নওফেল-নাছির সমঝোতায় চট্টগ্রামের ৪৩ ওয়ার্ডে আগের শীর্ষ নেতারাই বহাল

ভরা সভায় নওফেলকে নিয়ে নগর আওয়ামী লীগ নেতার তোপ

চট্টগ্রাম মহানগরীর ১ থেকে ৪৩ পর্যন্ত প্রতিটি ওয়ার্ডে আগের যারা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কিংবা আহ্বায়ক হিসেবে আছেন, সেসব পদে আর পরিবর্তন আনা হল না। আগের পদধারীরাই বহাল থাকবেন, যদি না তাদের কেউ শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকেন।

শুক্রবার (১ অক্টোবর) চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সভায় নগরের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির এমন সিদ্ধান্ত জানানোর পরপরই সভায় উপস্থিত নেতাদের অনেকে সরাসরি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কেউ কেউ এজন্য শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেলের সমালোচনাও করেন।

মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির ওই সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, দুর্গাপূজা ও ঈদ-এ-মিল্লাদুন্নবীর পর ১১ অক্টোবর থেকে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের আওতাধীন ওয়ার্ড পর্যায়ে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। অন্যদিকে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে থানা এবং ওয়ার্ড পর্যায়ের সম্মেলন সম্পন্ন করা হবে। এতে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ এবং সাংগঠনিক সম্পাদক জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন।

শুক্রবারের সভায় আ জ ম নাছির উদ্দীন নগরীর ১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড পর্যন্ত প্রতিটি ওয়ার্ড নিয়ে সাংগঠনিক সিদ্ধান্তগুলো পড়ে শোনান।

এ সময় তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ভাইয়ের অফিসে আমার সাথে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বৈঠক হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে নগরীর ১ থেকে ৪৩ পর্যন্ত প্রতিটি ওয়ার্ডে আগের যারা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক আছেন এবং যেসব ওয়ার্ডে আহ্বায়ক আছেন (যারা শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন) তারা বহাল থাকবেন। এই ব্যাপারে আমরা দুইজন একমত হয়েছি। এটা কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত, বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও অবগত আছেন।’

আ জ ম নাছিরের এই বক্তব্যের সময়ই মহানগর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক দিদারুল আলম দাঁড়িয়ে এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান। দিদারুল বলেন, ‘এটা কোন্ ধরনের সিদ্ধান্ত হল? একটা লোক এক ওয়ার্ডে ২০ বছর ধরে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন। তাকে যদি আবার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল রাখা হয়, তাহলে সে আরও ২০ বছর থাকবে। তাহলে নতুন নেতৃত্ব কিভাবে সৃষ্টি হবে?’

এ সময় আ জ ম নাছির উদ্দীন তাকে থামিয়ে দিলেও দুজনের মধ্যে তর্কাতর্কি চলতে থাকে। এর একপর্যায়ে দিদারুল আলম সভা ছেড়ে বের হয়ে যান।

পরে কার্যনির্বাহী কমিটির সভা শেষ হওয়ার পর মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য হাজী বেলাল আহমদ দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আমার কিছু কথা ছিল।’

এ সময় নগরীর ওয়ার্ড সম্মেলনের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ‘কে নওফেল! কোথাকার নওফেল! সে ছাত্রলীগ করে নাই, যুবলীগ করে নাই। মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে হিসেবে সে চলে এসেছে—মন্ত্রী হয়েছে।’

এ সময়ও নওফেল অনুসারী কয়েকজন নেতা হাজী বেলাল আহমদকে থামানোর চেষ্টা করেন। এদের মধ্যে ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান, আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান চৌধুরী, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল আহাদ। তাদের কেউ কেউ এ সময় দাঁড়িয়ে হাজী বেলালের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান। এরপর আ জ ম নাছির উদ্দীনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে হাজী বেলাল আহমদ তার বক্তব্য বন্ধ করে বসে যান।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নঈম উদ্দীন চৌধুরী, সুনীল কুমার সরকার, অ্যাড ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, খোরশেদ আলম সুজন, এম. জহিরুল আলম দোভাষ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম, কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, শফিক আদনান, চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য শফিকুল ইসলাম ফারুক, হাসান মাহমুদ শমসের, অ্যাডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, চন্দন ধর, মশিউর রহমান চৌধুরী, হাজী মোহাম্মদ হোসেন, আহমেদুর রহমান সিদ্দিকী, দিদারুল আলম চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মানস রক্ষিত, আব্দুল আহাদ, আবু তাহের, কার্যনির্বাহী সদস্য নুরুল আবছার মিয়া, সৈয়দ আমিনুল হক, গাজী শফিউল আজিম, অ্যাডভোকেট কামাল উদ্দীন আহমেদ, কামরুল হাসান বুলু, সাইফুদ্দীন খালেদ বাহার, জাফর আলম চৌধুরী, মহব্বত আলী খান, হাজী মো. ইলিয়াছ, নেছার আহমেদ মঞ্জু, মো. জাবেদ, হাজী বেলাল আহমদ প্রমুখ।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!