ধেয়ে আসছে সুপার সাইক্লোন ফণী, বন্দরে সংকেত এবার চার, চট্টগ্রামে সব ছুটি বাতিল

পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ আরও সামান্য উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ। আজ বুধবার (০১ মে) দুপুর পর্যন্ত ‘ফণী’ সুপার সাইক্লোনের একধাপ আগের স্তরের ঝড়ে পরিণত হয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড়টি ধারণার চেয়ে কিছুটা ধীরগতিতে শক্তি সঞ্চয় করে করে এগোচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৪ (চার) নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

এবার চার নম্বর

মঙ্গলবার দুপুরে ‘ফণী’ অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার পর প্রথমে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত জারি করা হয়েছিল। এরপর ঝড়টি আজ আরও কিছুটা অগ্রসর হওয়ায় ২ নম্বর সংকেত নামিয়ে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত জারি করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি খুব শ্লথগতিতে এগোচ্ছে এবং শক্তি সঞ্চয় করছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।

ছুটি বাতিল চট্টগ্রামে

এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র সম্ভাব্য আঘাত মোকাবেলায় চট্টগ্রাম জেলার সব সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। জরুরি করণীয় নির্ধারণে বুধবার সন্ধ্যায় সার্কিট হাউজে বৈঠক আহ্বান করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।

এই দুপুরের পর যেখানে আছে ‘ফণী’

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ঘূর্ণিঝড়টি বুধবার (০১ মে) দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার থেকে ১ হাজার ১৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।

ওড়িশা উপকূলই লক্ষ্য, তবে দিক বদলও হতে পারে

নানা জল্পনাকল্পনাকে পাশ কাটিয়ে ভারতের ওড়িশা উপকূলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে ধারণা করছেন আবহাওয়াবিদরা। তারা বলছেন, শক্তি বেড়ে এখন ঘন্টায় ১৭০ কিলোমিটার গতিতে সেদিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত ফণী পুরির দক্ষিণে গোপালপুর ও চাঁদবালির মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে শুক্রবার বিকেলের দিকে। আবহাওয়াবিদরা ধারণা করছেন, তখন এর শক্তি আরও বেড়ে ঘণ্টায় বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ১৭৫ থেকে ১৮৫ কিলোমিটার পর্যন্ত।

ইতিমধ্যে ওড়িশা উপকূলের দিকে এগিয়ে যাওয়ায় রাজ্যটিতে ‘ইয়েলো’ সতর্কতা জারি করেছে ভারতের আবহাওয়া বিভাগ। বুধবার এক ঘোষণায় ওড়িশা সরকার বৃহস্পতিবার রাজ্যের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে, রাজ্যের ১১টি উপকূলীয় জেলা থেকে জারি থাকা নির্বাচনী বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে নিয়েছে দেশটির নির্বাচন কমিশন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে রাজ্যের পর্যটন শহর পুরি ত্যাগের জন্য পর্যটকদের পরামর্শ দিয়েছে ওড়িশার কর্তৃপক্ষ। এছাড়া অন্ধ্র প্রদেশ, পশ্চিম বঙ্গ ও তামিলনাডুর উপকূলীয় এলাকাগুলোতেও উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

গতিপথ বদলেও যেতে পারে

আবহাওয়াবিদরা মনে করছেন, যে কোনো মুহূর্তে ঘূর্ণিঝড় ফণী তার গতিপথ বদল করতে পারে। সেক্ষেত্রে বদলে যাবে উপকূল অতিক্রম করার সময় ও স্থান। উপকূল অতিক্রম করার সময় বাংলাদেশসহ ভারতের বিভিন্ন স্থানের বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রবল বৃষ্টি ঝরাবে।

সুপার সাইক্লোনের একধাপ আগে

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, বাতাসের তীব্রতা এবং ধ্বংসক্ষমতা অনুযায়ী বাংলাদেশ ও ভারতে ঘূর্ণিঝড়কে চারটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সৃষ্ট বাতাসের গতিবেগ যদি ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার হয়, তাকে ঘূর্ণিঝড় বা ট্রপিক্যাল সাইক্লোন বলা হয়। গতিবেগ যদি ৮৯-১১৭ কিলোমিটার হয়, তখন তাকে তীব্র ঘূর্ণিঝড় বা ‘সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ বলা হয়। আর বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১৮ থেকে ২১৯ কিলোমিটার হয়, তখন সেটিকে হ্যারিকেন গতিসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড় বা ‘ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ বলা হয়। গতিবেগ ২২০ কিলোমিটার বা তার বেশি হলে তাকে ‘সুপার সাইক্লোন’ বলা হয়। ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া আকারে ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বুধবার (০১ মে) দুপুর পর্যন্ত ‘ফণী’ সুপার সাইক্লোনের একধাপ আগের স্তরের ঝড়ে পরিণত হয়েছে।

এডি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!