রায় ২৫০ জন আড়তদার আছেন। এ বছর কোরবানিতে তারা ৫ থেকে সাড়ে ৫ লাখ পিস কাঁচা চামড়া ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেন। কিন্তু ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে গত দুই বছরের বকেয়া টাকা না পাওয়ায় চট্টগ্রামের আড়তদারেরা লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কাঁচা চামড়া কিনতে পারেননি। এর ফলে কোরবানির পশুর ১৫-২০ শতাংশ প্রায় এক লাখ চামড়া নষ্ট হয়ে যায়; যা বর্জ্য হিসেবে ডাম্পিং করেছে সিটি করপোরেশন।

নগরীর পাঁচলাইশ থানার আতুরার ডিপো এলাকার মো. ইব্রাহীম নামে এক আড়তার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রতি বছর কোরবানিতে তিন হাজার পিস কাঁচা চামড়া কিনতাম। এবার মাত্র ৩০০ পিস চামড়া কিনেছি। গত বছরের বকেয়া টাকা পাইনি, চামড়া কিনবো কিভাবে? গত বছরের বিক্রি করা চামড়ার দাম বাবদ ঢাকার ট্যানারি মালিকের কাছে আমার পাওনা আছে ৬ লাখ টাকা। কোরবানির দুই দিন আগে মাত্র তিন হাজার টাকা পরিশোধ করেছে। এবার নগদ ছাড়া চামড়া বিক্রি করবো না।’

চট্টগ্রাম পৌর করপোরেশন কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মো. আবদুল কাদের চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘কোরবানির কিছু দিন আগে ঢাকার ট্যানারি মালিকেরা আমাদেরকে ঢাকায় ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন। তারা আমাদেরকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, কোরবানির আগে বকেয়া টাকা পরিশোধ করবেন। কিন্তু শেষ সময়ে এসে তারা বকেয়া টাকা পরিশোধ করেনি।’

আবদুল কাদের বলেন, ‘ঢাকার ট্যানারি মালিকেরা যদি আমাদেরকে বকেয়া টাকা দেবেন না এটা আগে জানাতো, তাহলে আমরা ব্যাংক বা অন্য কারো কাছ থেকে ঋণ বা ধার করে হলেও চামড়া কিনতাম।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘ঢাকার ট্যানারি মালিকদের ৯৭ শতাংশই নোয়াখালীর বাসিন্দা, বিএনপি সমর্থিত। তারা সরকারের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে কেন আমাদের পাওনা পরিশোধ করলো না? বিনা মূলধনে একেকজন ট্যানারি মালিক হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক।’

তিনি বলেন, ‘সরকার কাঁচা চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে কাঁচা চামড়ার ব্যবসায় আলোর মুখ দেখবে। কাঁচা চামড়ার ব্যবসায়ীদের ভাগ্য খুলে যাবে। কাঁচা চামড়া রপ্তানি করতে পারলে সরকার প্রতি বছর তিনটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করার মতো রাজস্ব পাবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটু ভালো করে নজর দিলে এই শিল্প ধ্বংস হবে না।’

জানতে চাইলে বাংলাদেশ কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন মুঠোফোনে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে আমাদের কিছু পার্টি আছে। তারা আমাদেরকে চামড়া দেয়। আমরা বিক্রি করে তাদের টাকা পরিশোধ করি, কমিশনভিত্তিতে। আমাদের কাছ থেকে চট্টগ্রামের চামড়া ব্যবসায়ীরা কোনো টাকা পাবে না। তারা টাকা পাবে ট্যানারি মালিকদের কাছে। সাভার শিল্পনগরীর ৯৫ শতাংশ ট্যানারি মালিক চট্টগ্রাম থেকে বাকিতে চামড়া কেনে। তাদের কাছে বকেয়া আছে। আমরাও ভুক্তভোগী।’

তিনি বিলেন, ‘সরকার কাঁচা চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এর প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে। কোন কোন দেশ কাঁচা চামড়া ক্রয় করবে, তার খোঁজ করতে হবে। দূরবর্তী দেশে চামড়া পাঠাতে হলে ফ্রিজিং কনটেইনার লাগবে। আমাদের লাইসেন্স লাগবে। আগামী রোববার মন্ত্রণালয়ে সভা আছে। সভায় বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

আলী/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!