‘ধর ধর, খুনি ধর’— ওসি প্রদীপকে দেখে আইনজীবীদের শোরগোল

সোমবার দুপুর ১টা ১৬ মিনিটে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালতের এজলাসে হাজির করা হয় টেকনাফ থানা থেকে বরখাস্ত হওয়া প্রদীপ কুমার দাশকে। ১টা ২৩ মিনিটে তাকে এজলাস থেকে কারাগারের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়। এই সাত মিনিট সময়ের জন্য আদালত পাড়ায় চট্টগ্রাম নগর পুলিশ (সিএমপি) যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে তা ছিল নজীরবিহীন।

মাত্র দেড়মাস আগেও যে প্রদীপ ক্ষমতার জোরে সবাইকে তটস্থ রাখতেন সে প্রদীপের হাতে ছিল হাতকড়া। প্রায় ছয়ফুট উচ্চতার প্রদীপ হেলমেট পরেও মাথা নিচু করে সাড়ে সহকর্মী পুলিশ সদস্যদের ভিড়ে মুখ লুকিয়ে ছিলেন। মুখ লুকিয়ে আদালত ভবনের সামনে থেকে এজলাসে প্রবেশ করার সময় তাকে দেখতে ভিড় করে উৎসুক আইনজীবী ও আদালতে আসা লোকজন।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আদালত পর্যন্ত সকাল থেকেই পুলিশের অবস্থানে ছিল কড়াকড়ি। আদালতের প্রবেশমুখ, জেলা পরিষদ মার্কেট, জহুর হকার্স মার্কেট, সোনালী ব্যাংকের সামনে বিপুল পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি পুরো আদালত ভবনে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে পুলিশ।

কড়া নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশের কেউ মুখ না খুললেও প্রদীপের বিষয়ে চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবীদের ক্ষোভের কথা জানান একাধিক আইনজীবী। প্রদীপ সিএমপির পাঁচলাইশ থানায় ওসি থাকার সময় এক আইনজীবীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় জন্ম নেওয়া ক্ষোভও দেখা দেয় এসময় আইনজীবীদের মধ্যে।

প্রদীপকে প্রিজনভ্যান থেকে নামিয়ে এজলাস এবং এজলাস থেকে প্রিজনভ্যানে উঠানো পর্যন্ত দুই পাশে ছিল পুলিশী নিরাপত্তা বলয়। দুপুর ১টা থেকে ১টা ৩০ মিনিট পুলিশের সারিবদ্ধ লাইনে কেউ প্রবেশ করতে পারেনি। প্রদীপকে এজলাস থেকে আদালতের দ্বিতীয় তলার সিঁড়িতে পৌঁছাতেই আইনজীবীদের একটা অংশ ‘ধর ধর, খুনি ধর’ বলে শোরগোল করে উঠে।

এর আগে গত ২৩ আগস্ট সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ হত্যা মামলায় আটক ও বরখাস্ত হওয়া টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এবং তার স্ত্রী চুমকি কারণ এর বিরুদ্ধে প্রায় চার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর মধ্যে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকা ওসি প্রদীপ ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করেছেন বলে দুদক অভিযোগ এনেছে। আরও ১৩ লাখ ১৩ হাজার ১৭৫ টাকার সম্পদের তথ্য বিবরণীতে গোপন করার অভিযোগও আনা হয়েছে চুমকির বিরুদ্ধে।

প্রদীপ ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ অর্জন করে স্ত্রীর নামে হস্তান্তর ও স্থানান্তর করেছেন বলেও দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদন এবং এজাহারে বলা হয়েছে। দুদকের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-২ এর সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন।

ঘটনাস্থল বিবেচনায় মামলাটি করা হয়েছে দুদকের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-১ এ। মামলা নম্বর ১১। এই মামলায় সোমবার দুপুরে প্রদীপ কুমার দাশকে চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হয়।

উল্লেখ্য, প্রদীপ কুমার দাশ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী ইউনিয়নের উত্তর সারোয়াতলী গ্রামের মৃত হরেন্দ্র লাল দাশের ছেলে। চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানার পাথরঘাটা আর সি চার্চ রোডে তাদের নিজস্ব একটি আবাসিক ভবন আছে। সেই ভবনে তার স্ত্রী চুমকি কারণ সন্তানদের নিয়ে বসবাস করতেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!